Site icon Dance Gurukul [ নৃত্য গুরুকুল ] GOLN

সর্পিল গোল নাচ

সর্পিল গোল নাচ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – সর্পিল গোল নাচ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।

সর্পিল গোল নাচ

 

 

পরবর্তীকালের গ্রীসের পুরাকাহিনীর গোলক ধাঁধাঁ বিভিন্ন সূত্র থেকে নিয়ে একত্রিত করা হয়েছেঃ ক্রীটের উপহারস্বরূপএথেন্সের বালক বালিকা (যুবক যুবতী) থিসিউসের নেতৃত্ব পাঠান হয়, ক্রীট রাজকন্যা অ্যারিয়াডনির সহায়তায় গোলক ধাঁধার সুরঙ্গ পথে কনোসসে মিনোটরকে থিসিউস হত্যা করে সুতার সাহায্যে বের হয়ে এসে তার দায়িত্বে নিয়োজিতদলবল সহ এথেন্সে পালায়ে আসে।

সত্যিকারভাবে এই গোলক ধাঁধাঁর কোন অস্তিত্ব ছিল কিনা তা সন্দেহজনক; লেমন্স এর টা বিলীন হয়ে গেছে এবং মিশরীয় গোলক ধাঁধাঁ হাউওয়ারার নিকট রাজা আনেমমেনস (তৃতীয়) খৃষ্টপূর্ব উনবিংশ শতাব্দীতে তৈরী করেন এবং হেরডটাসও ষ্ট্রবো যা সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন, সত্যি বলতে তা বিশালতার দিক্ থেকে আশ্চর্যজনক ব্যাপার এবং এর তিন হাজার ঘরের মধ্যে কোন আগন্তুক প্রবেশ করলে পথ প্রদর্শক ছাড়া বের হয়ে আসতে পারে না কিন্তু আমাদের কাছে কোন দলিল নাই যে, কোনলোক কোনকারণে এর মধ্যে থেকে হারায়ে গেছে।

এমনকি মূর্তিপূজার প্রাচীন ধংসাবশেষের গোলক ধাঁধাঁর মেঝের নকশায় এক কেন্দ্রীক লাইনের প্রতিফলনে দেখা যায় যেমন sgraffiti অথবা মেঝের মোজাইক। এই প্রথা অনেক খ্ৰীষ্টিয়ান গীর্জায় গ্রহণ করা হয়েছে ঃ যারা জেরুজালেম ভ্রমণে অসমর্থ ছিল সময় সময় তাদের হাঁটুতে বা পায়ের পাতার উপর ভর করে এবং কেমন করে মানুষ পাপ ও ভুলের ফাঁদে জড়ায়ে পরে নিজেদের পথের অভিজ্ঞতা খোঁজে তারা সম্ভবতঃ এখানে তীর্থযাত্রী হত। শোনা যায় ক্যাথাড্রিল সেনস এবং আমিনসের গোলক ধাঁধাঁয় হাজার ঘর ছিল।

শুধুমাত্র এর অল্পকিছু মোজাইক সংরক্ষিত আছে। জার্মানীতে কোন কিছু মোটেও নাই ঃ লুককা এবং পাভিয়ার সান মাইকেল ক্যাথাড্রিলে একটা করে আছে; ফ্রান্সে অনেকগুলি আছে, সবচেয়ে পরিচিত চার্টাস ক্যাথাড্রিলে মধ্যে যেটা আছে দরবারের জন্য আনন্দ উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে! আবার গোলক ধাঁধাঁ দেখা যায় ইটালী, ফ্রান্স এবং ইংলিশ পার্কে।গোলক ধাঁধাঁ খ্ৰীষ্টিয়ান অগ্রযাত্রা গঠনে এরই মধ্যে অনগ্রসর কাঠামো থেকে একটা আন্দোলনে রূপ নেয়।

থিসিউসের পৌরাণিক কাহিনী এটার পূর্বের যোগসূত্রের উল্লেখ করে ঃ তাদর মুক্তির পর (?) এথেনিয়ানগণ আইসেল অব ডেলস নামে এবং অনেক রকম মোচড়ে ঘুরে গোল নাচ করে, ক্রীট দ্বীপের দূর্ভাগ্যসূচক পথের নির্মাণ অনুকরণের প্রতীকরূপে এবং পরবর্তীকালের প্লুটার্চ এর সময় পর্যন্ত ঐ দ্বীপের বাসিন্দাগণ এখনও সেই নাচ করে থাকে।

ভ্যান ডেন লিউংগ সঠিক ভাবে নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে, গোলক ধাঁধার মধ্যে চলার অঙ্গভঙ্গি গোলক ধাঁধার চেয়ে পুরান। আমি এই বক্তব্যের স্বপক্ষে পরবর্তীগোলক-ধাঁধাঁর অস্তিত্বই স্থান পরিবর্তন। দালানের নিজস্ব কোন অর্থ নাই, এর ভিতর দিয়ে লোকজন চলাফেরা করলে এর কোন অর্থ হয় না।

এটা সাপের অঙ্গভঙ্গি পূর্বেই ধারণা করে থাকে কিন্তু সাপের অঙ্গভঙ্গি দালানের পূর্ব-ধারণা করে না। অঙ্গভঙ্গি দালান ছাড়া অস্তিত্ব রাখতে পারে এবং সত্যিকারের যেটা পারে যেখানে গোলক ধাঁধাঁ সম্বন্ধে কেউই কিছুই জানে না। আদিম লোকদের মধ্যে এবং ইউরোপীয়ান লোক-নাচে গোলক প্রায়ই কুন্ডলীরূপে উন্নতি লাভ করে এবং কতগুলি বিশেষ উদাহরণ দেয়া যায় সেখানে সর্পিল লাইনে আছে।

নিয়াসা থেকে সবচেয়ে দর্শনীয় বিবরণ পাওয়া যায়, যেখানে কম করে হলেও চারশত পুরুষ ও বালক অপরকে ধরে সাপের অঙ্গভঙ্গিতে দ্রুত থেকে দ্রুততর নাচে, যতক্ষণ না শেষ prestissimo তার নিঃশ্বাসবদ্ধ করে মাটিতে পরে যায়। এই সকল নাচ আমাদের সারিবদ্ধ সংঘবদ্ধ-নাচ farandoules and polonaises এ জীবিত আছে।

এখানে একজন খুব আদিম নাচের সঙ্গে সরল রেখার অঙ্গভঙ্গি নিতে চান তা ছাড়া নাচের দল প্রায়ই এঁকেবেঁকে চলে । ম্যালোরকার বৃষ্টি আবাহনে, Ball de laxisterna ঝর্ণা থেকে মেয়ে এঁকোঁকে পিছনে লাফায়। যেটা সম্বন্ধে নিচে আমাদের বলার আছে যে মাদাগাস্কারের মেরিনাদের সুন্নত শোভাযাত্রায়, পূর্বে থেকে উৎসবের জন্য আকাবাঁকা লাইন দাগান থাকত যা শোভাযাত্রায় অনুসরণ করা হত।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এই সকল নাচের তাৎপর্য সম্বন্ধে আমাদের কোন তথ্য নাই সুতরাং আমাদের উপসংহারের উপর তা নির্ভরশীল হয়ে আছে। এই নাচগুলিতে প্রথমে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক উৎসমুখ। না হয় বিষয়-বস্তু না হয় এমনকি আনুষ্ঠানিকতা বা উপলক্ষ্য, প্রাচীন আঁকাবাঁকা এবং সর্পিল নাচ হয়ে উঠে নিমগ্ন পৃথিবীতে মৃত্যুঞ্জয় অথবা পাপাবৃষ্ট জীবন।

প্রকৃতির স্বাভাবিক উৎসে ছড়ায়ে আছে গতির বা ঘুরার সহজাত তীব্র তাড়না অথবা অনুকরণাত্মক স্পৃহা উভয়েরই প্রমাণ পাওয়া যায় । শিশু ও কুকুর হর্ষোল্লাসে ঘুরাফেরা করে আবেগের উদ্দেশ্যে পথ করে দেয় আবেগ প্রবণতায় সম্ভবতঃ সামনে পিছ-লাফ দেয় সোজা লাইনের চেয়ে আঁকাবাঁকা পথে। উপলক্ষ্যহীন দেহভঙ্গি নির্দিষ্ট পথের লক্ষ্য এড়ায়ে যায়। নাচের একটা অংশের এটা একটা ব্যাখ্যা। অন্যটা হবে সংবেদজ অনুকরণ।

শাহগানsahagun পুরান ম্যাক্সিকান নাচের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঃ “তারা লাফ দেয় না বা কোন নড়াচড়া করে না, তারা 00 তাদের হাত সামনে পিছনে নেয় না, তারা হাতদিয়ে নাচের কোন অঙ্গভঙ্গি করে না, তারা শরীর বেন্ড করে না, তারা কোন দিকে চক্কর খায় না, তারা নির্দিষ্ট কোন দিকে যায় না, তারা পিছনের দিকে হাঁটে না – তারা হাঁটে, শান্তভাবে নাচে, খুব আস্তে, সুপরিকল্পিতভাবে; তাদের নাচ একটা একক বড় সাপ যেন।

কেউ কোন নড়াচড়া করে না অথবা বিরক্ত করে না অথবা সন্দেহ করে না। তারা নারীদের শরীর দিয়ে জড়ায়ে রাখে শুধুমাত্র গোষ্ঠি প্রধান ও বড় ভাইগণ নারীদের শরীর দিয়ে জড়ায়ে রাখতে অনুমতি পায় না। যখন সূর্য অল্প থাকে তখন তাদের নাচ শেষ হয় প্রায় সূর্য ডুবুডুবু সময়ে । তখন তারা লাইন ভেঙ্গে হেঁটে চলে যায় । প্রত্যেক বাড়ীতে গান হয় সবস্থানে তারা তাদের দেবতাদের গান গায় (“দুইবেত” অথবা “সাত সাপ”) শস্যদেবী অথবা বাতাসের দেবতার উদ্দেশ্যে।

সেখানে এই নাচ সম্বন্ধে দুই উল্লেখযোগ্য ঘটনা আছে : প্রথমটা : একটা নির্দিষ্ট উপলক্ষ্যকে লক্ষ্য করে এই নাচের বিষয়বস্তু আকৃতি পায়না কিন্তু তারচেয়ে ক্রমাগত একটা বয়ে যাওয়া ব্যাপার এবং তারপর শস্যদেবীর সম্মানে অন্য দিনগুলিতে যে নাচ নাচা হয় তার নাম “সাত সাপ” এইরূপে এই নাচ অভ্রান্তভাবে সাপের অঙ্গভঙ্গির একটা অনুকৃতি।

হিন্দুস্তানের গন্ডদের সর্পিল অঙ্গভঙ্গির মধ্যে শিয়াল অবাক বিস্ময়ে ক্রলিং করে বিরাট বিচ্ছুকে দেখে এবং সেইমত রসেনবার্গ এর ধারণা শত শত নিয়াসা আদিবাসী “সাপের অঙ্গভঙ্গি উপস্থাপন করে” । পরেরটাকে মডিগলিয়ানী বলেন যে, কোনটার দেহভঙ্গিকে অনুকৃত করবে এটা তাদের ইচ্ছা । সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে যে জীবজন্তুর নাচের মধ্যে সর্পিল নাচের একটা মূল উৎস নিহিত আছে।

গোলক-ধাঁধাঁর মূল শিল্পউপাদান নিজেই মনে হয় প্রথম দিক্-নির্দেশনা দেয়! উত্তর-পূর্ব চ্যাকোদের অতিভৌতিক অপশক্তির নাচে, যখন নাচুয়েগণ জঙ্গলের মাঝখানে পরিস্কার ভাবে গোল তৈরী করে (নাচের জন্য) সেখানে যাবার জন্য চিনতে কষ্ট হয় এমন সরু পথ রাখে এমনভাবে এঁকেবেঁকে ঘুরান পথে যে, যেকোন নতুন অবাঞ্চিত আগুন্তুক সহজেই পথ হারায়ে ফেলে ।

এখানে নাচের উৎসরের মধ্যেই রহস্য ও সূচনার মূল শিল্প উপাদানের প্রচ্ছন্ন গোলক-ধাঁধার অন্য একটা মূল উৎস বিদ্যমান। কিন্তু এটা এমনকি আরো প্রচ্ছন্ন মাদাগাস্কারের মেরিনাদের সুন্নত দেয়া নাচের অনুষ্ঠানে। সুন্নতে পবিত্র পাথরের দিকের পথ তন্তু দিয়ে পাঁচটা ভাগে ভাগ করা হয় : মধ্যে তন্তুদিয়ে রাজা সোজা লাইনে হেঁটে যায়, অন্য চারটা তন্তু দুমড়ানো আঁকাবাঁকা সাজে সাজান তাতে জনসাধারণ হেঁটে যায়।

রাজাকে অবশ্যই দৈবসত্তার অধিকারী বলে ধরা হয় সুতরাং তার পথ সম্মুখে সোজা সূচনার পবিত্রস্থানের দিকে, অন্যেরা অবশ্যই প্যাচানো পথে নাচবে যেটা আঁকাবাঁকা পথ সাজাতে সাজাতে প্রায় গোলাকার হয়ে উঠে। দক্ষিণ-অস্ট্রেলিয়ার কুরনাইদের সর্পিল নাচও সূচনা উৎসবের নাচ ।

মাদাগাস্কারের সুন্নত থেকে এটা সম্ভবতঃ বেশী দূরের চিৎকার না অন্য একটা সূচনা নাচে পৌঁছাতে পারে  ইলুসিসের পবিত্র রহস্যের অন্তর্গত একাকী অন্ধকারে উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণ নিশ্চিন্তভাবে, যার কোন বহির্দ্বার নাই এমন গোলক ধাঁধাঁর পথ ।

ইন্দো-চীনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রথায় দ্বিতীয় সংযোগের সূত্র পাওয়ার যায় । আরাকানে পবিত্র “বাণ” (BANA) বিশ্বাসের সঙ্গে পাঠ করা হয় যখন তরা কৃত্রিম গোলক ধাঁধাঁর মধ্য দিয়ে নাচে; প্রতি ঘুরায় তারা ইয়াকশাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তাকে তাড়ায়ে দেয়;

তারপর অবশেষে তারা এক অলৌকিক জগতে (এলাকা) পৌঁছে। পরিট্রা পাঠের সময় যেটা ইয়াকশার বিরুদ্ধে নির্দেশ দেয় (শ্রীলংকাবাসী) সিংহলীগণ একটা সূতা খুলে থাকে। পাপী জীবনের শুদ্ধির এইরূপ প্রয়োজন থেকে এটা বেশী দূরে না।

সমগ্র পৃথিবীর পুরাণ ও গল্পে সাপের অসংখ্য পরোক্ষ উল্লেখের পরিপ্রেক্ষিতে এটা চিহ্নিতকরা খুব কষ্টকর না যে, ধাপে ধাপে সাপের নাচ কেমন করে রূপকে পরিনত হয়ে পরে, কেমন করে আদিম সমাজের জীবজন্তুর নাচ অন্য তাৎপর্য নিয়ে উচ্চস্তরের কৃষ্টিতে নাচের মধ্যে এসে গেছে। কিন্তু এই সংবেদনশীল কাজটি অবশ্যই অভিজ্ঞ পুরাণ বিশেষজ্ঞদের জন্য রাখা উচিত ।

 

 

এই বই লেখার কালে লন্ডনের ফোকলোর সোসাইটিতে জনাব জন লেয়ার্ড একটা অতীত আকর্ষণীয় লিখিত ভাষণ পাঠ করেন তাতে দেখান যে, মেগালিথিক কৃষ্টিতে গোলক ধাঁধা ও হতবুদ্ধি সম্পন্ন জটিল নাচ মৃতের যাত্রাপথের প্রতিনিধিত্ব করে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version