মূল্ভাব ও ধরন এর উর্বরা নাচ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – মূল্ভাব ও ধরন এর উর্বরা নাচ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।

মূল্ভাব ও ধরন এর উর্বরা নাচ

 

মূল্ভাব ও ধরন এর উর্বরা নাচ

 

বিলুপ্ত তাসমানিয়ান যাদেরকে পূর্ববর্তী মৌলিক কৃষ্টির মধ্যে গণনা করা হয়, তাদের মধ্যে বজ্রপাতের সুস্পষ্ট ধরনের যাদুমন্ত্র ছিল নিজেদেরকে নিচে ফেলে স্বশরীরে ঘুরতে থাকে এবং হাত ও পা দিয়ে মাটিতে সজোরে আঘাত করতে থাকে। এইভাবে বিদ্যুৎ এবং বজ্রকে তাদের নিজেদের শরীর দিয়ে অনুকরণ করে এবং সাদৃশ্য দিয়ে বাস্তবে ঘটাতে চায় এবং একই সময় উৎফল্লজনক উত্তেজনায় বিদ্যুৎ সঞ্চারিত হয়ে পৃথিবীতে আসে এবং এটাকে বশীভূত করে।

আদিম মানুষের কাছে মাটিতে পদঘাত ভূতাবেশের জন্য–কলোম্বিয়ার ‘ইউটোটোদের সৃষ্টির পুরাণ কাহিনী “বাপ” “মাটিতে” ভূতাবেশে থাকে,মূল্ভাব ও ধরন তার উপর বারবার পদঘাত করতে থাকে’। যখন ভূতাবেশের ধারণা অধঃপতিত হয়ে পরে সজোরে পদঘাত করা তখন ভূত তাড়ানোর মন্ত্র হয়ে পরে। হিন্দুস্তানের কোল নারীগণ তাদের নাচে মাটিতে নুয়ে হাত দিয়ে মাটিতে আঘত করতে থাকে ।

পুরান তাসমানিয়ানদের বজ্রঝড়-নাচ আজও কতক ভাবে জার্মানীর সাইবেনসপ্রাঙ্গে জীবিত আছে। দুই পা, দুই হাঁটু, দুই কনুই এবং কপাল দিয়ে সাতবার মাটিতে আঘাত করা হয়। হেলিগোল্যান্ডের ভাষ্য অনুযায়ী নাচুয়েদের বড় ঘের প্রতি চার বিট (মাত্র) পর পর দিক্ পরিবর্তন করে।

আট বিট পর দুইবার বিরতি প্রক্ষেপণ করা হয়, সর্ব প্রথমের আট বিট পর শুধুমাত্র একবার আনা হয় এবং নাচুয়ে একপায়ে আঘাত করে, তারপর প্রতি আটবিট পর পর ক্রমান্বয়ে এটা দুইবার এবংনাচুয়ে এক পায়ে একবার আঘাত করে পরে অন্য পায়ে অন্যবার এইভাবে চলতে থাকে। তারা গানের সঙ্গে সঙ্গত বাজনা সন্নিবেশ করে গায়, (সেটা একবার, সেটা দুইবার, সেটা সাত বার)।

দুইজন বিশিষ্ট পন্ডিত ‘সাইবেনসপ্রাঙ্গ’ কে নতুন আবিস্কার বলে শ্রদ্ধা করনে যা ১৭৩২ খৃষ্টাব্দের পূর্বের না এবং এর মধ্যে পুরান ফ্যাশনের অভিজাত ব্যক্তির কৌতুককর অভিবাদন আছে বলে প্রতিয়মান হয়। যুক্তিবাদ সব সময় বিশ্বাসযোগ্য মন্ত্রণাদাতা হতে পারে না।মূল্ভাব ও ধরন তারা অভিবাদন জানায় ভাল এবং ভাল কথা।

কিন্তু যে জার্মান অভিজাত ব্যক্তি তার সহধর্মিণীর সামনে সজোরে মাটিতে পদাঘাত করে তার অর্থ কি? এবং এই জাকজমকপূর্ণ মূল-শিল্প উপাদানের কৌতুকপূর্ণ প্রথা মনে করা হয় না যে তা নির্বাচিত করা হয়েছে যেমন ধীরগতি যুগল-নাচের গঠনশৈলীতে তা স্বীকার করতে হয়েছে, যদিও যুগল- নাচ লোক-নাচ থেকে প্রায় প্রচুর পরিমানে গ্রহণ করেছে কিন্তু তা কি প্রাচীন গোলকের অধিক?

এটাকে কি সশ্রদ্ধ সাত সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত মনে করা হয় যা ধর্মীয় ভক্তির সংখ্যা ? এটাকে কি মনে করা হয় বিশাল ভূখন্ডের উপর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, দুইশত বৎসর নির্যাতিত হয়েছে এবং উর্বরতা যুগের নাচ নির্ধারণে উদ্বেগের কারণ হয়েছে? যে নাচ পামিরদের ফসল কাটা নাচে হয় সেটা প্রস্তর যুগের খুবই বৈশিষ্ট্যময় নাচ শুধুমাত্র পুরুষেরা নাচে-এইরূপ নাচকে কি মনে করা হয় পুরুষদের চরিত্র ব্যঙ্গ করছে বিপরীত লিঙ্গের সামনে?

মধ্য-অস্ট্রেলিয়ার টেটেমবিশ্বাসী অরুন্টাগণ বাতাসকে নাচে অনুকরণ করতে গিয়ে রাবার গাছের ডাল ছন্দে উড়ায়ে থাকে । অন্যদিকে উন্নত নাচের সাংস্কৃতি একই সময় বাতাসের প্রতিক্রিয়া প্রতিনিধিত্ব করে এবং এই মৌলিকভাবে নিয়ন্ত্রীত শিল্পের মূল-উপাদান প্রসারিত ও সুগভীর করে।

দক্ষিণ-মিশরের (১৯০০ খৃঃ পূঃ) বেনী হাসানে দ্বাদশ রাজবংশের মধ্য-রাজ্যে প্রাচীর চিত্রে তিন নারী নাচুয়ের মূখ-অভিনয়ের হায়ারোগ্লিফিক্স (চিত্রাক্ষরে) এ উৎকীর্ণ (দি উইন্ড) “বায়ু”। একজন খাড়াভাবে অবস্থিত মনে হয় তার ছড়ান বাহুদ্বয় গাছের উপর দিয়ে আছে দ্বিতীয় জন বেন্ড হয়ে তার বাহুর নিচে তালুর মত থাকে, তৃতীয়জন নমনীয় নল খাগড়ার মত বেঁকে ‘ব্রীজ’ তৈরী করে একটা আবহাওয়ার যাদুমন্ত্র অ-ঐন্দ্রজালিক আর্টের ফর্মে যা অবশ্যই কোন এক সময়ে খাঁটি ফরমে অগ্রবর্তী হয়েছে।

অবাক হতে হয় প্রায় চার হাজার বৎসর পর ১৮৪৯-৫০ খৃষ্টাব্দে এক শীতকালে যখন গুছটাভ ফ্লেবারট মিশর ভ্রমণকালে তিনি লুইস বাউলহেটকে এইভাবে লেখেন যে, নাচুয়ে নারীরূপ বিকৃত করে “কখন কখন তারা পিঠের উপর নিজেদের মাটিতে নিক্ষেপ করে যেন একজন নারী মাটিতে শায়িত এবং কোমরের এক ভঙ্গিমায় আবার উঠে একদম গাছের মত সোজা যখন বাতাস বয়ে যায় তার উপর”।

প্রকৃতির সুফলপ্রদ শক্তি আবাহনে, ঝড়, বাতাস এবং বৃষ্টি মোহকারী নাচুয়ে সবাইকে অতি মানবিক পর্যায়ে রাখে। এটা তুলনামূলকভাবে খুব কম যে, সে খাদ্য সংগ্রহে এবং বীজ রোপণে তার স্বীয় দক্ষতা প্রতিফলিত করতে পারে। ক্যালিফোর্ণিয়ার মাইডু নিশ্চিন্তে ওক গাছের ফল সংগ্রহ করতে নাচে, টরেস দ্বীপের লোকেরা কাঁকড়া আনতে, প্রাচীন ম্যাক্সিকান মাছ ধরতে এবং শেকড় সংগ্রহের প্রতিনিধিত্ব করে এবং নিউগিনির কাইগণ ফলের আবাদ করতে করতে নাচে । কিন্তু এইগুলি সম্পূর্ণভাবে ব্যতিক্রম ঘটনা।

এটাই কি কারণ শিকারের বিপরীতে প্রায় খুব উৎসাহের সঙ্গে বর্ণনা করা হত যে, সংগ্রহ এবং বপন প্রাথমিক পর্যায় থেকে নারীর হাতে উদ্ভাবিত, অন্যদিকে অনুকরণাত্মক নাচ পুরুষের অধিকারভুক্ত? এটা খুইই সত্য যে, সত্যিকার কৃষকের ক্ষেত্র থেকে অধিকাংশ পুনঃ উৎপাদনের চারা বপন করা হয় যেখানে পুরুষকে মাঠে প্রধান কাজের দায়িত্ব পালন করতে হয়। একটা উদাহরণ ইংরেজদের বীজ বপন মরিস-নাচ অধ্যায় সাতে আলোচিত হয়েছে।

প্রায়ই এবং ঘনিষ্ট আদিম চিন্তার প্রকৃতি নাচুয়ের পরিচয়ই বপনকারীর নির্ধারন না, কিন্তু কি বপন করা হয়েছে তার সঙ্গে । লাফ-নাচ একটা বিশেষ মূলশিল্পের উপাদান উপস্থাপন করে। লাফ-নাচ যতবেশী উর্ধগামী হবে তত বেশী লম্বা শস্য উৎপাদন হবে । এই ধারণা জার্মান ফসল বপন ঐতিহ্যে আছে এমনকি ইংরেজদের, বহেমিয়ান এবং বুলগেরিয়ানদের মধ্যে বিদ্যমান ।

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, কেন সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নাচের জগতে, বর্নিওর কায়ানগণ বীজ বপন উৎসবে উচ্চ লাফ নিয়ে আসে যেটা স্বতঃসিদ্ধ ইন্দোনেশিয়ার শান্ত ধরনের নাচের জগৎ, এবং আমরা যা খবর পাই মউলুসগণ কেন সেই একই রকম করে । সেই রকম পুরাতন ম্যাক্সিকোর নাচে লোকেরা প্রায় তাদের শিশুদের উপরে তুলে ধরে যাতে শিশু বড় হয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার কুরনাইগণ এটা বর্তমানকাল পর্যন্ত করে আসছে।

লম্বা পদক্ষেপও মনে হয় বয়ঃবৃদ্ধির মৌলিক শিল্প উপাদান। এই বক্তব্যের প্রকৃত উদাহরণ এর ব্যবহারে আছে যে, ফসল কাটার নাচে এবং আয়ু পূর্ণবৃদ্ধির নাচে যা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। কিছুকাল মূল্ভাব ও ধরন আগে পর্যন্ত বাড়েন বিবাহে ল্যাঙ্গাসে “নাচুয়ে এত লম্বা পা ফেলে যে সে রীতিমত উড়ছে” ।

একইভাবে রণপা-নাচের পিছনে কোন মৌলিক শিল্পউপাদান আছে এটা ভাবা দুস্কর, আমাদের শিশুদের খেলায় যে পদচিহ্ন ফুটে তাতে উদ্ভাবনশীলতা ছাড়া কোন উদ্দেশ্য নাই। এই নাচ দেখা যেতে পারে আফ্রিকায়, পশ্চিম ক্যামেরুনের নিগ্রোদের মধ্যে এবং পশ্চিম আকাম্বা ও ম্যাকোনডেদের মধ্যে; দক্ষিণ সাগরের নিউজিল্যান্ডের মাউরীদের মধ্যে।

বর্তমান কালের জাপানে এবং ক্ল্যাসিল গ্রীসে এটাকে নাটকের কৌতুকে এবং বনদেবতার সঙ্গে আবার দেখা যায়। জাপান এটাকে ইন্দোনেশিয়ার লাফ নাচের মত মাঠের উৎসবে ব্যবহার করে; উর্বরতা ধারণার মত এতঘনিষ্ঠ অন্য কোন উৎসব অনুষ্ঠানের তথ্য আমাদের জানা নাই। যাতে ক্যামেরুনের পূর্ণিমার রাত এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উৎসব, ম্যাকোনডের মধ্যে সূচনা-নাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে ।

বন দেবতার নাচের অর্থ পরিস্কার । এখানে খিলান-নাচ উর্বরতা প্রথায় নাচা হয় যা ৮৪ পৃষ্ঠার আলোচিত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী রাজ্যেও মানুষ তার নিজের পছন্দে সৃজন করেছে এবং মাহাজাগতিক ঘটনায় নিজের যৌনজীবনকে প্রসারিত করেছে।মানুষের উর্বরা-নাচ দুই ভিন্ন পর্যায়ের যৌনসম্ভোগের খাটি ফরম (শৈলী) থেকে আহরণ করা হয়েছে : যৌন মিলন ও প্রেম প্রস্তাব এবং যৌন কলা ক্রিয়া ।

আগে জাভায় মনে করা হত পুরুষ নাচুয়ে তার যুগলকে চুমুখেত, ব্লাক ফুট পায়ে ইন্ডিয়ানগণের একটা প্রথা দ্বারা এই থাকে বিস্ময়কর রিপোর্টের সততা সঠিক বলা যায়। কালো পায়ের মহিলা তার পছন্দমত পুরুষের দিকে চুমু প্রসারিত করতে থাকে এবং তার দিকে নাচতে নাচতে অগ্রসর হয়।

যখন তারা একত্রিত হয় অন্যকেউ তাদের মাথার উপর এক টুকরা কাপড় উড়ায়ে ঢেকে দিলে তারা পরস্পরকে চুমু খেতে খেতে সারিবদ্ধ মহিলা পুরুষদের সঙ্গে নাচতে থাকে। ডাকোটাগণ পরস্পরকে খোলাখুলি চুমু খায়, পূর্ব-আফ্রিকার আকাম্বাগণ কম করে হলেও গালে গাল চেপে রাখে ।

চুমু শুধুমাত্র লোক-নাচে না এমনকি পরবর্তী ইউরোপীয়ানদের নাচে একটা ভূমিকা রাখে। পনের ও ষোল শতাব্দীতে নাচের আগে ও পরে চুমু দেওয়া নেওয়া প্রচলিত প্রথা ছিল এবং নাচের সময় সোহাগ-আলিঙ্গন করা প্রথা বিরুদ্ধ ছিল না যদিও নৈতিকতাবাদীগণ জিহ্ববা দিয়ে লেহন করার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করত।

প্রাচীন কৃষ্টির মূল শিল্পউপাদান অন্য রকম ভাবে সংগঠিত হয়। যখন প্রিউসেস কলম্বিয়ার ইউটোটোদের নাচ প্রত্যক্ষ করেন। যেটা ছিল “ প্রত্যেক পুরুষ-লোক একটা করে লম্বা মোটা লাঠি দ্বারা সজ্জিত অন্যদিকে অন্য শহরের প্রায় প্রত্যেকেই হাঁটুতে ঝুমঝুমি বেঁধে থাকে।

এটা দিয়ে তারা মাটিতে ছন্দবদ্ধভাবে আঘাত করে যা স্থানীয় ভাষায় হারিকিনা দুইতাই এবং সে দ্রুত আঘাত করতে থাকে এবং প্রতিটি আঘাতের সঙ্গে মহিলাগণ উচ্চ চিৎকারে জবাব দেয়”। এখানে আমরা মনে করতে পারি জাপানের উজুমী মহিলা পুরোহিতের এক সময়ের অশালীন নাচ যাতে সে বালতি উপুর করে দাঁড়িয়ে লম্বা দত্ত দিয়ে দশবার আঘাত করে। প্রতি আঘাতের সঙ্গে মহিলা পুরাহিত উচ্চস্বরে টেনে টেনে ওহ্! ওহ্! শব্দ করে।”

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ওয়াটচাদিদের মধ্যে মূল শিল্প উপাদান আরো সুস্পষ্ট। বসন্ত কালের মাঝামাঝি সময় তারা আরম্ভ করে— অর্ধ-ধর্মীয় বড় উৎসব ক্যারো উদ্যাপন, যার প্রস্তুতিতে বিশেষ কর্তব্য হলে সন্তান উৎপাদান-। উৎসব সন্ধ্যায় শিশু ও মহিলাদের পুরুষদের সহচার্য থেকে আলাদা করে রাখা হয় এবং এখন পরুষদের উৎসব শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহিলাদের দিকে তাকান চলে না ।

ভূমিতে খোঁড়া বড় গর্তের পাশে যাদের ছাড়া হয় তারা সারা রাত ভর চিৎকার করে আর গান গেয়ে গর্তের চারপাশ ঘিরে নাচে। নাচের প্রতিটি (ফিগার) অঙ্গ, প্রতিটি ভঙ্গি এবং গানের সব শব্দগুলি তাদের যৌন-ভালবাসাকে উত্তেজিত করতে আগ্রহী। যে গর্ত খুঁড়া হয় সেটা ঝোঁপ-ঝাড় দিয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গের সাদৃশ্যপূর্ণ করে সাজান হয়।

নাচের মধ্যে তারা বল্লম সামনে বহন করে যেন পুরুষাঙ্গের প্রতীক স্বরূপ। “গর্তের চারপাশ ঘিরে তারা বল্লম প্রবিষ্ঠ করায় এটা বংশ বিস্তারের ক্ষমতায় প্রতীক রূপে এবং অব্যহতভাবে গান গেতে থাকে যোনীদ্বার” । 66 গর্ত না গর্ত না গর্ত না কিন্তু স্ত্রী বল্লম এবং তীর তাদের আকৃতি ও বিদ্ধ করার কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে লিঙ্গ নাচের কল্পিত প্রতীকরূপে আরোপিত–এরস্ যেমন কাম, হিন্দু কামদেবাতা তীরন্দাজ।

গাজেলী উপদ্বীপের বিইনিংগণ (ভিঙ্গল) কারু-কার্যময় বল্লম নেয়, যার নিচে সূচালো কোণাকৃতির মূল উৎপাটিত গাছের ডাল থাকে যাতে পুরুষ লিঙ্গের অগ্রভাগ ঢাকা দেখা যায় এবং দুই স্তরে ছালকাটার জন্য টানা হয় পিছনে যাতে লিঙ্গের অংশ পায়ের বাইরের দিকে ঠেলে দেয়। অন্য দৃষ্টান্তে লিঙ্গ প্রতীক বৈশিষ্ট্যময় নাচে বল্লম কম প্রয়োজনীয় হলেও কিন্ত প্রচুর দৃশ্যমান হয়।

এডমিরালটি দ্বীপুঞ্জের উসাইদের পুরুষ ও মহিলাগণ যখন সার্কেল নাচ করে তখন পুরুষগণ বল্লম ধরে মহিলাগণ মুক্তার ”মা” ঝিনুক ধারণ করে যেটা নারীযোনীর প্রতীক। এই নাচে শুধু পুরুষগণ লিঙ্গের ঢাকনা বহন করে যেটা পিতৃপ্রধান টোটেম-কৃষ্টির প্রতীকরূপে প্রসিদ্ধ ।

এটাতে নাচ কৃষ্টির কোন স্তরে অবস্থান করছে তা নির্ণয় করা যায় । লিঙ্গ প্রতীকে অস্ত্রের তাৎপর্য, তারপর তা বাস্তবতার নিরীক্ষেহয়। সোমালদের নিজের বিয়েতে বল্লমসহ নাচতে হয় এবং সম্ভবতঃ ক্যালিফোর্ণিয়ার সাস্টাদের মধ্যেও মেয়েদের দীক্ষা নেয়ার সময় যুদ্ধ-নাচ করতে হয়।

যদিও নিশ্চিন্তভাবে বলা যায় নাচের স্থানে যৌন-মিলন সত্যিকার ভাবে সম্পূর্ণ হয় না, এখানে সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের চিত্র ফ্যান্টাসটিক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হস্ত-মৈথুন এবং যৌন সম্ভোগের গতিবিধি কল্পনা করা বেশ কঠিন কাজ, অসংখ্য যৌন অঙ্গের দীক্ষা এবং তার স্বকীয় বহিপ্রকাশ, প্রচন্ড উত্তেজনায় অশালীন শব্দের বিকৃত উচ্চারণ, ছাপার অযোগ্য শব্দসমূহ সুরে বেধে উভয় লিঙ্গের বিভিন্ন কৃষ্টির নাচুয়ে একক বা যুগল রূপে তাদের নাচে এনেছে।

খুব বেশী দিনের কথা না, কাউচাউড গ্রীক ও জাপানী পৌরাণিক কাহিনীর অদ্ভুত সুসাদ্যময় প্রদর্শনীপূর্ণ থিম লক্ষ্য করতে সক্ষম হয়েছেন। জাপানী সূর্য ও শস্যক্ষেত্রের দেবী এমাটারাসু তার ভাই কর্তৃক অপমানি হয়ে গুহায় নির্বাসন নেয়। পৃথিবী অন্ধকার ও বন্ধ্যা হয়ে উঠে। দেবতাগণ গুপ্ত সভা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে, চতুর্থ দেবী এমানো- উজুমীকে পাঠান হবে।

সে তার চুলকে লতান শাখায় বেঁধে, একগোছা বাঁশপাতা ধরে একটা উল্টান বালতির (টাব) উপর আরোহণ করে। নাচের সঙ্গে তাতে আঘাত করতে থাকে তারা চারপাশে ঘিরে থাকা দেবতাগণ কুচ ও গোপন অঙ্গ উন্মুক্ত করে অট্টহাসি প্রতিধ্বনিত করতে থাকে। কৌতুহল হয়ে কি হচ্ছে জানার জন্য এমাটারাসু গুহা থেকে বাইরে পদক্ষেপ করলে পিছন দিকে তৎক্ষণাৎ তার পিছনে ঢুকার পথ সীল করে দেওয়া হয় এবং সূর্য আবার ভাস্বর হয়ে উঠে। প্রাচীন গ্রীসেও সেই একই মূল শিল্পউপাদান আছে।

শস্যক্ষেত্রের দেবী ডিমটার তার মেয়ে পার্সেফোনিকে বলপূর্বক অপহরণে রাগান্বিত হয়, যা পৃথিবী থেকে জন্মান (উৎপন্ন) নিঃশেষ হয়ে পরে। যতক্ষণ না বাউবো কৌতুকের সঙ্গে তাকে তার যৌনাঙ্গ দেখায়ে আকাশ ত্যাগ করায় এবং শান্ত করে। উভয় ঘটনা পরবর্তী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায়, চূড়ান্ত পর্যায়ে হেলেনীক রহস্যে এবং জাপানী সারুমী ধর্মযাজিকার অধোগতিপূর্ণ শরৎকালীন পূর্ণিমা নাচে।

এটার সঙ্গে পাশাপাশি রেখে কাউচাউড স্বীকার করেছেন যে, পৌরাণিক কথার নির্যাসের উদ্ভাবনী যাদুমন্ত্র আছে। একজন ফরাসী পন্ডিত তুলনা করে তৃতীয় এক উদাহরণ যোগ করেন। সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত একটা মিশরীয় পৌরাণিক কথা, যাতে বলা আছে কেমন করে একদিন সূর্য-দেবতা (জাপানী এমাটারাসু সূর্য দেবত্বপ্রাপ্ত) রাগান্বিত হয়ে পিঠের উপরে নির্জন স্থানে সারাদিন শুয়ে ছিলেন যতক্ষণ না তার ক্যান হ্যাথর তাকে দেখতে পায় এবং তার গুপ্ত অঙ্গ প্রদর্শন করে। বড় দেবতাকে হাসতে হয় এবং পৃথিবীতে ফিরে আসেন ।

এমনকি অপৌরাণিক বর্তমানকালেও বিবস্ত্র নাচ উর্বরতা বাড়াতে এক সহায়ক ভূমিকা রাখে। নিগ্রোমহিলা ফসল উৎসবে “নগ্ন এবং কাঠের স্তুপের চারদিকে মাতাল হয়ে” নাচে। ইয়াপ দ্বীপের নাচুয়ে মহিলাদের নাচতে নাচতে ঘাসের স্কার্ট দুলায়ে দেহ অবশ্যই প্রদর্শন করতে হয়;

নিউ ক্যালাডোনিয়ার মেয়েদের সন্তান জন্ম দেবার পর নাচের সময় স্কার্ট উঁচুতে তুলে ধরতে হয় এবং ইন্ডিয়ান মহিলাগণ তাদের পোষাক এমনভাবে ভাঁজ করে যে, নাচের সময় শুধু তাদের যৌন অংশ প্রদর্শিত হয়। জার্মানীর মধ্য-যুগের খাঁটি কৃষাণ-নাচে (শিল্পসম্মত অসাবধানে ঘুর্ণিয়মান মেয়ের পছন্দই ছিল মূলশিল্প উপাদান পোষাক মনে হয় উড়ছে।

তথাপি এটা সব সময় সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে না রূপক আকারে পৃথিবী বুক খুলে কোন নির্দিষ্ট নতুন বীজ গ্রহণ করবে, অথবা যদি এটা শত্রুর ক্ষমতার বিরুদ্ধে সাধারণ প্রতিরক্ষা কেন্দ্রীক হয়। গুসটাভ ফ্লেবার্ট নিউবিয়ান ভ্রমণ কাহিনীতে লেখা চিঠিপত্রে “প্রতিরক্ষা”র উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠে ।

কপ্টিক মঠধারী সন্ন্যাসী নীলনদের জাহাজে সাঁতার কেটে ভিক্ষা নেয়ার জন্য আসে এবং তক্ষণাৎ খৃষ্টান মঠধারী সন্ন্যাসীরা ধাওয়া করে তাড়ায়ে দেয় তখন কোন একজন মুসলমান নৌকাচালক তারপর কাপড় খুলে নাচে এবং তার পিঠ তাদের দিকে ঘুরায়ে রাখে ৷

অধোগতির পাথর-যুগের মূলশিল্প উপাদানের ভালো উদাহরণ আমাদের সভ্যতায় ইফেলে শিশু ব্যাপটিজম উৎসব যেটা উল্লেখিত প্রথার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পরিবর্তিত হয়। এটা একটা মাতৃতান্ত্রিক বিধিমালা, “যেখানে পুরুষদের নিষেধ আছে, কিন্তু আমোদ-প্রমোদ আছে বিশেষ করে শিশুর বাপের জন্য।

মহিলাগণ তাদের স্কার্টের পাড় তুলে ক্রিস ক্রস সাজে, চক্র দিয়ে সার্কেলে ঘুরে এবং গান গায়”। এই স্কার্টের পাড় উপরে তোলা মূল শিল্প-উপাদান কিছু না অন্যভাবে অধঃপতিত প্রদর্শনী ।

ইউরোপের উঁচু পর্যায়ের সভ্যতায় এই ফরম বা বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা হয়। প্রাচীন গ্রীসের প্রাথমিক কালে এটা এইরূপে প্রদর্শিত হত। এটা নির্দিষ্ট ও অত্যন্তহৃদয়গ্রাহী এবং বৈশিষ্ট্যময় কারণ মন্দির-নর্তকীদের স্কার্ট হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছাত না এবং শরীরের উপরের অংশ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকত। এটার অধোগতির চূড়ান্ত, ফরম রকোকো ফ্যাশনে স্কার্ট উপরে তোলায় সংক্রামিত ।

পুরুষ নাচুয়ে স্বাভাবিক শক্তিক্ষমতা অতিরঞ্জিত করে তার সঙ্গে লিঙ্গাকৃতির বিরাট মাপের বাতসপূর্ণ ছোবড়া দিয়ে বাঁধে অথবা ব্যাকা করে রাখে। ধরতে গেলে গ্রীসের প্রতিটি ডায়নোসিয়ান নাচুয়ে শরীরের সঙ্গে একটা সংযুক্ত রাখে। বর্তমান কাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ প্রাচীন প্রথা গুলির মধ্যে অনেকগুলি অতিরিক্ত বিনয়ের মধ্যে চাপা পড়ে গেছে, তথাপি আলতাই- তুর্কীদের এবং উত্তর-পশ্চিম-ব্রাজিলের কবিউয়াদের লিঙ্গ প্রতীক নাচ বিশেষভাবে বর্ণনা করা যায়। বিশপ বিবরণের জন্য এখানে কবিউয়াদের একটা রিপোর্ট উল্লেখ করা হলো :

“নাচুয়েদের ছোবড়ার তৈরী দীর্ঘ প্রতীক লিঙ্গের সঙ্গে নিচুতে ঝুলান গাছের লাল মোচাকৃতির তৈরী অন্ডকোষ থাকে, যা তারা দুই হাতদিয়ে দেহাবিষ্ট রাখে। গানের সঙ্গে ডান পায়ে মাটিতে আঘাত করার সঙ্গে তারা প্রথমে দ্বিগুণ দ্রুত সময়ে নাচে, একজনের পিছনে অন্য একজন শরীরের উপরের অংশ সম্মুখে বেন্ড করে। হঠাৎ করে তারা বনা উন্মাদনায় লাফ দেয় রতিক্রিয়ার ভঙ্গিতে এবং ইঃ ইঃ ইঃ শব্দে গোমরাতে থাকে ।

এইরূপে তারা উর্বরতা প্রতি বাড়ীর কোনায় কোনায় বহন করে বনের ধার থেকে পার্শ্ববর্তী শস্যক্ষেত্রগুলিতে; তারা মহিলাদের মধ্যে লাফ দিয়ে পরে তা যুবতীই হউক বা বৃদ্ধা হোক তখন তারা নিজেরাই সরে আসে হাসতে হাসতে, তারা লিঙ্গ প্রতীক দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করে” ।

উর্বরা নাচের ধারণার চূড়ান্ত পর্যায় হল উভয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যসূচক নাচ, যাতে মহিলা নিজেই লিঙ্গ প্রতীকের উপর নিজেকে বাঁধে। এই নাচও গ্রীসের উন্নত সভ্যতাকে উত্তীর্ণ করে আর্টেমিস কোরাইথালিয়া উৎসবে স্থান করে নিয়েছে। আদি কৃষ্টির উদাহরণ উত্তর-পূর্ব-আফ্রিকা এবং পুনরায় আলতাই-তুর্কীদের থেকে সংগৃহীত হয়েছে। তবে পরের নামের ব্যাপারে বলা যায় তাদের লিঙ্গ প্রতীক এমনকি যুগল-নাচের অংশীদারের যোনীতে প্রবিষ্ট করা হয়ে থাকে ।

সাদা চামড়ার মানুষেরা কখন কখন এইরূপ নাচে “লজ্জাহীন” হয় তার জন্য উত্তেজিত হয়ে উঠে। কিন্তু তারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে যেয়ে যে সমস্ত শব্দাবলী চয়ন করে যেমন-অসুন্দর, অসংযত, অশালীন যেটা মোটেও বাস্তবসম্মত না । আদি মানুষের জন্য এটা কোন সচেতনতা এবং আনন্দপূর্ণ ব্যাপার না কিন্তু জীবন এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার সামিল।

নিগ্রো অধ্যুষিত আফ্রিকায় অনুকরণাত্মক বৈশিষ্ট্যে যুগল-নাচ নিশ্চিতভাবে মনে করা যায় যে, সে তার ধর্মীয় পবিত্রতা হারায়ে ক্রমাগত লালসার নাচে পরিগণিত হয়ে পরেছে। সুহেলী মহিলাদের প্রত্যেক রাতভর নাচের উদাহরণ দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, সেখানে একজন যুবক প্রতিটি নর্তকীর নাচ দেখে এবং যৌনক্রিয়ার নৈপূণ্য সমালোচনা করে।

“সমস্ত ব্যাপারটি শুধুমাত্র মেয়েদের রতিক্রিয়া উপস্থাপনের অনুষ্ঠান মাত্র”। তালমাডে বর্ণনাকৃত প্রাচীন ইহুদি যুবতীদের নাচের সঙ্গে কতটুকু ফারাক বলা যাবে নিম্নের এইরূপ বর্ণনা থেকে “ইসরাইলের জন্য আর কোন ছুটির দিন নাই যেমন ১৫ই আব এবং প্রায়শ্চিত্তের দিবস, যে দিন জেরুজালেম কন্যা সাদাপোষাক হাওলাত করে পরে বাহির হয় কেননা যদি কারো পোষাক না থাকার কারণে লজ্জিত হতে না হয় (!)

জেরুজালেম কন্যাগণ আগে গিয়ে আঙ্গুর বাগানে নাচে এবং কি বলে থাকে তারা? যৌবন, তোমার চোখ তুলে তাকাও এবং দেখ তাকে যাকে তুমি পছন্দ কর।” অবশেষে পেশাদার একক অনুষ্ঠানে যৌনউন্মাদনাপূর্ণ নাচ অর্ন্তনিহিত হয়ে যায় এবং কোন বুদ্ধিমান প্রখ্যাত নাচুয়ে “উদর নাচ ” কে প্রধান অনুষ্ঠানের মধ্যে ধরে না ।

আমরা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, এই ধরনের উর্বরা-নাচ অনুকরণাত্মক নাচের ক্যাটাগরীতে বিরাজ করে কি ? এই নাচে কি অনেকগুলি হর্ষোৎফুল্লো মুহুর্ত নাই, অনেক পরিমানে প্রাণবন্ত এবং অত্যন্ত উত্তেজিত, আমাদের উচিত তারচেয়ে ঐ সকল নাচে একটাকে অন্তর্ভূক্ত করা যেটা অনুকরণপ্রবণ এবং অ-অনুকরণপ্রবণ হর্ষজনক মূলশিল্প উপাদানের মিশ্রিত স্থানে?

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এটা একটা খেলামেলা প্রশ্ন। কোন উত্তরই সন্তোষজনক হবে না, ব্যতিক্রম শুধু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে কোন শ্রেণী বিভাগ নাই, কোন ব্যাপারই না কিভাবে সমাপ্ত হয়, অন্ধকারে হাতড়ানো অগ্রপথের জ্ঞানের জন্য ধ্রুবতারার চেয়ে অন্য আর কিছু কখন থাকতে পারে না । পূর্বরাগ নাচকে যৌনক্রিয়ার চেয়ে অধিক সমৃদ্ধ করেছে। এটার মূলশিল্প উপাদান এখনও বর্তমান কালের সামাজিক নাচে বিদ্যমান।

এই সকল নাচের জগতে সম্ভবতঃ সবচেয়ে পুরাতন থিম বা মূল কাহিনী একসারি পুরুষ এবং একসারি নারী পরস্পরের দিকে আগায়ে আসছে কিন্তু সম্পূর্ণ একত্রে না। অস্ট্রেলিয়ান কৃষ্টিতে এইরূপ উদাহরণ আছে। যখন এটাকে ব্যক্তিকেন্দ্রীক এবং অনুকরণাত্মকে প্রতিস্থাপিত করা হয় এটা হয়তবা প্রেমপ্রার্থী অথবা দুর্বৃত্ত হয়ে উঠতে পারে।

মাইক্রোনেশিয়ার গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জে দুইজন পুরুষ একজন মহিলার দিকে দ্রুত আগায়ে যায় এবং তাদের দিকে টেনে নেয়–ইউরোপিয়ানদের “দুর্বৃত্ত এবং রাজকুমারী” অথবা উল্টাটা দুইজন মহিলা পুরুষদের দিকে পক্ষ নেয় এবং ছোঁ মেরে একজন পুরুষকে সঙ্গে নিয়েতার পাশে বসে পড়ে। টগোতে এক রকম খেলার ছলে নাচ আছে যা খুবই সাদৃশ্যময়ঃ

পুরুষগণ অর্ধবৃত্তাকারে বসে, তখন মহিলাগণ হাতে তালি দিয়ে তাদের খোলা দিকের সামনে লাইন করে দাঁড়ায়ে থাকে, একজন বা দুইজন পুরুষ মহিলাদের দিকে লক্ষ্য করে নাচতে থাকে অথবা একজন বা দুইজন মহিলা পুরুষদের দিকে আকর্ষণ করে নাচতে থাকে।

এই একই রকম উর্বরা নাচ এক্সিমোরা নাচে, উত্তর আমেরিকার মোয়েপাগণ, আর্জেন্টাইন ইল পালিটোগণ এবং পুরান ম্যাক্সিকোর নাইউয়াগণ হুইটজিলোপচেটল ধর্ম স্থানের সামনের দরবারে একজন মহিলা দুইজন পুরুষের হাতে হাত রেখে অথবা এর ঠিক বিপরীতভাবে নাচে।

উর্বরা নাচের অতি অস্বাভাবিক সংরক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি চিন্তাকে প্রতিহত করতে পারিনি যে, এই মূলশিল্প উপাদান হল প্রাচীন দলবদ্ধ বৈবাহিক সম্পর্ক, নির্দিষ্ট করে এক নারীর অনেক স্বামী বা পলেন্ড্রি বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব বজায় থাকার ।

এই দুইজনের সঙ্গে একজনের দলবাঁধার অদ্ভুত প্রথা ইউরোপেও দেখা যায়। এটা প্রাচীন গ্রীক বনদেবতা-নাচের মূল বিষয়বস্তু বা থিম যেটা খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর ফুলদানিতে উৎকীর্ণ আছে। আমরা সকল দেশের লোক-নাচে এটার সাক্ষাৎ পাই।

আলপাইন জনগোষ্ঠীর ড্রেইসট্রেয়ারার এর মধ্যে, সুইডেনের ভিনগকারেস-এর মধ্যে, নরওয়ের ক্রোসানাচে মেড ট্রির মধ্যে, রোন উপত্যকার গ্যালিট্টার মধ্যে এবং রোমাগনায় ইটালীতে, প্যারিকোটি অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে হাঙ্গেরিয়ান কৃষকদের লাট্টু-নাচের মধ্যে এবং ইউক্রেনের হোপাকদের মধ্যে আছে।

এটাকে আমরা আবার দেখতে পাব পশ্চিম ইউরোপীয়ানদের সমাজ-নাচে, মধ্য-যুগের দরবার-নাচ থেকে বেজ ড্যান্স এর মধ্যে দিয়ে ইকোসাইসি-ট্রিয়োলেট এর শেষ পর্যন্ত।সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে আমাদের নিজেদের সময় পর্যন্ত যে অদ্বিতীয় ধারার পূর্বরাগ নাচ সংরক্ষিত হয়ে আছে তা“প্রুডি” ।

উত্তর-মালয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ডে মুখোশ পরিহিত পুরুষ মহিলা মুখোশধারীর কাছে লঘু ও দ্রুত পদক্ষেপে অগ্রসর হয়, পিছনে সরে আসে, আবার একবার অনুনয় করে যাতে তার প্রতি অনুরাগ জন্মায় এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের হটায়ে দেয়, মহিলা তাদের অগ্রসরকে শান্তভাবে নেয় ও সে তার পিঠ ঘুরায়ে একজনের দিকে রাখে অন্যজনকে ধাক্কা মেরে পাশে ছুড়ে ফেলে কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজন মুখোশ পরিহিত পুরুষকে স্বীকার করতে হয় এবং যাবতীয় ফলাফল মেনে নিতে হয় যখন অন্যেরা সরে পরে।

ওডিজারেনকোন পূর্ব-আফ্রিকার বর্ণনা একই রকমঃ মহিলা খুবই শান্ত এবং তার শরীর নড়েনা, পিছনে হাত দিয়ে মুখে জলন্ত সিগারেট বেখে সে এমনভাবে তাকায় যে, পরবর্তী পালায় পুরুষ তার অনুরাগ পাবার চেষ্টা করছে। এই একই মূল শিল্প উপাদান পনেরশত বৎসর জার্মান স্কোমোলারট্যাঞ্জ এ এবং সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এপ্পেনজেল এর হেরিগ এ অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।

এই পয়েন্টে আমরা গুরুত্বপূর্ণ যুগল নাচের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ায়ে আছি : অনুকরণাত্মক পুনঃপরিবেশিত পূর্বরাগ যুগল- নাচে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। স্বাভাবিক মূলশিল্প উপাদান মেয়েকে ঘিরে প্রেমপ্রার্থী ছেলের নাচ। সবার ধারণা এই মূলশিল্প উপাদান প্রাচীন মূল বিষয়বস্তু বা থীম মেয়েকে দলবদ্ধভাবে ঘিরে রাখার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র অনুভূতির উদ্বোধনের সঙ্গে কঠিন বাস্তবতা নির্দিষ্ট ভালবাসার পাত্রকে সবার ভালবাসর বিমূর্ত দলবদ্ধতায় প্রতিকল্পিত করে।

সত্যিকারভাবে অনুকরণাত্মক গুণাবলী এখনও তাৎপর্যহীন যেমন পিউবলো ইন্ডিয়ানদের মধ্যে ঘিরে রাখা যে মহিলা লাটিমের মত বোঁ বোঁ করে চক্কর দিতে থাকে। যদিও এই ধরনের মৌলিক শিল্প উপাদানপূর্ণ অঞ্চলের শেষপ্রান্ত ম্যাক্সিকো সেখানেও এটা দেখা যায় এবং আমরা অবশ্যই ধরে নিতে পারি যে, এ দেশে এটার সবচেয়ে পুরাতন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফরম বিদ্যামান।

এশিয়াকে আমরা মধ্যবর্তী অঞ্চল বিবেচনা করতে পারি যেখানে পরিস্থিতি আরো স্বচ্ছ, প্রত্যক্ষ এবং উল্লেখযোগ্য। মহিলা নাচুয়ে এখন একস্থানে নাচে পুরুষগণকে আনুষঙ্গিক সচলতা বহন করতে হয়। ককেশাসের কুন্ডুরদের মেয়ে একস্থান থেকে একদম সরে না ছেলেকে গান গেয়ে গানের সঙ্গে মেয়েকে ঘিরে লাফ দিতে হয়।

স্থির-নাচের নিস্ক্রিয়তার মধ্যেও উন্মেষ ঘটতে পারে অটল, সুসজ্জিত নম্র ভদ্র- মহিলারঃ মলুউকা দ্বীপপুঞ্জের সেরান দ্বীপে উচ্চবংশের মেয়েরা পুরুষদেরকে ডেকে পাঠায়, যখন পুরুষেরা তাদের ঘিরে নাচে তারা তাদের চোখ মাটিতে স্থাপন করে হাঁটু হালকাভাবে দোলায় এবং এক বাহু অথবা অন্য বাহু ছন্দে ছন্দে নাড়ায়, এবং তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নাচ শেষ হয়।

চূড়ান্ত পর্যায়ে মেয়েরা তাদের ভূমিকা রাখে অত্যন্ত নাটকীয় ভাবে : লাজিনকাতে লেজিয়ানদের নাচ যেটা ককেশাসের সমগ্র অঞ্চল জয় করেছে, যার অন্য অংশ পশ্চিম-আফ্রিকার আপার গিনি উপকুল, নারী পুরুষ পরস্পরকে ঘিরে রাখে, কখন সম্মুখে অগ্রসর হয়, আবার পিছনে যায়, কখন শান্তভাবে আবার উত্তেজিত হয়। আক্রমণ করে এবং পলায়ন করে, ইশারা দেখায় এবং পিছনে ফিরে পর্যায়ক্রমে যেমন কবির ভাষায় :

তোমার মধ্যে আমি কি সচকিত হয়ে পরিঃ যখন তুমি আমার

সীমান পেরিয়ে হারায়ে যাও;

এবং উড়ন্ত বেনীর গতিপথে আমার প্রতি দোলান তোমার পালিয়ে যাওয়া!

তোমাকে ছেড়ে আমি কি সচকিত হয়ে পরি এবং তোমার

সর্পিলা বেনী হতে: অর্থ ফিরে তুমি থমকে দাঁড়াও এবং সোহাগভরে পাতলা চোখের দৃষ্টি পথে ।

নীটস্, “দ্যাজ স্পিক জরথুষ্ট্র” দ্বিতীয় নাচের গান।

চিলির ইন্ডিয়ানদের মধ্যে জ্যমাউকা অথবা কিউকাদের নাচে লক্ষ্য করা গেছে যে, পুরুষেরা এইরূপ উৎসবে শুধুমাত্র মহিলাদের খেলনার বস্তুরূপে গণ্য না। পুরুষ নাচুয়েকে তার স্বপ্রতিভ বুদ্ধি খাটাতে হবে যখন মহিলা নাচুয়ে তার সামনে ঘুরে গেলে তাকেও সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ে দ্রুত ঘুরে যেতে হবে নচেৎ তাকে জনতার হাস্য-পাত্র রূপে পরিগণিত হতে হবে।

প্রাচীন গ্রীসে সর্বনিম্ন ডায়সাস যুগে এমনকি সমসাময়িক ইউরোপে পুর্বরাগের নাচ এবং ছিনালীপনা দৃষ্টিগোচর হয়। উত্তর- সাগর উপকূলবর্তী জার্মানীর নাচ যেমন স্থুল তেমনি নিঃষ্প্রাণ। পূর্ব-ফ্রিসিয়ার নাচুয়ে তার নাচের সঙ্গিনীর সামনে পায়ের জঙ্গলী ভঙ্গিমা করে শ্রান্ত হয়ে পড়লে স্থির হয়ে গান গায় : “আমার কথায় স্থির দাঁড়ায় থাক” ।

সে জবাব দেয় “কেন আমি স্থির দাঁড়াব? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?” এক সময় আসে সে স্থির দাঁড়ায় এবং এবার মেয়ের পালা তার সামনে নাচা। কিন্তু ইউরোপের মধ্যে পূর্বরাগের সবচেয়ে উন্নতমানের নাচ হল স্পেনীয়ার্ডদের, দক্ষিণ জার্মানীর আল্পাইন জেলাগুলোতে, রাশিয়ান, পোল এবং হাঙ্গেরিয়ানদের নাচ ।

হাঙ্গেরিয়ানদের নাচের ফরম প্রায় ককেশিয়ানদের খুব কাছাকাছি বিশেষ করে ঘর তৈরীর সময় জ্বালাতন করা নাচ এবং ম্যাগিয়ারকর যার থেকে খুববেশী হলে ১০০ বৎসর আগে জানাশোনা ক্যাসারডাস (সরাইখানার মালিক) নাচ গ্রহণ করা হয়েছে । গঠন ভঙ্গিতে এটা দুইভাগে বিভক্ত : লাছুউ পুরুষদের গোলকের মধ্যে আস্তে নাচ এবং ফ্রিস প্রচন্ড গতিময় যুগল- নাচ; প্রয়োগের বেলায় উত্তেজনায় তীব্র ছন্দে স্পন্দন তোলে, পা ভিতরে বাইরে দোলে, তারা গর্বের সঙ্গে, দর্পভরে, সুতীব্র গভীর আবেগে নাচে।

প্রায় একশত বৎসর পূর্বে একজন শিল্প কলা সমাজদার লেখেন যে, “পদক্ষেপ, ঘুরা, দেহভঙ্গিমা, মনোভাব নিয়মতান্ত্রিক না নাচুয়ের অভিরুচি ও প্রতিভার উপর নির্ভর করে। তারা প্রত্যহিক ব্যবহার করা পদক্ষেপ মেপে হাঁটে না এক দুই তিন চার যেমন ধীরগতি দ্বৈত নাচ চলে, ওলটসের মত একঘেয়ে ঘুরা না, এটা একটা স্বাধীন নাচ, যে কোন ধরনের চিন্তাধারা এটাকে প্রাণবন্ত করতে পারে।

লোকেরা যখন ধীরগতি দ্বৈত নাচ করে বা ওলট্স, তখন তারা কখন মুখ বিকৃত করে না এটাই স্বাভাবিক তবে হাঙ্গেরীয়ানদের নাচের মত প্রাণবন্ত, স্বাবলীল হাবভাব আর কখন কোথাও দেখা যায় না এবং এটা আবারো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, হাঙ্গেরীয়ানদের জন্য নাচ হলো কবিতা, ওলট্স, মিনট (ধীরগতি সম্পন্ন দ্বৈত-নাচ) অভ্যাসের দ্বারা সাধিত কর্ম উদ্যম ।

একজন ম্যাকানিক স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিন তৈরী করতে পারে বা মিনট নাচ সুন্দর করে নাচতে পারে, ওলটস তাক্ লাগাতে পারে কিন্তু কখন হাঙ্গেরীয়ানদের নাচের মত কিছু কখন তৈরী করতে পারে না।” আল্পাইন ফরমের পূর্বরাগ-নাচ, দক্ষিন ব্যাভারিয়ানদের স্কুপ্লটার, টিরোলেস এবং সেলবাজস হাঙ্গেরীয়ানর নাচ সমস্ত নমনীয়তা থেকে অধিক শক্তির প্রতি জোর দেয়।

“কিছু পদক্ষেপের জন্য এটা একটা ল্যান্ডালার মাত্র। সলজ্জ মেয়েটি নম্র নেত্রপাতে শান্তভাবে ঘুরে, ছেলেটি তাকে ঘিরে মূখাভিনয় তার আনন্দ, ভালবাসা জাহির করতে থাকে। সে তারা পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করে, চাপড়ায় উরুতে, হাঁটুতে এবং জুতা পরা গোড়ালী দিয়ে মিউজিকের তালে তালে, এমনকি ডিগবাজি খায়, গাড়ীর চাকার মত ঘুরতে থাকে সে মেয়েটার বাহুর নিচে ঘুরে।

কিন্তু শুধুমাত্র কদাচিৎ সে উদ্দীপ্ত হয়ে মেয়েকে তার বাহুতে রাখে। সবশেষে যদি সে সময়ের ঐতিহ্যবাহী প্রথা অনুসরণ করতে ইচ্ছা করে এবং তার জন্য পরিমান মত শক্তিসামর্থ থাকে, সে তাকে মাথার উপর দিয়ে সুন্দরভাবে শূন্যে দুলায়ে নিচে নামায়ে আনে। এটা অঙ্গভঙ্গির মধ্যে প্রেম নিবেদন।” এটা কম্পোজিশন সাধারণত এইরূপ ঃ ভরস্পিলঃ সূচনাতে যুগলদ্বয় তাদের বাহু দোলায় সামনে পিছনে চার মাত্রায় ।

এনলিউফার : ছেলেরা ছয়বার চাপড় মারে :

১) ডান হাতে ডান উরুতে ৪) বাম হাতে বাম উরুতে

২) বাম হাতে বাম উরুতে ৫) বাম হাতে বাম উরুতে

৩) ডান হাতে ডান উরুতে ৬) বাম হাতে বাম উরুতে

তখন তারা লাফ দিয়ে হাঁটুতে পরে যখন মেয়েরা তাদের স্থানে ঘুরতে থাকে । ল্যান্ডালারঃ যুগলদের ধীরগতির ওলস্ । নাচ্ছেটাইজেনঃ পূর্বরাগের মূখাভিনয় (পাহাড়ী মোরগের মিলন)। প্লাটারল  যখন ছেলেরা নিজেদের চাপড়াতে থাকে মেয়েরা গোলকের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে যায়। আসলাউফার : প্লাটারল এর মত শেষ প্রান্তের ছেলেমেয়ে দিক্ বদলায় যখন তারা একে অপরের কাছাকাছি আবার আসে ।

ক্লাসফিগার  হাঁটু গেঁড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে উপরে উঠান। বিভিন্ন স্বতন্ত্র নাচে স্থানীয় বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায় । পেশীশক্তির চেয়ে সাবলীল গতিময়তার ঝোঁকে এবং প্রাগৈতিহাসিক অথবা আদিম ঐতিহ্যের চেয়ে পুরাতন, উন্নত কৃষ্টির প্রতি আস্থা রেখে স্পেনের পূর্বরাগ নাচ এমন এক পর্যায়ে পৌছে যে, দর্শককে নতুন করে বিমুগ্ধ না করে পারে না।

ফ্যানডানগো তার বৈচিত্র নিয়ে, ম্যালাগুয়েনা, রনডিনা, গ্রানাডিনা অথবা মার্সিয়ানা সতের শতাব্দীতে ইউরোপে এসেছে যা রিনস ডিলাস ইন্ডিয়াস এর আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের উৎসমূলকে স্বীকার করে। যদিও এই আরোপণ সঠিক, যদি ফিনিশিয়দের সময়ে যাওয়া যায় যারা এটার গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।

তবে এটার স্পেনের মাটিতে দুই হাজার বৎসরের উত্তরাধিকারের সূত্র আছে, ক্যাসটানেটস (কাঠের বা হাতির দাঁতের করতাল বিশেষ) এর উদ্দীপক ছন্দের সঙ্গে ৩/৮ এবং ৩/৪ মাত্রার যোগসাধনে এমন মোহনীয়তা যুক্ত হয় যে, পূর্ববাগের নাচ আদিম উল্লাসে পরিগণিত হয় ।

“ফ্যানডানগো শুধুমাত্র দুইজনে নাচে কিন্তু কেউ কখন কাউকে স্পর্শ করে না এমনকি হাত দেয় না। কিন্তু যখন কেউও দেখে কেমন করে তারা পরস্পাকে চ্যালেঞ্জ করে, সরে আসে, আবার এগিয়ে যায়, কেমন লাগে মহিলা যখন আত্মসমর্পণ করে করে তার পূর্ব মূহুর্তে হঠাৎ করে জেতার কাছ থেকে স্লিপ করে সরে এসে নতুন উদ্যম নেয়;

কেমন করে পুরুষ প্ররোচিত করে তারপর মহিলা তাকে, কেমন করে তাদের চাহনী, অঙ্গভঙ্গি এবং অবস্থানে বিভিন্ন আবেগ প্রকাশ করে যা তাদের উভয়কে উজ্জিবীত করে; যখন কেউ এই সব দেখে স্বলজ্জভাবে স্বীকার না করে পারে না এই  উর্বরা নাচের বর্ণনা’ সাইথিয়ার’ যুদ্ধর মত এত সত্য যে, চূড়ান্ত ভাবে অবিরাম কামানের গোলাবর্ষণের আগুনের কর্মকান্ডের প্রদর্শনী বাস্তবিকই যেন অবরুদ্ধ দূর্গের বাইরে কামানের গর্জন।

১৭৬৭ সনে ক্যাসানোভা মাদ্রিদে ফ্যানডানগো প্রত্যক্ষ করে অনলবর্ষী শব্দে তার চিত্র ফুটায়ে তুলেন। তিনি লেখেন “নারী পুরুষের প্রতিটা যুগল অর্কেস্ট্রার ঐক্যতানে তাদের করতালের সহযোগে তিন ধাপের বেশী কখন নড়ে না। তারা হাজার রকম মনোভাব নেয় হাজার রকম অঙ্গভঙ্গি করে যা এত যৌনতাপ্রবণ যে, তার সঙ্গে আর কিছুর তুলনা করা যায় না।

এই নাচ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালবাসার বহিপ্রকাশ, কামনার চিহ্ন থেকে হর্ষোৎফুল্ল আনন্দঘন উপভোগ্য । আমার মনে হয় এই উর্বরা নাচ করার পর কোন মেয়ের পক্ষে অসম্ভব তার সহযোগীর কোন কিছুতে অসহযোগীতা করা”।

উনবিংশ শতাব্দীতে এই উর্বরা নাচ খুব একটা করা হয় না, এটা খুবই পরিশ্রমের ও তীব্র আবেগপূর্ণ। ধরে নেয়া হয় যে, ১৭৮০ সনে নৃত্যশিল্পী জেরীজো আবিস্কার করেন উত্তরের জোটা, সেভিল্লানা এবং বলেরো এটার স্থান নিয়েছে। বলেরো ২/৪ অথবা ৩/৪ ছন্দে চলে, করতাল, গীটার এবং ট্যাম্বুরীন বাজান হয় এবং মহিলার স্লিপ করে যাওয়ার চিত্র আছে, অনুনয় করে আবার পালিয়ে যায় কিন্তু ফানড্যানগোর বিভিষিকা এখানে” । শান্ত হয়ে নম্র তোষামোদকারীতে এসেছে, এটা নম্রতার বিজয়

ভেনিসের লোক-নৃত্য ফারলানা দিয়ে ইউরোপের এই সিরিজের উদাহরণ দেয়া শেষ করব। এটা ৬/৮ ছন্দের একটা বন্য পূর্বরাগের নাচ যাতে এক অথবা দুই যুগল থাকে যেখানে নারী, পুরুষ আগায় আবার পিছায়, হাত, পা স্পর্শ করে এবং সরায় নেয়, দোলায় ও চক্র করে তাদের বাহু টরেনটেলার মত সাদৃশ্যপূর্ণ কিন্তু এবড়ো থেবড়ো এবং সামঞ্জস্যহীন।

ক্যাসানোভা বলেন, “আর কোন জাতীয় নাচ এত সংঘাতপূর্ণ না”। ১৭৭৫ সনে এটা একটা দুঃসাহসিক নাচ ছিল, সত্যিকার ভাবে বলতে হয় ১৮৯৪ সনে আনগ্রেলী এটাকে প্রচলিত নাচের তালিকায় লিপিব্ধ করেছেন। সুতরা ১৭৬০ সন পর্যন্ত এটা নাচ হত এই তথ্য সঠিক না।

অতীন্দ্রিয়বাদী উর্বরা নাচ অথবা পুর্বরাগ-নাচে যুগল মিলাতে সত্যিকারভাবে পুরুষ ও নারীর আবশ্যকতা ছিল না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীর অংশে অংশগ্রহণ করে থাকে। উদাহরণ হিসাবে অবশ্যই বহুল পরিচিত ইউরোপীয়ানদের মুখোশধারী মারদি গ্রাস বলা যায়।

ইউরোপের বাইরে এটার ব্যাপ্তি একটা কৃষ্টির স্তর নির্দেশ করে যার পরিধি নারী-পুরুষ নাচার সময়ের আরো আগে বিস্তৃত। ম্যানডিওকা-বিয়ার উৎসবে ব্রাজিলিয়ান প্যারেসি-ক্যাবিক্সিতে একজন পুরুষ শয়তান- সাপের স্ত্রীর প্রতিনিধি হয় এবং অস্ট্রেলিয়ান অর্ধছেদন উৎসবে, গোষ্ঠী পূর্ব পুরুষদের স্ত্রীর ভূমিকায় একজন পুরুষ স্থান নেয়।

পূর্ববর্তী সময়েরকৃষ্টিতে নারীর ভালবাসার পুরুষ পাত্রকে অত্যন্ত ঘৃনা করা হত, প্রায় নারীসুলভ চেহারার যুবককে কৃত্তিম চুল, কুচ, গলায় মতি, ব্রেসলেট এবং নারীরুচির নাক ও কানে ভূষণ পরিধান করান হত। পামির-তাজাকদের মধ্যে বিখ্যাত যুগল “পরস্পরকে স্পর্শ না করে প্রথমে প্রচলিত অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে ছন্দে ছন্দে নাচে।

ক্রমান্বয়ে পুরুষটি বিভিন্নউপায়ে কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে, যার ফলে তার স্ত্রী দৌড়ে পালায়ে যায়। উঁচু সমতল স্থানে দর্শকদের মাঝে লা ি পরে, সাধারণতঃ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির পিছনে গিয়ে লুকায়, তাকে চুমু খায় এবং বাহু দিয়ে তার গলা জড়িে রাখে। এতক্ষণ পুরুষটি তার স্ত্রীকে দারুণভাবে খুঁজে এবং শেষে তাকে দেখতে পায় অন্যের গলা জড়িয়ে ধরে আছে এ শেষে তাকে দেখতে পায় অন্যের গলা জড়ায়ে ধরে আছে এবং বকশিস গ্রহণ করছে।”

সেখানে প্রায় অগণিত উদাহরণ আছে। উন্নত কৃষ্টির আমেরিকা, গুয়েতেমালা এবং পুরান ম্যাক্সিকো প্রাচীন সাজসজ্জা ব করে আসছে, যেখানে নাচ এবং গান “নারী ধারায়” উৎসবের অংশ, এমনকি পুরান চীন অথবা ইউরোপে এর ব্যার ঘটেনি।

প্রাচীন গ্রীসে এটা সবাই জানতো পরবর্তীতে স্পেন ৫৭২ খৃষ্টাব্দে পরিষদের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রাগৈতিহাসিক সাজসজ্জা সংরক্ষণ করে আসছে; ম্যালোরকা দ্বীপের লোকনাচ এস কসিয়ারস্ পর্তুগালের ফলিয়াস ইংল্যান্ডের মরিসভাঙ্গে এবং সমস্ত মহাদেশ জুড়ে ভ্রাম্যমান আনন্দমেলার হর্ষ উল্লাসে প্রাচীন সাজসজ্জা উপস্থিত।

মুখোশধারী নাচে যে পুরুষ নারীর পোষাক পরে এবং নারীদের ভূমিকায় যে সকল পুরুষ পূর্ব-এশিয়ার থিয়েটারে, শ্যামদেশে এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইউরোপে অংশগ্রহণ করে তাদের (প্লেট-১৪) মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিরাজমান। পক্ষান্তরে নারীরা পুরুষের সাজসজ্জায় খুব কমই নাচে।

আবার পৃথিবীর সকল অংশের উদাহরণ দেওয়া যায়-ম্যনডান ইন্ডিয়ান, ব্লাকফুট ইন্ডিয়ানস, বর্ণিওর ক্লেমেনটান (ফসল কাটা উৎসব) নিউগিনির সিসিয়ানু নারীদের, যারা পরচুলা ও উরস্ত্রান এবং মুখমন্ডল কালো রং করে হঠাৎ ঝোঁপ ঝাড় থেকে বের হয়ে পুরুষদের উপর লেবুর ঢিল ছুড়ে।

আমরা যদি এই মূলশিল্প উপাদানের অর্থ বুঝি তবে অবশ্যই আমাদেরকে শুধুমাত্র নাচে সীমাবদ্ধ রাখব না। আমাদের উচিত হবে এ সম্পর্কিত পরবর্তী চিন্তাধারা পরীক্ষা করা এবং সাজসজ্জা যেটা নাচের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত না উদাহরণ স্বরূপ; ডেনমার্কের নতুন বিবাহিত যুগলের ছদ্মবেশ অথবা সাইলেশিয়ায় প্রথামত বরের সামনে সত্যিকার কনেকে গোয়াল- ঘর থেকে আনার পূর্বে একজন বৃদ্ধাকে আনা এবং আরো আরগীভ কনের কৃত্রিম দাড়ি, সাইপ্রাসের শ্মশ্রুমন্ডিত কামদেবী, সিথিয়ানদের কামাতুর আর্টেমিস এবং আরো অনেক আছে।

রোমের শনি-দেবতার বাৎসরিক মহোৎসব এবং পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আনন্দমেলা কখন ভোলা যাবে না। শ্বেতনীলের পাড়ে নুবা, আলতাই তার্ক এবং গ্রীসে নারী নাচুয়ে পুরুষের মত পোষাক পরে এমনকি বড় কৃত্রিম লিঙ্গ বানায়ে নাচে। জে, ডাব্লউ হ্যয়র এই আশ্চর্যজনক বস্তুর ব্যাখ্যা দেন যে, সংকটময় সময়ে অপদেবতার ছলাকলার প্রতি গভীর শৈথিল্য দেখান অথবা অতি-প্রাকৃতিক শক্তিরপ্রভাবে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন।

এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট না, দুর্বোধ্য প্রথার বিভিন্ন প্রকারের অনেক শিকড় আছে। সবচেয়ে ভাসাভাসা যেটা হল অতিভৌতিক-নাচ এবং ধর্মীয় আচার সংশ্লিষ্ট থেকে নারীদের সাধারণতঃ বাইরে রাখা হয়। আমাদের অবশ্যই মূল কারণ দেখতে হবে, বিশেষ করে উভয়ের মধ্যে এক লিঙ্গের লোক ইচ্ছা করে নিজেকে দূরে রাখে।

শস্য উৎপাদন অথবা বিয়ের পূর্বে উর্ধমুখি ও প্রচন্ড উন্মত্ততায় যৌন আবেদনকে মনে করা হয় উর্বরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যথায় এটার কাজ শুধুমাত্র শক্তিবৰ্দ্ধন। সাইবেরিয়ার করইয়াকদের মধ্যে যে সমস্ত পুরোহিত নারীদের পোষাক পরে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বলে গণ্য করা হয়।

এটা সম্ভবতঃ সেই ধারণা থেকে এসেছে যার থেকে নাচুয়েগণ মেয়েদের কুচবন্ধন ব্যবহারে উৎসাহী হয়। যখন আমরা লোকের কাছ থেকে উদাহরণ নিব এমনকি মেলেনেশিয়ার একটা অংশে বসবাসকারী ব্যাস্কদ্বীপের এবং প্রাচীন গ্রীসের, আমরা বিশ্বাস করতে পারব এই ধারণা বা চিন্তাধারা কত ব্যাপক ভাবে ব্যপ্তিলাভ করেছে।

বার্লিনের প্রাচীনত্ব সংগ্রহ থেকে এ্যটিক বৈশিষ্ট্যের ক্যাপুয়ান পাত্রে কালো আকৃতির শ্মশ্রুমন্ডিত নাচুয়ে গ্রীক নমুনা আমি শ্রদ্ধা করি (প্লেট-১১)। যার জন্য লাম্পট্যপূর্ণ, দৈহিক নিঃসরণের প্রতীক পাইপ। উর্বরা যাদুমন্ত্রকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করার জন্য মূলশিল্প উপাদানে বড়- প্রজাপতি নৈতিক অধঃপতনের প্রতীক রূপে সংযোজন করা হত। সাম্প্রতিক ইডা লুবলিন্সকী এই ধারণা বিশ্বাসযোগ্য করেছেন যে, উভয় লিঙ্গত্ব মিলিত শক্তি এই রকম সব মাতৃত্বে গুণ যা বিপরীতি লিঙ্গ ছাড়া বংশবিস্তার করতে পারে।

প্রারম্ভিক ছদ্মবেশ ধারণ স্পষ্টতই পূর্ববর্তী আলোচনার বাইরে। নিলোটিক নন্দীদের মধ্যে যে সমস্ত ছেলেদের খত্না দেয়া হবে তারা মহিলাদের পোষাক পরে নাচে এবং মেয়েরা ছেলেদের বা যোদ্ধার সাজসজ্জা করে। নিঃসন্দেহ এটার মূল-চিন্তা হল, নারী সেজে এবং পুরুষ সেজে পূর্বজীবনের প্রত্যন্তে পৌঁছা, যে জীবন মুছে ফেলত এই ভাবে সেটাকে তীব্র করা হয় মূল্ভাব ও ধরন।

যুগল-নাচের জরীপে আনন্দঘন স্বচ্ছ চিত্র উপস্থাপন করে দক্ষিণ-সাগর অঞ্চলে উভয় লিঙ্গের যুগল-নাচ, দেখা যায় সেখানে এবং স্বীয় বৈশিষ্ট্যে পরিব্যাপ্ত উত্তর-পশ্চিম ব্রাজিল এবং আমেরিকার উন্নত কৃষ্টি, তারা হয়তবা বাদ্যযন্ত্রের স্তরের বারো দলভুক্ত হতে পারে যেটাকে আমি “পশ্চিম আফ্রিকান ইন্দোনেশিয়ান” নাম দিয়েছি। “অধিকাংশ বাদ্যযন্ত্র (এই স্তরের)।

 

মূল্ভাব ও ধরন এর উর্বরা নাচ

 

পরবর্তী কৃষিজীবি কৃষ্টির চিন্তাচেতনার সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্ক যুক্ত”। এই স্তরটি মধ্য এবং উচ্চ কৃষ্টির প্রান্তসীমায় অবস্থিত এবং বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় গ্রামীন কৃষ্টির সঙ্গে। বিয়ের নাচ শুধুমাত্র যৌন আবেদনের প্রয়োগ। বোজান জেলার বিশেষ করে টুডেছেচিনাতে সুন্দর কনেকে বর খোশামোদ করে কিন্তু কখন জোর করে ধরে না।

একক মূলশিল্প উপাদানে যেমন বরের সূত্রপাত এবং বধু জোর পূর্বক হরণে শুধুমাত্র কদাচিৎ বাধা দেওয়া হয়। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের স্টল্যান্ডারদের মধ্যে প্রথমে এটা বিরাজ করত, বর গাছের ডালে উঠে সেখানে থেকে মহিলাদের গোপন নাচ প্রত্যক্ষ দ্বৈত নাচ করে-শুধুমাত্র পুরুষকে এইরূপ করতে অনুমতি দেয়া হয়।

জোর পূর্বক অপহরণ পুরান স্ক্যানডিনেভিয়ানদের এডেনসিনগেনের (নেচে নেচে চলে যাওয়া) মূলশিল্প উপাদানের ভিত্তি  পুরুষ এবং মেয়েরা নারীদের সঙ্গে কনের জন্য তর্ক-বিতর্ক করতে চেষ্টা করে ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment