আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ভরতনাট্যম থাঙ্কমণি কুট্টি , যা ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
ভরতনাট্যম থাঙ্কমণি কুট্টি
ভরতনাট্যম সর্বাপেক্ষা লালিত্যযুক্ত, উচ্চমার্গীয় এবং লাবণ্যমণ্ডিত নৃত্যধারা হিসেবে পৃথিবীর শিল্পজগতে বিশিষ্ট স্থান লাভ করেছে। নটীর করপল্লবে পুষ্প বিকশিত হয় এবং অঙ্গুলির আন্দোলনে পাখি উড়ে যায় । অঙ্গবিক্ষেপ হয় আত্মপ্রত্যয় এবং ভক্তিআপ্পুতির সঙ্গে।
মুখমণ্ডলের সমস্ত পেশী বিকশিত হয় দৃষ্টি নিক্ষেপের সঙ্গে লজ্জা ও উপেক্ষা, ভ্রুবিক্ষেপে ভয় এবং সন্দেহপূর্ণ মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তিতে একই নিঃশ্বাসের মধ্যে বিভিন্নধর্মী ভাব-অনুভাব প্রকাশিত হয়, যেমন নৃত্যে বা নাট্যে বিভিন্ন কবিতা বা সংগীতের সুক্ষ্ম আবেগগুলো শরীর বাহন হিসাবে প্রকাশ করে।
ভারতনাট্যম একটি স্বকীয় ধারা এবং অলৌকিক ব্যাপার এই যে, এই নৃত্যধারা প্রায় ৩০০০ বছর ধরে আমাদের দেশে সুষ্ঠুভাবে অধিষ্ঠিত। অতএব ভরতনাট্যম আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারের গৌরবান্বিত সম্পাদনা। ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্র ভারতবর্ষে পুস্তকাকারে প্রথম পাওয়া যে শাস্ত্র তা ‘নাট্যশাস্ত্র’।
নাট্যকলার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ও এর মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং বিশদভাবে প্রতিপাদিত হয়েছে। পৃথিবীর জীবনচক্রের অনুকরণই হলো নাট্যশাস্ত্র। যখন নাট্য হলো পৃথিবীর চক্রেরই এক প্রতিরূপ তখন জাগতিক সমস্ত বিষয়ই নাট্যশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যায় না।
সংগীত, সাহিত্য, নৃত্য, অভিনয়, শিল্প ইত্যাদি ললিতকলার সমস্ত বিষয়ই এই নাট্যশাস্ত্রে পাওয়া যায় । নাট্যোৎপত্তি, নাট্যমণ্ডপ নির্মাণ, রঙ্গপূজা ইত্যাদি প্রথম তিনটি অধ্যায়ে, চতুর্থে নৃত্তভেদ এবং পঞ্চমে পূর্বরঙ্গ বিধি, ষষ্ঠ এবং সপ্তম অধ্যায়ে রস ও ভাব,
সপ্তম থেকে পঞ্চদশ পর্যন্ত আঙ্গিক অভিনয়, ষোড়শ থেকে ত্রিবিংশতি অধ্যায় পর্যন্ত বাচিক ও আহার্য অভিনয় এবং পরবর্তী আরও চারটি অধ্যায়ে অভিনয় সম্বন্ধে আরও বিশেষ বর্ণনা যুক্ত হয়েছে। গীত-বাদ্য সম্বন্ধে বর্ণনা আছে ২৮তম থেকে ৩৩তম অধ্যায় নিয়ে।
৩৪তম ৩৬তম অধ্যায়ে কথা, পাত্র প্রকৃতিভেদ, বেশভূষণের জানার সম্বন্ধে এবং নাট্যবিদ্যা প্রচার সম্বন্ধে ব্যাখ্যা আছে। প্রথম অধ্যায়ের বিষয় হচ্ছে নাট্যবেদ ও নাট্যপ্রয়োগের উদ্ভব। ত্রেতাযুগের আরম্ভে সমস্ত দেবতা এবং দেবরাজ ইন্দ্র ব্রহ্মার কাছে গিয়ে অনুরোধ করলেন চারটি বেদ- ঋক, যজুঃ সাম ও অথর্ব : এর প্রয়োজন মানুষের কাছে কমে গেছে।
দেখেশুনে আনন্দ করার জন্য নতুন আর একটি বেদ সৃষ্টি করতে হবে। এই অনুসারে চারটে বেদ ঋক, যজুঃ সাম ও অথর্ব থেকে যথাক্রমে শব্দ, ভাব, গান ও নাট্য নিয়ে ব্রহ্মা পঞ্চমবেদ সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দিলেন। ইন্দ্রকে বললেন দেবতাদের নিয়ে অভিনয় করতে, ইন্দ্র বললেন,দেবতারা এই কঠিন কাজ পারবে না,
মহর্ষি যারা কঠোর পরিশ্রমী ও বেদজ্ঞ তারা এই কাজ পারবেন। তখন ব্রহ্মা ভরতমুনিকে ডেকে ওনার ছেলেদের নিয়ে পঞ্চম বেদের প্রয়োগ করতে বললেন। তখন ভরতমুনি ছেলেদের এই পঞ্চমবেদ শেখালেন। ভরত তার ছেলেদের ভারতী, সাত্ত্বতী ও আরভটী বৃত্তিকে অবলম্বন করে নাট্যপ্রয়োগ করে ব্রহ্মার সামনে দেখালেন।
ভারতী বচন বা কথা সাত্ত্বতী রস-ভাব, আরভটী- দৌড়ান, যুদ্ধ, লাফান এই প্রধান। এই দেখে ব্রহ্মা বললেন এর সঙ্গে কৈশিকীবৃত্তি যোগ কর। (কৈশিকী বৃত্তি-অলঙ্কারভঙ্গি, অঙ্গচালনার সুকুমার ভাব এবং শৃঙ্গার রস প্রধান)। ভরতমুনির কাছে উপযুক্ত মেয়েরাও ছিল না এবং গীত বাদ্য ব্যাপারটাও জানা ছিল না।
ব্রহ্মা তখন সুকেশী মঞ্জুকেশী ইত্যাদি ২৪টি অপ্সরা তৈরি করলেন এবং বাদ্যের জন্য স্বাতী মহর্ষি ও গানের জন্য মহর্ষি নারদ ও অন্যান্য গন্ধর্বদের নিয়োগ করলেন, তখন ভরতমুনি কৈশিকী বৃত্তি যুক্ত করলেন এবং ইন্দ্ৰধ্বজ প্রথম অনুষ্ঠিত করলেন।
যখন দেবরাজ্যে দেবরাজের সামনে এই অনুষ্ঠানটি সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হলো তখন দৈত্যরা ক্ষেপে গেল, কারণ গল্পটা ছিল দেবতাদের হাতে দৈত্যদের পরাজয়। তখন ব্ৰহ্মা তাদের এই বলে শান্ত করলেন যে এই নাট্যবেদ শুধু দেব-দানবের জন্য নয়, এ সমস্ত লোকের জন্য।
সমগ্র জীবলোকের অনুভূতির প্রকাশ এই নাট্যবেদে আছে। ধর্ম, অর্থ, কাম, কেলি, বিষয়, খুদ্ধ, বধ সব এর মধ্যে আছে। সব লোক এই নাট্যবেদ থেকে বিজ্ঞান, বিনোদ, আশ্বাস- শান্তি পেতে পারে।
এভাবে ব্রহ্মা অসূরদের আশ্বাস দিয়ে বিশ্বকর্মাকে ডেকে নাট্যগৃহ বা কুত্তমবলম তৈরি করতে বললেন এবং সব দেবতাদের রঙ্গপূজা পদ্ধতি বুঝিয়ে দিয়ে ভরতমুনিকে ডেকে রঙ্গপূজা করতে বললেন।
অনুষ্ঠানের আগে সমস্ত বাধা দূর করার জন্য নাট্যগৃহে বা কুত্তম্বলমে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, ইন্দ্রাদি দিকপালকদের এবং ইতর দেবতাদের, অসুর, দেব, যক্ষ, রাক্ষস, গন্ধর্বাদি সেই সমস্ত দেবতাদের জন্য সবিস্তারে পূজাবিধি, বিশেষ মন্ত্র, যজ্ঞ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা আছে। এই পূজার পরে বিশ্বকর্মা নির্মিত নাট্যগৃহে অমৃতমন্থন গল্প অভিনীত হলো।
অসুর, দেবতা উভয়ই পাত্রপাত্রী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিল। তারপর ব্রহ্মার অনুরোধে দ্বিতীয় গল্প ‘ত্রিপুরাদহন’ হিমালয়ে গিয়ে পরমেশ্বরের সমক্ষে অনুষ্ঠিত হলো। সেই দেখে পরমেশ্বর, ভূতগণ এবং পার্বতী খুব খুশি হলেন, পরমেশ্বর ব্রহ্মাকে বললেন, আপনার সৃষ্ট এই পঞ্চমবেদ খুব ভালো, এর মধ্যে আমারও কিছু সংযোজন করতে ইচ্ছে করছে।
তখন ব্ৰহ্মা অনুরোধ করলেন দয়া করে আপনি শিখিয়ে দিন। তখন শিবভক্ত তত্ত্বকে নির্দেশ করলেন- পৌরুষভঙ্গির নৃত্য প্রদর্শন করার জন্য এর থেকেই তাণ্ডবনৃত্যের উদ্ভব এই ধারণা সমধিক প্রচলিত। এসব দেখে পার্বতী অপেক্ষা করছিলেন তার লাস্য প্রধান নৃত্য প্রদর্শন করার জন্য। লাস্য নৃত্যের উদ্ভবও এই থেকে, এই ধারণা প্রচলিত।
স্বর্গে উদ্ভুত নৃত্য মর্ত্যে কিভাবে প্রচলিত হলো তাও ভরতমুনি ব্যাখ্যা করে গেছেন। নাট্যপ্রয়োগে নিপুণ ভরত পুত্ররা কালক্রমে অহঙ্কারি হয়ে শাস্ত্রকে উপেক্ষা করতে শুরু করেন এবং মহর্ষিদের সামনে বিকৃত অশ্লীল ভঙ্গি করে তাদের নৃত্য প্রদর্শন করতে থাকেন। তখন মহর্ষিরা ক্রুদ্ধ হয়ে ভরত পুত্রদের শাপ দিলেন ‘তোমরা শূদ্রাচারী হও’।
ভরতপুত্ররা বললেন ‘এই নাচ শিখেছি বলে আমাদের অধঃপতন হলো, এর থেকে আমাদের মুক্তি চাই। ভরতমুনি বললেন, ‘ব্রহ্মা নির্মিত নাট্যবিদ্যার বিনাশ হতে নেই। তোমরা অপ্সরাদের এবং অন্যদেরও শেখাতে শুরু কর, তাহলে তোমাদের প্রায়শ্চিত্ত হবে।’ এভাবে চলাকালীন নহুশ নামে এক রাজা নিজের ন্যায়বুদ্ধির জোরে স্বর্গে স্থান লাভ করেন।
স্বর্গের অপ্সরাদের নাট্যাভিনয়, নৃত্য-গীত-বাদ্য দেখে এবং নাট্যবেদের বিকাশ দেখে রাজা দেবতাদের কাছে এই স্বর্গের শিল্পীদের মর্ত্যের রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। দেবতারা বললেন, ‘অপ্সরাদের মনুষ্যলোকে যাওয়া ভালো না, এদের আচার্য ভরতমুনি আপনাদের আগ্রহ পূরণ করবেন।

নহুশ রাজা ভরতমুনির কাছে গিয়ে তার ইস্পিত আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন। তখন ভরতমুনি তার পুত্রদের ডেকে রাজার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে বললেন এবং বললেন এই কাজ করলে তাদের পাপমুক্তি হবে। তদনুসারে ভরতপুত্ররা মর্ত্যে নাট্যপ্রচার করলেন। মর্ত্যে তাদের সন্তানসম্ভূতি হলো এবং নাচ শেখানোর ফলে তারাও শাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে গেলেন।
ভরতমুনির মতে এদের মধ্যে কোহল, শাণ্ডিল্য, দত্তিল, বাৎস্য এই নামে নাকি এরা নাট্যশাস্ত্র মর্তে প্রচার করেন। যেহেতু নাট্যশাস্ত্র দেবতাদের কাছ থেকে পাওয়া তাই প্রচলিত ধারণা এই যে, দেব অধিষ্ঠিত মন্দিরগুলোতে এই নৃত্যধারা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
এই ব্যাপক চর্চার ফলেই ভারতীয় মন্দির বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের বা স্তম্ভের গাত্রে নাট্য নৃত্যের শৈলী, ভাস্কর্য প্রাচীন শিল্পীরা খোদাই করে গেছেন। ভারতমুনির নাট্যশাস্ত্রকে আধার করে তামিলনাডুতে যে শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী প্রচলিত তার নাম ভরতনাট্যম।
প্রাচীনকালে দেবতার প্রীতি উদ্দেশ্যে মহিলারা মন্দিরাঙ্গণের নাট্যশালায় এই নৃত্য বা নাট্য প্রদর্শন করতেন। যারা দেবমন্দিরে নৃত্যানুষ্ঠানের জন্য নিযুক্ত ছিলেন তাদের দেবদাসী এবং তাদের নৃত্যরূপকে দাসী আট্টাম (আট্টাম অর্থাৎ নৃত্য) বলা হতো। পরবর্তীকালে শাস্ত্রীয় বিন্যাসকে অলঙ্কৃত করে এই নৃত্যকলার উন্নতিকরণ হয়েছে।
তখনই ভরতনাট্যম নামে পরিচিত অর্জন করেছে। এই নামকরণের সম্পর্কে আধুনিককালের মতো ভাব, রাগ এবং তাল এই তিনটি কাজের আদক্ষর নিয়ে সম্মিলিতভাবে ‘ভরত’ নাম এসেছে বা আদি নাট্যচার্য ভরতমুনির নামাঙ্কিত নৃত্যরূপ এমন দুটি ভিন্নমত বর্তমানে প্রচলিত ৷ প্রথম স্মরণীয় আছেন তাঞ্জোর ভ্রাতারা।
পুন্নাইয়া, চিন্নাইয়া, ওয়াড়িভেলু ও শিবানন্দম । এরা ছিলেন সহোদর ভ্রাতা। ভরতনাট্যমের আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির একটি নতুন রূপ দিয়েছেন এরা। বর্তমানে প্রচলিত ভরতনাট্যমের নাম বেশ কিছু বছর আগেও লেকে কুড়ীয়াউম, যক্ষগান, ভগবৎ মেলা, কুরভঞ্জী (নৃত্যনাট্যরূপে সাদির, আডল, কুত্ত, চিন্নমেলম একক নৃত্য রূপেও প্রচলিত ছিল।
তাঞ্জোর ভ্রাতাদের অনুবর্তীরা পন্দানেল্লুর মিনাক্ষীসুন্দরম পিল্লাই, মুতুকুমারণ পিল্লাই, চোক্কলিঙ্গম পিল্লাই- এরাও ভরতনাট্যমের অনেক উন্নতি সাধন করেছেন । বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে শিল্পকলার অধঃপতন ঘটেছিল। তখন ভরতনাট্যমকে সুষ্ঠু সুচারুরূপে জনতার মধ্যে সম্প্রসারিত করেছেন যারা তাদের মধ্যে কৃষ্ণ আয়ার এবং রুক্ষিনীদেবী অরুন্ডেলের নাম উল্লেখ্য।
বর্তমান ভরতনাট্যম নৃত্যধারার অনুক্রমণিকা তাঞ্জোর ভ্রাতাদের মূল অবদারে ফলে। আজকালের শিল্পীরা একঘেয়েমি কাটানোর জন্য চারিভ্রাতা কর্তৃক প্রবর্তিত অনুক্রমণিকা অনুসরণ করলেও একটু অদল বদল করে নৃত্যানুষ্ঠান করে থাকেন। চারিভ্রাতা প্রবর্তিত অনুক্রমণিকা যথাক্রমে –
১. মেলাপ্রাপ্তি,
২. আলারিপু,
৩. যতিস্বরম,
৪. শব্দম,
৫. বর্ণম,
৬. পদম.
৭. তিল্লানা,
৮. শ্লোকম
এছাড়াও আজকাল অনুক্রমণিকাতে সংযোজিত কবিথুম তোডয়ম তোডয়মঙ্গলম, কীর্তনম গীতম জাভলী, আবার গীতগোবিন্দ থেকেও নেওয়া হয় যেমন দশবতার ইত্যাদির, অবশ্য এগুলো কোনোটিই নতুন নয়, প্রাচীনকালে হতো। মধ্যে এগুলোর প্রচলন কমে গেছিল, আবার বর্তমানে হচ্ছে। আসলে কোনো শিল্পই স্থাবর নয়, গতিশীলতাই এর ধর্ম তাই সংযোজন বিয়োজন রয়েছেই।
১. মেলাপ্রাপ্তি— সংগীতশিল্পী, বাদ্যযন্ত্রশিল্পী এবং নৃত্যশিল্পী সবাই দেবতার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানটি সম্পাদনা করেন।
২. আলারিপু- আলারিপু ভরতনাট্যম অনুষ্ঠানের প্রথম নৃত্য, আলারিপু শব্দের অর্থ পুস্পিত বা প্রস্ফুট হওয়া। এই পর্যায়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বিশুদ্ধ নৃত্যের জন্যদেহ ভঙ্গির সুষম সৌন্দর্য পুষ্পিত ও প্রস্ফুটিত করা হয়।
এটি বন্দনাসূচক অনুষ্ঠান। নৃত্যের মাধ্যমে শিল্পী দেবতাদের রঙ্গ দেবতা, গুরু, দর্শক, সংগীত শিল্পী প্রভৃতি সকলের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। আলারিপু নাচের মৃদুঙ্গের বোল একটি নির্দিষ্ট রাগে গাওয়া হয়। যেমন— রাগ হংসধ্বনি, তাল- রূপক। তৎ তেই তেই/তৎ তাম কিটতাক । চিন্নাইয়া পুন্নাইয়া রচিত
৩. যতিস্বরম- যতিস্বরমের রচনা বিশুদ্ধ নৃত্যের ওপর ভিত্তি করে। বিভিন্ন প্রকার আঢাউ (steps) সম্মিলনে যতি (Jathi) তৈরি হয়। একটি নির্দিষ্ট রাগের স্বরমালিকার সঙ্গে যতি মিশ্রিত করে এই নৃত্য প্রদর্শিত হয়।
তাই এর নাম যতিস্বরম (যতি+সরগম) এর সংগীতে বিভাগটি হলো- পল্লবী, অনুপল্লবী ও চরণম যেমন উত্তর ভারতীয় পদ্ধতিতে স্থায়ী, অন্তরা ইত্যাদি । উদাহরণ যেমন কল্যাণী রাগে এবং তিশ্র চাপ তালে-চিন্নাইয়া পুন্নাইয়া রচিত
সা নি ধপ
ধপ গরে নিরে
সা -নি রেগ
মগ মপ ধনি
তাতেরেকেটেতাত্তাধি/মিতিতাকাতালঙ্গ/কুতাকাতাদিগিনাতোম
তাক্কুতাকুতাঝম/ -তা/ তাকুনতাবিকিটিতাকা
তারিকিটাতাকাঝম/ -তেই/তাকুনতিরিকিটিতাকা
তাক্বাধিঝমধি/ তা-তাতাকদি/ ঝমধিৎ তেই
তাক্বাধিঝমতাতা/ গদিঝম-ঝনা/ কুক্কুনতারিকিটতাকা
ধিত্তা/ তাধিত্তাতাকা/ দিকুকিটতাকাতেরেকেটে
তোম ধিত্তা/ তাধিত্তাতাকা/ দিকুকিটতাকাতেরে কোটতোম
ধিত্তা/ তাকিধিত্তাতাকা/ দিকুকিটতাকাতেরেকেটে তোম
৪. শব্দম-পূর্ববর্তী দুটি নৃত্যে অভিনয়ের কোন স্থান নেই শুধু বিশুদ্ধ নৃত্ত । শব্দম দ্বারা তাই প্রথম অভিনয় প্রদর্শিত হয়। এর মূলভাব প্রধানত ভক্তিলক অথবা রাজাদের মহত্ব বর্ণনা করে রচিত হয়। এখানে স্বাতী তিরুনার রচিত রাগ মালিকা এবং মিশ্রচাপ তালে একটি ছোট শব্দম উদাহরণ হিসেবে দিচ্ছি । মিশ্রচাপ তাল ব্যবহৃত হয়।
[অর্থ-কৃষ্ণের উপর আধারিত পল্লবীতে এই বোঝানো হচ্ছে যে-গোপস্ত্রীদের স্নানের সময় তাদের কাপড় লুকিয়ে রাখা এই কি তোমার ধর্ম? হে কৃষ্ণ। শব্দম শুরু হবে একটি ছোট যতি দিয়ে। যতির রোল শব্দমের গানের রাগের ওপর ভিত্তি করেই গাওয়া হয়।
মাঝে মাঝে সাহিত্যের প্রথম দ্বিতীয় ইত্যাদি অংশের পরে ছোট ছোট ললিত যদি থাকে এবং শব্দম শেষও হয় ছোট যতি এবং তিরমানম দিয়ে। যেমন প্রারম্ভিক যতি-
১ ২ ৩ ১২ ১২
– তা – ইয়া তেই
তৎ – তা তাS মS
বর্ণা : শব্দমের পরে আসে বর্ণম। ভরতনাট্যমের অনুক্রমণিকায় নৃত্য প্রধান বর্ণমের একটি শিষ্ট স্থান আছে। এখানে গীত-বাদ্য ও নৃত্য তিনটের স্বকীয়ভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দেখার শেষ সুযোগ আছে। কর্ণাটকী সংগীতের বর্ণমে রাগ এবং সরগমই প্রধান এবং মূলভাব ভক্তি, কে বলা হয় তনবর্ণম।
সাধারণত নৃত্যের ক্ষেত্রে সাহিত্য প্রধান পদবর্ণম করা হয়। বর্ণমে।তি, স্বর, সাহিত্য (পদম) বিশেষভাবে উপভোগ্য। উদাহরণ-তাঞ্জোর ভ্রাতা কর্তৃক সৃষ্ট একটিসুন্দর বর্ণম ভৈরবরাগে এবং রুপক তালে ‘মোহমানা বর্ণম’– এই বর্ণমাটি তামিলনাড়ুর তিরুারুর নামে একটি জায়গার মন্দিরের প্রতিষ্ঠিত অ্যাগেশন দেবতার ওপর রচিত। পল্লবী :
উরউক্ত গানের অর্থ : য নায়িকা নায়ককে কাছে চাইছে তখন নায়ক উদাসীনভাব প্রদর্শন করছেন। এইরূপে নটী ও চরণ বিশেষভাবে অলংকৃত করে বিশ্লেষণাত্মকভাবে বর্ণনা ব্যঞ্জনায় প্রদর্শিত করে থাকে বী ও অনুপল্লবী অংশে।
পরবর্তী পর্যায়ে অতিসুন্দর স্বরের ও সাহিত্যের মাধ্যমে চিতস্বরম প্রদর্শিত হয়ে থাকে, এই অংশে অতীত জীবনের অনুরাগের কথা স্মরণ করে নটী হভাব বা আনন্দভাব বিন্যাস করে প্রদর্শন করে। চিতস্বরশের পরবর্তী পর্যায় চরণম। চরণমেসাহিত্য, সরগম ক্রমান্বয়ে ঘুরে ঘুরে আসে বং নায়িকার বিরহভাব ফুটিয়ে তোলার বিশেষ সুযোগ আছে।
নায়কের উপেক্ষা বা উদাসীনতা নায়িকাকে প্রতি মুহূর্তে পীড়া দেয় এবং নায়িকার পার্থিব কোনো কিছুই ভালো লাগে। না, যেমন কোকিলের গান, মৃদু বাতাস ভালো লাগে না ইত্যাদি। এই বিশদ বর্ণনামূলক নৃত্যানুষ্ঠান বলেই একে বর্ণম বলা হয়। পদম : বর্ণমের পর অনুষ্ঠিত হয় পদম বা গীতম। পদম ভরতনাট্যমের মধ্যে অভিনয় প্রধান অংশ।
উদাহরণ পুরন্দর দাস রচিত একটি গানের প্রথম লাইন নিয়ে বিরণ করছি। ‘কৃষ্ণানি বেগানে বাড়ো’- এই গানটির মাধ্যমে যশোদার বালক শ্রীকৃষ্ণের বাললীলা দেখে উপভোগ করা এবং আনন্দানুভূতির সঙ্গে বাৎসল্যভাবের পূর্ণতা বিস্তার করে দেখানো হয়।
যেমন- কৃষ্ণকে আর করা, তার লীলাখেলা দেখে আনন্দ করা, তার দুষ্টুমি দেখে তাকে মৃদুভাবে শাসন করা, তার আশ্চর্য ক্ষমতায় বিস্মিত হওয়া ইত্যাদি। অভিনয় করে নটীর নিয়ে উপরে যত জ্ঞান থাকে ততো বিকাশ করে দেখানোর সুযোগ আছে। যমুনা কল্যাণী রাগে এবং মিশ্র চাপ্পু তালে (৭ মাত্রায়) নিবন্ধিত পদম গানের প্রথম পংক্তিটি :
তাল :
১২৩ ১ ২ ১ ২
— কৃ ষ্ণা নি
বে – – গা নে
– – বা ড়ো –
— – –
তিল্লানা : ভরতনাট্যমের পদমের পরে অনুষ্ঠিত হয় তিল্লানা। তিল্লা গান হিন্দুস্তানি সংগীতের তারাণার মতো, এটি নৃত্যপ্রধান অংশ, তবুও তিল্লানার শেষের দিকে কয়েক লাইন সাহিত্য থাকে, কারণ মাঝে মাঝে তিল্লানা দিয়ে নাচের অনুষ্ঠান শেষ করা হতো মন্দিরের মধ্যে, তখন সেই সাহিত্যটি ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে বা রাজপ্রসাদে হলে মহারাজের গুণগান করে শেষ করা হতো।
তিল্লানা যতি প্রধান ও তাল প্রধান এবং এতে পঞ্চলয়ের খেলা সুবিস্তৃতভাবে বিন্যস্ত থাকে । যেমন :
১ ২ ৩ = তা ক্কি টা
১ ২ ৩ ৪ = তা কা ধি মি
১ ২ ৩ ৪ ৫ = তা কা তা ক্কি টা
১২৩ ১২৩৪ = তাক্কিটা তা ক্কা ধি মি
১২৩৪ ১২ ১২৩ = তাকাধিমি তাকা তাক্কিটা
বিলম্বিত, মধ্যম ও দ্রুত লয়ে নটীর হাত পয়ের চলনের সামর্থ্য তিল্লানায় প্রদর্শিত হয় । উদাহরণে-শ্রীবাল মুরলীকৃষ্ণ রচিত-কথনাকুতূহলম রাগেও আদিতালে-
১ ২ ৩ ৪
নাতৃতাধিম -তানানা নোমতা তরদানি
৫ ৬ ৭ ৮
নাতৃর্ভূতোম -নাতৃত্ব তোমধি তিলিল্লানা
শ্লোকম : তাল রহিত, একক রাগে বা রাগমালিকাতে শ্লোকম নৃত্যাভিনয় নিবন্ধিত হয়৷ সাধারণত শ্লোকম সংস্কৃত ভাষাতেই হয়।
উদাহরণ-নটরাজের বা প্রকৃতি বর্ণিত নন্দিকেশ্বরের অভিনয় দর্পণে উল্লিখিত একটি শ্লোক-রাগ ধন্যাশী।
‘আঙ্গিকম ভূবনং যস্য = যার শরীর সর্বজগৎ
বাচিকম সর্ববাঙময়ম = যার কথা সমস্ত শব্দ
আহার্য্যং চন্দ্রতারাদি = যার বেশভূষণ
চন্দ্রতারা আদি ।
তম নুমঃ সাত্ত্বিকম শিবম = অন্তরভাবে যুক্ত
তাকে প্রণাম করি।
নাট্যারম্ভে বা নাট্যশেষে এই ধরনের শ্লোক বা শ্লোকাভিনয় ব্যবহৃত হয়।
মঞ্চে নটীর বেশভূষা সম্বন্ধে ধারণা :
ভরতনাট্যমের প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত প্রচলিত বেশভূষা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা-
১. শিরালঙ্কার-নিতম্বর নিচ পর্যন্ত একটি লম্বাবেণী এবং সুগন্ধি যুক্ত, ভারহীন, সাদা কমলা বা লাল ফুল (মুল্লাই বা বেলফুল, যুঁই, কণকাম্বর) শৈল্পিকভাবে সুসজ্জিত করা হয়। মাথার গহনা হিসাবে তলাইসামানম (head-set) ব্যবহৃত হয়। এতে থাকে ক. সূর্য, ২. চন্দ্র, ৩. মাথার পিছনে রাকুড়ি ৪. চুট্টি ইত্যাদি।
২. কর্ণাভরণ-নিচে থাকে কানের ফুল বা ডে, কুন্ডল (কডুকাডুক্কণ) এবং মাটাল ।
৩. নাকে-নতু (nathu) বা নথ, বুলাক বা বোলক, মুকুতি বা নাকচাবি ।
৪. গলাভরণ-আট্টিকেই বা (neckless), এবং লম্বা ব্বলীয়মালা বা সীতাহারের মতো ।
৫. কোমরে উডিয়ান বা কোমরবন্ধ ।
৬. হাতে বালা এবং ওয়ঙ্গি, আঙ্গুলের আংটি এবং হাতে মেহেন্দি দিয়ে হাতকে চর্চিত করা হতো।
৭.পয়ে গলসু বা পায়েল পরা হয়। পায়ের গলুসু ছাড়া তালরক্ষার জন্য কিঙ্কনী বা ঘুঙুর পরা হতো। আগে দড়িতে বাধা থাকত, আজকাল চামড়া বা কাপড়ে তৈরি পাওয়া যায়। এবং পায়েও মেহেদি চর্চিত করা হতো।
৮. বস্ত্রালঙ্কার- ক. ব্লাউজ। খ. নাচের ভঙ্গিকে সুন্দরভাবে দেখানোর জন্য সুচারুভাবে সিল্ক শাড়ি পরা হতো। সিল্কে জরি কাজ করা থাকত। আজকাল নানা রকম ডিজাইনে সেলাই করে তৈরি পোশাক ব্যবহার করা হয়।
৯. কপালে লাল তিলক ও তিলকের তলায় চন্দনের ছোট ফোঁটা, চোখে কাজল, এবং অধর রঞ্জিত করা হতো আগেকার দিনে পান খেয়ে, বর্তমানে lipstick এবং মুখমণ্ডলে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য হলুদ ইত্যাদি মাখা হতো, আজকাল ওইসব মিশ্রিত তৈরি প্রসাধনের জিনিস পাওয়া যায়।
নৃত্যে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র :
১. মৃদঙ্গ-কাষ্ঠনির্মিত এবং চামড়ার তালরক্ষ যন্ত্র ।
২. বাঁশী-বাঁশদ্বারা নির্মিত ।
৩. তানপুরা-সুররক্ষকযন্ত্র।
৪. বেহালা।
৫. মন্দিরা বা জালারা-পুরো সংগীত এবং নৃত্যকে পরিচালনা করেন গুরু ধাতু নির্মিত দুই খণ্ডক জালারা বা মন্দিরার সাহায্যে। এটিরও সুরের শ্রুতির সঙ্গে সমপর্দায় মিল থাকা চাই ।
৬. গান—চুড়ান্তভাবে নাচের সঙ্গে গান অনুপেক্ষণীয় এবং বিষয়জ্ঞানী ও সুস্বরের অধিকারী সংগীতশিল্পী নৃত্যকে সুচারুরূপে পরিবেশিত করতে সাহায্য করে।
নৃত্য আচরণ :
আস্যে না লম্ব এ গীতম = মুখদ্বারা গান করা হয়।
হস্তেনার্থম প্রদর্শয়েৎ = হস্ত অঙ্গুলি দিয়ে নৃত্যের অর্থ প্রকাশ হয় ।
চক্ষুভ্যাম দর্শয়েৎ ভাবম = চোখ দিয়ে ভাব প্রকাশ করে।
পাদাভ্যাম তালমআচরেৎ = পা দিয়ে তাল প্রদর্শন করে।
একজন পরিণত সুচারু ভরতনাট্যমের নটী হতে গেলে সাহিত্যের ও সংগীতের জ্ঞান এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবয়বের সঠিক সঞ্চালণ করতে পারার ক্ষমতার জন্য জ্ঞানী গুরুর তত্ত্বাবধানে ছয়- সাত বছর একাদিক্রমে ভরতনাট্যশাস্ত্র সমুদ্রে ডুবে থাকতে হবে।
নৃত্যে অঙ্গশুদ্ধির সম্পাদনের জন্য-শিরভেদ, দৃষ্টিভেদ, ক্রভেদ, অধরকর্মভেদ, গ্রীবাভেদ, হস্ত-মুদ্রাভেদ, স্থানকাভেদ (দাঁড়িয়ে বা বসে), ভ্রমরী, চারীভেদ, গতিভেদ, করণ (আডাউকে করণ বলে), অঙ্গহার, (যতিকে অঙ্গহার বলে) নবরসের স্থায়ীসঞ্চারীভেদ, ভাব, বিভাব, অনুভাব, অষ্টনায়িকা এবং নায়কভেদ ইত্যাদির পূর্ণ জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
নৃত্যের মূল আধার হলো তাল (rhythm), অড্যাউ (steps), স্থানক (position), মুদ্রা ( gesture of hands), চারী (movements of the legs) ইত্যাদি ।
ভরতনাট্যমের মূল দুটো ভাগ-নৃত্ত (বিশুদ্ধ তাল প্রধান mritta) ও নৃত্য (Nritya অভিনয়প্রধান)। এখন আমি নৃত্তের মূল বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা করছি। মূল আডাউ সংখ্যা চোদ্দটা এবং এর প্রত্যেক বিভাগের প্রকরণ ভেদ নিয়ে প্রায় ১০০র ওপরের আডাউ আছে। আডাউর বিভাগ-১. তট্টা (Tatta) আডাউ-পুরো পায়ের তলা দিয়ে মাটিতে আঘাত করা।
৮. তাধিনকিনাতোম (তিরমানাআডাউ)- হা ত
i) কি না তোম
ii) ধিন কিনা তোম
iii) তাধিনকিন তোম
iv) তাকাতাধিন কিনাতোম
v) তাকাধিকু তা ধিনকিনা তোম
vi) তাকাধিক্ তাকা তাধিনাকিনা তোম এইভবে আডাউর বিভাগগুলো চলে।
এভাবেই আডাউ ভঙ্গি অর্ধমণ্ডল (half sitting) অবস্থায় শুরু হয়। চোদ্দটি আডাউর বিভাগগুলো আদিতালে অনুসরণ করে বিলম্বিত, মধ্য ও দ্রুত এই তিনলয়ে করা হয়। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আডাউ করতে হলে তার চারটি লক্ষণ অনুসরণ করতে হবে-
যেমন— স্থানকা (standing starting and finishing posture) / নৃত্তহস্ত (hand gesture), চারি (movements of the legs), হস্তক্ষেত্র (area of the arms), যেমন উদাহরণ— স্থানকা—
১. সম্পাদ (দুপা এক সঙ্গে থাকা),
২. পার্শ্ব (দুপায়ের পাতা গোড়ালি সংযুক্তভাবে বিপরীত অভিমুখে থাকা)),
৩. আয়তা-অর্ধবসা অবস্থায় অর্ধমণ্ডল (half sitting),
৪. আলীঢ়া-আয়তা পা থেকে একটি পা লম্বা করে রাখা ইত্যাদি এইভাবে স্থানাকাগুলো হয়ে থাকে ।
মুদ্রা-মূলতঃ দুপ্রকার- অসংযুক্ত (single hand) ও সংযুক্ত (double hand) ছবিতে কিছু অসংযুক্ত (single hand) মুদ্রার উদাহরণ দেওয়া আছে।
চারি-সম্পাদ অবস্থা থেকে পদ চালনার শুরুই হলো চারি।
যেমন—চলন চারী বিষম সঞ্চার ইত্যাদি।
হস্তক্ষেত্র-হাতের অবস্থান। যেমন-অঞ্জলি মুদ্রা দিয়ে ঊর্ধ্বদিকে দেবতাকে প্রণাম করা কপালের সামনে গুরু ও বক্ষদেশের সামনে দর্শককে নমস্কার করা। এইভাবে আমাদের আডাউ লক্ষণগুলো মনে চলে এই একটি আডাউ সম্পূর্ণ হয় ।
পূর্বে যে ইতিহাসের কথা, শাস্ত্রের কথা বলেছি তা বর্তমানের বিজ্ঞানের যুগ, গ্রহণীয় নাও হতে পারে, কিন্তু একজন নৃত্যশিল্পীর পূর্ণাঙ্গ রূপে বিকাশ লাভ করতে হলে ইতিহাসের ধারা সঠিকরূপে জানতে হবে, অনুধাবন করতে হবে এবং ভারতীয় ধ্রুপদী সংস্কৃতির বিকাশের ধারা ও গতি প্রকৃতির রূপকে গভীরভাবে অধ্যায়ন করতে হবে।
কারণ একজন নৃত্যশিল্পী তার নৃত্যের মাধ্যমে অতীত বর্ণনা করেন, বর্তমান প্রদর্শন করে এবং ভব্যিষও নৃত্যের সাহায্যে নিরূপিত করতে পারে তাই কালের গতিপ্রকৃতি আমাদের সঠিকভাবে অনুধাবন করতেই হবে।
হে বিশ্বপিতা তুমি আমাদের পূর্ণ বিকশিত কর,
হে ভূমিমাতা তোমার স্নেহের ছায়ায় আমাদের লালিত কর।
হে পূর্ব দিকপতি আমাদের জ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত কর।
হে দক্ষিণ দিকপতি আমাদের জীবনপথ যেন তোমার অনুগামী হয়।
হে পশ্চিমাদিকপতি দীর্ঘ পথ পরিক্রমণের জন্য আমাদের উদ্দীপিত কর।
হে উত্তরদিকপতি, তোমার নির্মল বায়ুপ্রবাহে আমরা যেন শুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে উঠি।
আরও দেখুনঃ