নাচ ও ভূষণ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – নাচ ও ভূষণ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।

নাচ ও ভূষণ

 

নাচ ও ভূষণ

 

মিস্ক ইউরোপীয়ান তলোয়ার নাচকে জার্মানীর বুনট অলঙ্কারের সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটায়ে ও ঘনিষ্ঠ আধ্যাত্মিক জট খুলে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে তুলেছেন। তিনি বলেন অস্ত্র-নাচের মধ্যে প্রকাশিত অতি-কাল্পনিক, আদি-ভৌতিক মনোবৃত্তি অলঙ্কারের মধ্যে অবগুন্ঠিত থাকে। মিসকের ব্যাপার প্রামাণিত হয় নাই, যদিও তিনি ইউরোপের বাইরে নাচের সংমিশ্রিত রূপ কি হতে পারে এবং লড়াই সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না।

যদি এইরূপ সম্পর্কের অস্তিত্ব কিছু থেকেই থাকে তবে বুনন নাচ ও বুনট অলঙ্কারের মধ্যেকার এইরূপ সম্পর্ক অন্যকৃষ্টিতে অবশ্যই প্রদর্শিত হওয়া উচিত। আরো অনেক তদন্তে এই ব্যাপারকে সমর্থন করে না।

প্লাউ ও ক্যারোলাইন দ্বীপ পরিশীলিত আকৃতির অঙ্গ ভঙ্গির নাচের পীঠস্থান রূপে দেখা যায়- তারা তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের অলঙ্কারে ভূষিত করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাদামাটা সোজা লাইনে সাজান তাদের বুনন অথবা সংমিশ্রিত বুনট ধারা একেবারে আকৃতিগতভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের।

সত্যিকারভাবে যাযাবর যুগের জার্মানদের সঙ্গে দক্ষিণ সাগরের মাউরীদের বুনট অলঙ্কারের মিল আছে, তথাপি যতদুর জানা যায় মাউরীদের কোন রকমেরই আকৃতিগত দেহভঙ্গির নাচ নাই ।

ফ্রিটজ বোয়েম প্রথমেই প্রস্তাব রেখেছেন যেমন, নাচ ও অলঙ্কারের সঙ্গে সম্পর্কের আবশ্যকতা খুবই বিপথে নিয়ে যেতে পারে। উভয় আর্টের ধরন প্রায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়- অলঙ্কার অন্য যে কোন প্লাসটিক অথবা গ্রাফিক্স আর্টের ও অধিকঃ যেমন তারা জন্মায় নির্দিষ্ট তাড়নার গতিতে, তারা অবশ্যই তৎসংশ্লিষ্ট আকৃতিও প্রকাশ করে।

কিন্তু তারপরও প্রায়ই আমরা যা করি না, যা দেখি না, কি আমরা কামনা করি এবং কেন, এটা আবিস্কার করা কঠিন না। সর্বপ্রথম অলঙ্কার তৈরী করতে কারিগর বিভিন্ন কৌশলের এবং যে পদার্থ ব্যবহার করে তার উপর নির্ভরশীল হয়। বুননকারী, তাঁতী, কুমার অথবা যে কর্মী লাইনে আকৃতি দেয় তার দ্বারা ডিজাইন পরিবর্তিত হয়।

দ্বিতীয়তঃ এটা অবশ্য মনে রাখা উচিৎ বুনন, বয়ন এবং মৃৎপাত্র তৈরী সম্পূর্ণভাবে নারীদের পেশার বাইরে, যেমন আমরা দেখি নাচে তারা মৌলিকভাবে পুরুষের চেয়ে ভিন্ন আচরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তৃতীয়তঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, প্রশ্ন উঠতে পারে যে, অলঙ্কৃত ভূষণ এবং লোকজনের নাচ উন্নতি লাভ করতে বা বিভিন্ন সময়ে তা উত্তরণ ঘটাতে পারে কিনা।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

যদি এটাই ব্যাপার হয়ে থাকে, তবে সম্ভবতঃ যে কেউ এই লোকজনের স্বতঃস্ফূর্ত কর্মকান্ডের জীবন্ত স্বাক্ষী হতে পারে, তখন অন্যেরা স্বাভাবিকভাবে কোন ধরনের বাস্তব অন্তর্মুখী সম্বন্ধ ছাড়া বহন করে নিতে পারে। অথবা হয়ত কেউ পুরান ও লালিত আশা পোষণ করে পক্ষান্তরে অন্যজন পরবর্তীতে গৃহীত নতুন ঠিকানার স্বতঃস্ফূর্ত বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আত্মস্থ করতে পারে না। এই সকল পর্যাপ্ত বাস্তব ভিত্তির সঙ্গে খুবই সাবধানতায় সমস্যার দিকে অগ্রসর হওয়া যায়।

বিশেষ করে একটা ব্যাপার অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত অপরিবর্তনশীল আইন অনুসারে প্রত্যেক নতুন স্টাইল প্রথমে এটার বৈচিত্রময় গুণাবলীর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত আর্টের ফরমের উপর ছায়াপাত করে। একটা স্টাইল যেটা শান্ত, অকৃত্রিম ও স্থির গ্রীক ক্ল্যাসিকিজম ইটালীয়ান রেঁনেসার স্বাক্ষী বহনকারীর মত স্থাপত্য কলার সঙ্গে বিজয়সূচক অগ্রযাত্রা শুরু করে।

অন্যদিকে বেগবর্ধক অঙ্গ ভঙ্গির স্টাইল একটা প্রাণবস্ত (ডাইনামিক) স্টাইল, প্রথমেই এটার নিজের ঘোষণা দেয় উপযুক্ত আর্টের উদ্দেশ্যে যেটা হল গিয়ে নাচ । তথাপি এই পদ্ধতির মৌলিক পরিবর্তন পরবর্তী পাশ্চাত্য বিশ্বের ইতিহাসে কয়েক যুগের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে, প্রাগৈতিহাসিক শ্লথ ধারায় এটা হয়তবা কয়েক শতাব্দী অথবা সহস্রবৎসর ব্যাপী ঘটেছে।

সেইভাবে আমাদের ধারণা করা উচিত না অলঙ্কার এবং নাচ একসঙ্গে প্রদর্শিত হলেও প্রচন্ড গতিশীলতা নির্দেশ করে না। তারচেয়ে এটা আশা করা যেতে পারে যে, নতুন ঝোঁক বা প্রবণতা সাজসজ্জার চেয়ে নাচের মধ্যে আগেই তার অভিব্যক্তি দেখে ফেলতে পারে; সত্যিকারের এটাই হল ব্যাপার।

তীব্র আকৃতিগত নাচের অঙ্গ ভঙ্গি প্রধানতঃ সম্পূর্ণভাবে নিওলিথিক কালের অন্তর্ভুক্ত এবং তীব্র অঙ্গ ভঙ্গির অলঙ্কারসমূহ ধাতব যুগের ধরা হয়। তথাপি কেউ কদাচিৎ মৌলিক ব্যাপারে সচেতন হয়ে এই সকল সিদ্ধান্তসমূহ বিবেচনা করা প্রয়োজন মনে করতে পারে যে,সাজসজ্জায় সোজা লাইন গঠনশৈলী পুরাতন যখন নাচে বাঁকা লাইনের উন্নয়ন হয়েছে প্রথম ।

যাইহোক, আমরা বিশ্বাস করি অলঙ্কার ও নাচের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্কের অস্তিত্ব বিদ্যমান। মানুষের অনুভব, চিন্তা ও সৃষ্টি সমস্ত কিছুই কোন এক উৎস থেকে আসে এবং অবশ্যই কোন না কোন পথে সম্পর্কযুক্ত।

কিন্তু এখানেও সেই সমস্ত উপাদান কি, তারচেয়ে তারা কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং অলঙ্কার ও নাচের একক বিষয়-বস্তুর চেয়ে আমরা সামগ্রিকভাবে কম্পোজিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে ভাল করব। এইরূপ থিম (বিষয় বস্তু) নির্বিগ্নে এক পুরুষ থেকে অন্য পুরুষে বহমান থাকে, কিন্তু এটার আবেদন এবং প্রয়োগ ব্যক্তির পারফরমেন্সের উপর নির্ভলশীল এবং ব্যক্তির প্রতিভার বৈশিষ্ট্য উন্মোচিত করে ।

এইভাবে একক আকৃতি আলোচনার চেয়ে- দল, চক্র ও সর্পিল- বাহ্যিক পরিপূর্ণতা কেমন করে ঘটে তার সম্পূর্ণ চিত্রের কথাবলা ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হবে। প্রথম পর্যবেক্ষণে যে চিত্রের অগ্রভূমি আসে তা হল খুবই সংকীর্ণ বোধের কম্পোজিশনের মধ্যে সহজেই স্থানপূর্ণ করা এবং আঙ্গিক (জৈব উপায়ে) নির্মাণের মধ্যে বৈপরীত্য।

এটা প্রতিষ্ঠিত করা যায় যে, অস্ট্রেলিয়ানগণ একগুচ্ছ আঁকাবাঁকা (জিগজাক) রেখা গঠন পছন্দ করে অন্যদিকে মেলেনেশিয়ানগণ তাদের অধিকাংশ অলঙ্করণে উপরিভাগ সুষম সমান দুইভাগে খাড়া মধ্যরেখায় ভাগ করে; মাইক্রোনেশিয়ানগণ অলঙ্কারের ধার কারুকাজ এবং মধ্যভাগ উন্মুক্ত রাখতে পছন্দ করে যখন সামোয়ানগণকে সমান দূরত্বের ছককাটা সাজ জুতসই বলে ধরে নিতে দেখা যায় নিশ্চিতভাবে মেলেনেশিয়ানদের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কম্পোজ করা দ্রুত অঙ্গ ভঙ্গির সরল আকৃতির বিপরীতে দাঁড়াতে এটা একই সময় অন্তর্মুমী কঠিন উত্তেজনা ও উন্মত্ততার বহিপ্রকাশ ঘটায়।

সেখানে সামোয়ানদের সাজসজ্জা শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাউকে অবশ্যই প্রভাবিত করবে।যে কেউ এই বৈপরীত্য অনুধাবন করবে অবশ্যই তাতে একই ধরনের মেজাজ (মানসিক ও দৈহিক প্রবৃত্তি) দেখতে পাবে যেটা তাদের নাচ নির্দিষ্ট করে কঠোর সংযত এবং স্থির প্রকৃতির সামোয়ানদের বসা-নাচ এবং মেলেনেশিয়ানদের গতিশীল ও একই সময় জটিল গুণসম্পন্ন নাচ।

 

নাচ ও ভূষণ

 

তখন তিনিও অনুধাবন করবেন যে, অস্ট্রেলিয়ানদের অ-রচিত (কম্পোজহীন) আঁকাবাঁকা সারি এবং করোবরীদের কলাম বা দলবদ্ধ সারির মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান যা হাঁটুর সামনে পিছনে দোলানর মধ্যে পার্থিব জগতে গতি পায়। এই গুলির সাধারণত্ব থেকে কোন স্টাইলের ফলপ্রসু তুলনা অবশ্যই উদগত হওয়া উচিত।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment