দুর্বল খেচুনি নাচ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – দুর্বল খেচুনি নাচ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।

দুর্বল খেচুনি নাচ

 

দুর্বল খেচুনি নাচ

 

কোনটা প্রথম পর্যায়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অথবা জোরপূর্বক, কিম্বা সাময়িক উত্তেজনার বা স্নায়বিক বিক্ষুদ্ধতার মধ্যে উন্নত হয়েছে। পরিবর্তীত এবং বিভিন্ন অবস্থায় কম বা গোপন উল্লাসপ্রবণ লোকেরা আর্ট ফরমে জজীবন ধারণ করতে পারে। এই সব ব্যাপারে ক্লোনিক (clonic) খেঁচুনি থেকে কিছু সংখ্যক মাংসপেশীকে আয়ত্তে রাখার চর্চা উন্নত হয়েছে।

আমরা দূর্বল খেঁচুনি নাচ বান্টু অঞ্চলে সর্বাধিক বিস্তৃত দেখি। কালো-আদমী বক বক করে, লজ্জা ঢাকে, ষ্টীম ইঞ্জিনের প্রচন্ডতায় লাথি ছুঁড়ে। তার গলার মালা, আচ্ছাদন বিরামহীন ভাবে খসখস শব্দ করে। একসঙ্গে কয়েক ঘন্টা ধরে ভাজন পায়ের উপর পাছা উপরে নিচে দুলাতে থাকে।

বান্টু নাচ আফ্রিকান নাচের মত এত অস্থির ও শিশুদের ঢেঁকিকল খেলার মত লম্ফঝম্ফময় যে, কেউ এটাকে চঞ্চল, উদ্দেশ্যহীন নাচ হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারে। তথাপি তারা প্রায় প্রায় পেঁচুনি নাচের সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করে থাকে।

নাচ শুরুর সময় অংশগ্রহনকারী সাধারণতঃ আঁকাবাঁকা ভাবে সামনে পিছনে ছোট কদমে পা ঘসে নেয়, অথবা সামনে পিছনে ছোট ছোট ধাপে পা বাড়ায়ে দেয়। শীঘ্রই তারা গরম হলে পরে উপরের হালকা পোশাক ফেলে দিয়ে নিচের অংশের পোশাক টাইট করে বাঁধে।

তথাপি তারা ক্লান্তির কোন চিহ্ন প্রকাশ করে না। অধিকন্তু টেম্পোর যতই জীবন্ত হয় তাদের নাচ ততই বন্য ও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠে। নাচের গোলকের মধ্য থেকে একজন নিপূণ নাচুয়ে এসে মাঝখানে থামে শরীরের উপরিভাগে তীব্র মোচড় দিয়ে খেঁচুনির মধ্যে পেটের মাংসপেশীর খেলা দেখায় ।

তখন দুইজন পুরুষ নাচের মধ্য থেকে ভেঙ্গে বের হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে তলপেটের যৌন আবেদনমূলক বন্য অঙ্গভঙ্গি করে। দুই জন কাছাকাছি থেকে একজন মেয়ের ভূমিকায় প্রেমবিভোর ভালবাসার দৃশ্যের অবতারণা করে। দৃশ্যটি যতই উত্তেজনাপূর্ণ হয় দর্শকদের ততই উদ্বেলিত করে। তখন দুইজন কুমারী মেয়ে একই নাচের একই দৃশ্যের অবতারণা করে। এই সকল খেঁচুনি-নাচের অতি পরিচিত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তারা ইচ্ছার অধীন এবং নাচুয়েগণ মাটিতে না পড়ে যাওয় পর্যন্ত থামে না।

এমনকি মালে দ্বীপপুঞ্জের উৎফুল্ল ফকিরগণ সাময়িক উত্তেজনাকে শিল্পীসুলভ সমন্বয় করতে শিখেছে। সুমাত্রার শাকাই জনগোষ্ঠীর রোগ সারানোর ওঝা (কবিরাজ) “নিজের কপালে ও বুকে চাকু পরীক্ষা করে, তার সহযোগী জুনকো পা আড়াআড়ি করে বসে পায়ের উপর ডানদিকে কাত করে বাহু ভাজায়ে রাখে। দৃঢ়ভাবে বদ্ধমুষ্টি বাজনার সঙ্গে দুলতে থাকে।

ক্রমান্বয়ে সমস্ত শরীর এইভাবে দুলতে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাব আরো খেঁচুনি যুক্ত হতে থাকে । তার চোখ বন্ধ এবং প্রবল আবেগে অভিভূত হয়ে পূর্বের স্থানে ফিরে। উভয় ফকির বিড়বিড় করে প্রার্থনা করে ও যাদুমন্ত্র বলতেই থাকে। তারপর ওঝা (?) আস্তে চোখ বন্ধ করে উঠে লাস্যময় ও প্রাণবন্ত নাচ শুরু করে ।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তার বাহু, হাত, পা এবং পাতাসহ সমস্ত শরীর নাচে। ফকির তার বাঁ হাতে পাখা বা তরবারী ধরে মাঝেমধ্যে খারাপ মনে হলে তীর-ধনুক নেয়। তার বাঁ হাতে চুড়ীর মত ঘুংঘুর বাজায়ে বাজনাদারদের সঙ্গে তাল রাখে। সে সুন্দরভাবে পাখা দুলায়, হাত দিয়ে আনন্দদায়ক দেহ ভঙ্গি করে, কখন রোগীর দিকে কখন তার থেকে দুরে নাচতে থাকে।

সে পা দিয়ে মাটিতে হালকাভাবে আঘাত করে গোড়ালী দিয়ে ঘুরে, হাঁটু ভেঙ্গে নিচু হয়। সে তার পা কখন সামনে কখন পিছনে আড়াআড়ি (ক্রস) করে। প্রায়ই নাচটি পোলকা নাচের মত গোল হয়ে ডান অথবা বাম দিকে পদক্ষেপ করে।

ঢোল যত দ্রুত বাজতে থাকে নাচও ততবেশী বন্যতায় পৌঁছে। আসন পিঁড়িতে বসা দেহ মোচড়সর্বস্ব জুনকো-নাচ আরো খেঁচুনিযুক্ত নাচে রূপান্তরিত হয়। তখন হঠাৎ নাচুয়ে মাটিতে পড়ে যায় বা পড়া পড়া অবস্থায় পৌঁছে তখন বাদক বাজনা বন্ধ করলে ওঝা তার চোখ খুলে—–” ।

যদি শুধু শরীর খেঁচুনির একটি দেহ ভঙ্গি নাচের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় সেটা বলতে গেলে অ-খেঁচুনি নাচ হবে। শরীরের কোন অংশকেই বাদ দেওয়া যায় না। মালের উইটার দ্বীপপুঞ্জের মহিলাগণ খেঁচুনির সঙ্গে হাত একই সময়ে নাড়ে।

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মহিলা নাচুয়েগণ উরুর মাংসপেশী কাঁপায়, মধ্য-অস্ট্রেলিয়ার অরুনটাগণ উরু, মধ্য-শরীর ও দুই হাত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাঝে টরেস প্রণালীর ট্রাইবগণ তাদের মাথা, পূর্ব-আফ্রিকার কিজিবাগণ বাগযন্ত্র, ইন্ডিয়ার নাচের খেলোয়াড়গণ ঠোঁট, ইয়াপ এবং হাওয়াই এর আদিবাসীগণ হাত নাচায়; তাদের আঙ্গুল সত্যিকার উচ্চ শ্রেণীর উদাহরণ, এই ধরনের কম্পন ও তরঙ্গায়িত গলা, বুক ও পিছনের পেশীর ভঙ্গি এবং অতি পরিচিত তলপেটের ভঙ্গিমা যেটা সাধারণতঃ উত্তর-আফ্রিকার জনগোষ্ঠী এমনকি উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের ক্যানেলাদের মধ্যেও আছে।

গ্রন্থকার এই সকল ভঙ্গিমা একত্রে একটি গ্রুপে “উদর-নাচ” নামকরণ করেছেন সঙ্গে তলপেট ঘুরান যেটা সম্পূভাবে অন্য ধরনের। “উদর-নাচ” পুরান গ্যডিটান নাচুয়ে মেয়েদের আর্ট যাদের জন্য কবি মার্শল লিখেছেন : অক্লান্ত লোলুপমাখা গতিময় মৃদু শিহরণ নদীর বানের প্রান্তভাগে ।

আজকাল অরবগণ এই ধরনের-নাচকে মিশরীয় নাচ বলে বিবেচনা করে। স্লিবিসের আদিবাসীগণ বর্তমানে “উদর-নাচ” আরবীয়দের কাচ থেকে নিয়েছে যার নাম মিছেরি বা মাছেরি (Messeri or Masscri)এটা পরিস্কার যে আরবী শব্দ মাছের Masri অর্থ মিশরীয় ।

স্থানীয়ভাবে নিষিদ্ধ খেঁচুনি ধরনের দেহ ভঙ্গি পুনরায় প্রসার হতে পারে। তাড়াতাড়ি ঘুর্ণিয়মান দড়ি মাত্র একটা পাক দেখাতে পারে না কিন্তু উপর নিচে লম্বা হয়ে তরঙ্গায়িত হয়। এই সাধারণ মাজা ও বুক নাড়ান পরবর্তীতে নাচে উত্তীর্ণ হলে সাপের মত সমস্ত শরীরে ছন্দায়িত হয়।

শুধুমাত্র মহিলারা এই ধরনের নাচে অংশ নিতে পারে। নাচের চর্চায় পূর্ব-আফ্রিকান ও কম্বোডিয়ানগণ সোজাসুজি বিপরীতমুখীর একটা পরিস্কার উদাহরণ এবং কম্বোডিয়ার প্রাচীন খেঁচুনি নাচের সঙ্গে তাদের পরিস্কার সম্পর্ক দেখায়।

এটা ঠিক যে রীতিসিদ্ধ পৌরাণিক নাচের মাঝে এটা ঘটে, কুমারী নাচের ভঙ্গিতে দাঁড়ায় বা বসে (পোজ করে) পায়ের পেশীকে আরামদায়ক করে, উর্ধমুখি রাখা জোড়া হাতের তালু এক হাত এক হাত করে স্পন্দিত ও উপরে নিচে দোলায় ।

 

দুর্বল খেচুনি নাচ

 

নরম সর্পিল ভঙ্গি বাহুদ্বয় গড়ায়ে অন্য কাঁধে সঞ্চারিত করে স্ফীত বুকে অন্য বাহুতে যায়, দ্রুত হাত নাড়ানোর মধ্য দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ভঙ্গিতে কোমর বাঁকান হয়। তার তলপেট ভিতরে ডোবা থাকে হাঁটু পর্যন্ত সিল্ক ও জ্বলজ্বলে ধাতব পদার্থের আবরণ সারি সারি ছড়ান। যখন সে তার চোখের পাতা খুলে দেখা যায় তার চোখ ঘুরে এবং রহস্যময় সাদা মুখমণ্ডল নাড়ায় ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment