আজকে আমরা তবলা ও পাখোয়াজের পরিচয় জানবো
Table of Contents
তবলা ও পাখোয়াজের পরিচয়
কথক নৃত্যের সঙ্গে তবলা কিংবা পাখোয়াজ সঙ্গত করা হয়। তাই এই পদুটি বাদ্য যন্ত্রের পরিচয় নৃত্য শিক্ষার্থীদের জানা দরকার ।
পাখোয়াজ
প্রাচীনকালে বাদ্যযন্ত্রগুলিকে যে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে—যেমন তত সুষির, আনদ্ধ ও ঘন, – আলোচ্য যন্ত্রটি তার মধ্যে আনদ্ধ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত ।
চামড়ায় ঢাকা যন্ত্রগুলি এই পর্যায়ে পড়ে। একে মুদঙ্গ বা পখাবজ ( পখাওঅজ )-ও বলা হয় ।
পাখোয়াজের সৃষ্টিকর্তা যে কে, তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। কোন মতে বলা হয় : বিপরাসুরকে বধ করে ভগবান শংকর যখন তাণ্ডব নতো করেছিলেন, তার সঙ্গে সঙ্গত করার জন্য, অসুরের রক্তে ভেজা মাটি দিয়ে গণেশ (কোন মতে ব্রহ্মা) মদেঙ্গের মত একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরী করেন । সেইটিই পরবর্তী- কালে কাঠের ছাউনীতে পরিবর্তিত হয়ে নাম হয়েছে পাখোয়াজ বা পখাবজ ।
ভিন্নমতে, বিশ্বকর্মার সাহায্যে পনব আমি এই যন্ত্রের আবিষ্কর্তা।
বর্তমানে আমরা যে পাখোয়াজ দেখি, তার অঙ্গকে চার ভাগে ভাগ করা যার । কাঠামো, ছাউনি, ছোট ও গুলি। এই অঙ্গগুলিকে অটমাট করে এক সঙ্গে ধরে রাখার জন্য আছে পাগড়ী, যাকে গজরাও বলা হয়। পাগড়ির মধ্যে দিয়ে ছোট, (চামড়ায় দড়ি) গলিয়ে পাশের চামড়ায় ছাউনিকে টেনে রাখা হয়। কাঠের ফাঁপা খোলটি হ’ল কাঠামো। তার দিকের খোলা মুখে ঢাকা থাকে চামড়ার ছাউনি দিয়ে। ছাউনির যেদিকে গাব থাকে না, সেখানে আটা লাগানো হয় । এদিকটা বাঁ হাত দিয়ে বাজানো হয়, অন্য দিকের ছাউনির মাঝখানে গাব ইত্যাদির প্রলেপ দেওয়া থাকে। এদিকটা ডান হাতে বাজানো হয়। ছোটের কথা আগেই বলেছি । এই ছোটগালির নিচে কাঠামোর ওপরে থাকে কাঠের গালি। এইগুলিকে উচু নিচু করে সুর বাঁধা হয়।
পাখোয়াজ বাজাবার জন্য মূল সাতটি বাণী বা বর্ণ ব্যবহার করা হয়। সেগুলি হ’ল তা দাঁ, না, তে, টে, ধা এবং ক। ডান হাত দিয়ে বাজানো হয় তা, দাঁ ও না । এগুলি খোলা বোল। তে ও টে হ’ল ডান হাতেরই বন্ধ বোল। আর বাঁ হাতের খোলা বোল হল ধা, বন্ধ বোল ক। অন্য যে বাণীগুলি বাজানো হয়, সেগুলি এই মুখ্য সাতটির মিশ্রণে উদ্ভতে।
প্রপদ-ধামার গানের সঙ্গে, বীর্ণ ও সুরবাহার তন্ত্রবাদ্যের সঙ্গে এবং নাচের সঙ্গে পাখোয়াজ সঙ্গত করা হয়।
তবলা
তবলাও আনদ্ধ বা অবনদ্ধ শ্রেণীর যন্ত্র। এটিও তালযন্ত্র। বর্তমানে যেমন গীত, বাদ্য ও নতা-সব বছরে সঙ্গেই তবলা সঙ্গত করা হয়, তেমনি একক ( solo ) ভাবেও বাদিত হয়।
তবলার আবিষ্কর্তা সম্বন্ধেও নানা গুণীর নানা মত প্রচলিত আছে । প্রাচীন কালের বাদ্যযন্ত্রগুলির মধ্যে তবলার অনরূপে যন্ত্রেরও নিদর্শন পাওয়া যায়। মুঘল কালে রূপান্তরিত হয়ে এর প্রচলন আরো বেড়ে গেচে বলে জানা যায় ।
তালযন্ত্র হলেও, গঠন প্রণালীতে এটি মন্দঙ্গ বা পাখোয়াজ থেকে সম্পূর্ণ পথেক। প্রথমত পাখোয়াজ একটি সম্পূর্ণ একক যন্ত্র কিন্তু তবলার আরেকটি পৃথক ভাগ আছে যাকে বলা হয় বাঁয়া। ডান হাত দিয়ে বাজাবার জন্য তবলা আর বাঁ হাত দিয়ে বাজাবার জন্য বাঁয়া । তবলা ও বাঁয়ার গেল মিলন না ঘটলে শষে, তবলা বা শ,ষ, বীয়া বাজানো যায় না।
তবলা বাঁয়ার নাদ পাখোয়াজের মত গম্ভীর নয় । এর বাদনরীতিতে যেমন তফাৎ আছে তেমন পাখোয়াঙ্গের ও তবলার বোলবাণীও পৃথক । পাথোয়াজের বদলে আজকাল সর্ব ক্ষেত্রেই তবলা দিয়ে কাজ সারা হচ্ছে বটে, তবে পাখোয়াজের গম্ভীর বোলগুলি তবলায় বাজালে সে মাধর্যে ও গাম্ভীর্য’ কিছুটা ব্যাহত হয়। সেই জনাই, পৃথক-পৃথক বৈশিষ্ট্যের জন্যই পৃথক পৃথক যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।
তবলার কাঠামোটি কাঠের তৈরী। কাঠামোর শুধু ওপর দিকটাই প্রায় সাত ইঞ্চি পরিমাণ গোল করে খোলা থাকে। এই খোলা গোল মুখটি ঢেকে দেওয়া হয় চামড়ায় ছাউনি দিয়ে। ছাউনির মাঝখানটায় গাবের প্রলেপ দেওয়া থাকে । এই প্রলেপকে হিন্দীতে বলে স্যাহী। পাতলা ও পর স্যাহীর ওপর নির্ভর করে সুরের উঁচু ও নিচু নাদ। ছাউনিটি বাঁধা থাকে চামড়ার বিনানী করা একটি বেড়ের সঙ্গে। এই বেড়কে বলা হয় পাগড়ী বা গজরা।

পাগড়ীর বিনানীর ফাঁক দিয়ে ছোট (হিন্দীতে বদ্ধি বলা হয় ) গলিয়ে নিচের দিকে টেনে এনে কাঠামোর নিচে আরেকটি চামড়ার বেড়ের সঙ্গে টান ক’রে বেধে রাখা হয়। এতে ছাউনিটি সব দিকে সমান ভাবে টান থাকে। নিচের এই বেড়কে বলা হয় গড়েরী। ছোট-এর নিচে কাঠামোর ওপর থাকে আটটি কাঠের গালি ( গাট্টাও বলা হয় ) । এই গুলি বা গাট্রাগগুলিকে ওপরে-নিচে উঠিয়ে নামিয়ে সুর বাঁধা হয়। সুর বাঁধার সময় অবশ্য পাগড়ীর ওপরেও হাতুরীর আঘাত করা হয়।
তবলার কাঠামো যেমন কাঠ দিয়ে তৈরী হয়, বাঁয়ার কাঠামো তেমনি হয়। মাটি, তামা, স্টীল প্রভৃতি দিয়ে। পাঞ্জাবে অবশ্য কাঠের তৈরীও হয়। অন্যান্য অঙ্গগুলি তবলার মতই। অর্থাৎ এতেও ছাউনি, গাব, পাগড়ী, ছোট গুড়রী প্রভৃতি অংশ আছে। তফাৎ এই যে এর গাব বা স্যাহী মাঝখানে থাকে না। একটু পাশের দিকে সরান থাকে । এতে গলি বা গটা থাকে ן זה অনেক সময়ে চামড়ার ছোট-এর বদলে সুতোর দড়ি থাকে আর সেই দড়ির সঙ্গে পিতলের আংটা (রিং) লাগানো থাকে যা দিয়ে পড়িগুলিকে প্রয়োজন মত টেনে ছাউনিকে টান রাখা হয়।
আরও দেখুনঃ