আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – ঘনিষ্ঠ নাচ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
ঘনিষ্ঠ নাচ
ঘনিষ্ঠ নাচ বা কেন্দ্রীভূত-নাচের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল একটা নির্দিষ্ট ছন্দবদ্ধ গতি থেকে শুরু হয়। শরীরের সমস্ত অংশ বা অংশ বিশেষ উভয় দিকে একটা ক্ষুদ্র গোলকের মধ্যে সুইং করে যেমনটা ছড়ান নাচের মত খাটো এবং সরু পৌরুষপূর্ণ দেহ ভঙ্গি, পদক্ষেপ এবং লক্ষঝক্ষের মত হয় না।
এই নাচসমূহ সাবলীল দোদুল্যভাবে শূন্যে ভাসমান থাকে, এর রিদিম (ছন্দ) সমান তালে দুলে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নমনীয় ভঙ্গিতে পূর্ণ। কিন্তু ছড়ান নাচের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত, যেমন এরা প্রায় বিস্ময়করভাবে শান্ত ও সুসংগঠিত। বিশৃংখল শক্তির জন্য তারা কখন কখন আকর্ষণীয় লাবন্যময়তা পরিবর্তন করে এমনকি সূক্ষ্মরুচিবোধও। মহামুক্তির জন্য নির্দিষ্ট আদর্শ, শান্ত, সমাহিত, সমন্বিত ভারসাম্য রক্ষা করে ।
সাধারণ সাবলীল (সুইং দেহ ভঙ্গিসমূহ ঃ
মাথা সামনে পিছনে এবং ডান দিক থেকে বামদিকে বেন্ড করা
মাথা ঘুরান (রোলিং)
ধড়কে সামনে পিছনে ও ডান থেকে বাম দিকে বাঁকান
তলপেট সামনে পিছনে ও ডান থেকে বাম দিকে ঘুরান
খড় পেঁচান
তলপেট পেঁচান
দেহ ভঙ্গি তরঙ্গায়িত করা
একগোছা তুলির মত সুইং করা
হাত বাঁকান ও প্রসারিত করা
বাহু বাঁকান ও প্রসারিত করা
আঙ্গুল বাঁকান ও প্রসারিত করা
পা বাঁকান ও প্রসারিত করা
হাঁটু বাঁকান ও প্রসারিত করা
এই সকল প্রয়োজনীয় দেহ ভঙ্গিগুলি জিমন্যাষ্টিককে নমনীয় শারীরিক কসরৎ বলা হয়। সত্যি বলতে কি এই রকম নাচের বর্ণনায় বাহুদ্বয় টিলা ঝোলানোর উপর জোর দেয়। একই সময় বিবেচনা করলে এই দেহ ভঙ্গিমা আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। সকল প্রাচ্যবাসী প্রার্থনায় ছন্দে ছন্দে কম্পিত ও দোদুল্যমান হয়। এই কাঠামোতে ছন্দিত বাহুদ্বয় এসে যায়। ছড়ান নাচের বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা প্রায় বিবেচনা করি একটা দেহ ভঙ্গি না বরং সম্পূর্ণ নাচের মধ্যে নাচটি গতিময় অথবা স্থির কিনা।

যদিও কেন্দ্রীভূত নাচ বিভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে, ছড়ান নাচের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বৈপরীত্য সাধারণতঃ থাকে যেমনঃ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে নিমর্ম সংগ্রাম, আলোয় উদ্ভাসিত হবার বাসনা, পৃথিবী থেকে মুক্তি, উর্ধমুখি, এটা মানবজাতির প্রবল ইচ্ছা এবং শুধুমাত্র নাচেই তা পূর্ণ হতে পারে।
পূর্ব-আফ্রিকার বারুন্ডিদের কুমারী-নাচ রক্ষণশীল দেহ ভঙ্গির একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যময় : “তাদের বাহুদ্বয় পার্শ্বে প্রসারিত, তাদের মুক্তহাত আলতো ও ললিতভাবে কোমরে ঘুরে আসে। নরম হাসিতে মাথা বিভিন্ন দিকে দুলায়ে নাচুয়েগণ সারিবদ্ধ হয়ে মুখোমুখি অতিক্রম করে। ক্রমান্বয়ে তাদের চলন প্রাণবন্ত হতে থাকে তাদের সম্পূর্ণ শরীর সামনে পিছনে পার্শ্বে ঝুঁকে অদ্ভুত ছন্দে ও হেলেদুলে।
অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে থেকে উগান্ডার পিগমিদের দ্বিতীয় হিসাবে পছন্দ করা যায়। তারা মাটিতে বসে কনুইদ্বয় বা উরু দিয়ে সজোরে আঘাত করে মাথা চক্র করে, দুলায়ে ঘুরায় তাদের ছোট্ট গোল উদর এবং সজোরে শরীরকে সামনে পিছনে ধাক্কা দেয় বিরামহীন ছন্দে।
আনন্দ উচ্ছ্বাসে এই নাচে তলপেট ঘুরাতে একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে। যেহেতু তলপেট শরীরের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা যৌনাঙ্গ ও সন্তান ধারণের ক্ষেত্র তাই নাচে সুস্পষ্টভাবে সেই দিকে জোর দেয়। যখন এইভাবে সেটাকে ইঙ্গিত করা হ দেহ ভঙ্গিগুলিকে আমরা বেলী ডাগ বা উদর-নাচ আখ্যায়িত করি। যদিও এটা সব সময় ঠিক না ।
নিশ্চিতভাবে বলা যায় উপর-নাচে কোন সুশৃংখল বিষয়-বস্ত্র নাই। পরবর্তীতে যা রেকটাল এবডোমিনি নামে সোপান দেহ ভঙ্গিররূপ নেয় যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। পূর্ববর্তী ধরন ছিল তলপেট সম্পূর্ণ চক্রাকারে ঘুরান যা পর্যটকগণ উদর- নাচ, পাছা-নাচ বা কোমর-নাচ রূপে বর্ণনা করে।
আমরা তার উদাহরণ পাই দক্ষিণ সাগরের ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জে নামোলাক এবং টুক, নিউ গায়ানার স্পাইক নদীর পাড়ে, সর্টল্যান্ড দ্বীপে সলোমন দ্বীপপুঞ্জে এবং পূর্ব-পলেনেশিয়ার । বাকী উদাহরণ আফ্রিকায় আছে উত্তর উপকূল থেকে পশ্চিমে গোয়াঙ্গো পূর্বে জাঞ্জিবার পর্যন্ত। যদিও প্রাচীন হেলাসে এই নাচের রেকর্ড আমাদের আছে। বাস্তবে প্রত্যেক দৃষ্টান্তে মাচুয়েগণ থাকেন মহিলা।
প্রায়ই এই আর্টসমূহ শুধুমাত্র যৌন উত্তেজক কর্মে সীমাবদ্ধ। কিন্তু মূল উৎস ছিল যাদুতান্ত্রিকঃ রতিক্রিয়ার দেহ ভঙ্গিমা এবং অন্যসব যৌন কর্মকাণ্ডে জীবন দীর্ঘায়ু ও বর্ধিষ্ণু হয়। লোয়াঙ্গোর বাফিয়োটিদের তলপেট নাচ হল : ” পূর্ব-পুরুষ পূজা যার লক্ষ্য অতীত ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। যেটা অনাগত বংশধরদের আগমন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছময় করবে।” কেন্দ্রীভূত নাচে কাপড়-চোপড়ের নির্দিষ্ট অর্থ আছে যেমন, পর্দা বিশেষস্থানে বাঁধা শরীরের বিশেষ সীমারেখা নির্দেশ করে।
জাপানী খাগুরা নাচে পোশাক শুধুমাত্র পরার বা ভূপাতিত হবার জন্য পরে এবং কিছু প্রাচীন গ্রীক নাচের মেয়েদের হাত পা ঢাকা পোশাক ক্ল্যাসিক উদাহরণ বহন করে।
আরও দেখুনঃ