আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – গোলক নাচ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
গোলক নাচ
গোলক নাচের সবচেয়ে প্রাচীন ফরম বা গঠনশৈলী হল চক্রাকার। এমনকি শিম্পাঞ্জীও পর্যন্ত গোল হয়ে ঘুরে নাচে এবং সব মহাদেশের লোকজন এখনও তা করে থাকে। সামনাসমনি, সারিবদ্ধ, (একজনের পেছনে আর একজন) লাইন (একজনের পার্শ্বে আরেকজন) নাচ যা এটার বিপরীত অংশ এখানে অবশ্যই এই বক্তব্যকে সঠিক বলে প্রমাণিত করে।
পুরান ম্যাক্সিকোর নউয়াগণ তাদের ধর্মীয় ভারগম্ভীর অনুষ্ঠানের নাচ গোল হয়ে নাচে, কিন্তু তারা তাদের অপবিত্র বা দেবনিন্দার নাচ দুই সারিতে করে। পুরাতন বা পৌরাণিক কাহিনীও বলে নাচ গোল হয়ে শুরু হয়েছে। পূর্ব-ব্রাজিলের প্রাথমিক কৃষ্টির স্তরের চিয়ানগ্যাঙ্গগণের মধ্যে গল্প আছে যে, একদা একটা বিবাহ উৎসব হবে, কিন্তু লোকজন কেউ না জানে গান গেতে না জানে নাচতে তারপর যখন তারা জঙ্গলে শিকার করতে গেলে তারা একটা গাছের গুঁড়ির মাঝখানে পরিস্কার করতে গিয়ে দেখতে পায় কতগুলি কাঠি তাতে হেলান দিয়ে আছে।
এই কাঠিগুলি ছন্দে আন্দোলিত হতে থাকে এবং বিয়েতে এই গতিসঞ্চার অনুকরণ করা হয়। “এইভাবে জানা গেল কেমন করে আমরা গাইতে ও নাচতে শিখলাম” । পরবর্তীতে গোলক বা চক্র আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। এটা উন্নত চিন্তাধারার প্রতিফলন না, কিন্তু তার চেয়ে একটা নতুন চিন্তাভাবনা ও তার স্বতঃস্ফূর্ত বহিপ্রকাশের মধ্যে সংযোজন-কোন বস্তুকে ঘিরে রাখার অর্থ হল দখলস্বত্ব কায়েম করা, এটাকে সংমিশ্রিত করা, এটাকে কতৃত্বে আয়ত্তে রাখা অথবা শূন্যে মিলায়ে দেওয়া।
বন্দী মুন্ডু বা মাথার চামড়া, যেটাকে ঘিরে ঘোরা হয় তা অবশ্যই মৃত মালিকের ক্ষমতাতার মধ্যে সোপদ করে ফকিরতান্ত্রিক ঘূর্ণয়ন রোগীর রোগাক্রান্ত অপশক্তি দূরীভূত করে, এটা বয়ঃপ্রাপ্ত যৌবনকে সমাজের পূর্ণাঙ্গ সদস্যে পরিগণিত করে; এটা জীবন্ত গাছের প্রবৃদ্ধির ক্ষমতা সমস্ত প্রকৃতিতে সঞ্চারিত করতে শক্তি যোগায় এবং উৎসর্গীকৃত জন্তুর রক্ত ঝরায়ে তাদের সবার জন্য প্রাণদান করার কারণ হয়ে থাকে।
এই সম্মিলন ক্ষমতার আদান-প্রদান, চক্রাকারে প্রাপ্তির সুন্দর প্রতিফলন পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্ন পুরাকাহিনীতে : তাদের দেবতা কাদা দিয়ে দুইজন পুরুষ মানুষ গঠন করেন, তিনি তাদের উপর শুয়ে পড়েন এবং তাঁর নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাস তাদের মধ্যে বহান, যখন তারা নড়াচড়া করতে থাকে তিনি লাফ দিয়ে উঠেন এবং তাদেরকে তিনবার ঘিরে নাচ করেন, তারপর তাদের জিহ্বা শিথিল হয়ে পরে এবং তারা কথা বলতে শুরু করে।
তথাপি সংস্কৃতঋকবেদ স্বীকার করে যে, দেবতাদের আদিম জাঁকজমকশীল চক্রাকার নাচেই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে, বিশৃঙ্খল ধুলি কণার মহাশূন্যে যিনি প্রবল বেগে ঘূর্ণিয়মান।
তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় চক্র বা গোলক নাচের গঠনশৈলী বা ফরম আধ্যাত্মিক ভাবধারা থেকে উৎসারিত হয়নি সেটা যতটুকুই পরিস্কার ফুটে উঠুক না কেন তা কোন ব্যাপার না, যেটা আমরা এপসদের মধ্যে আয়ত্তাধীন বলে লক্ষ্য করি । সমস্ত আধ্যাত্মিকীকরণের পূর্বে শরীরকে পরিভ্রমণ ও মাহাশূন্যের মধ্যে একীভূত করার প্রয়োজন পরিস্কার অনুভূত হয়।
যখন মানুষ গুহার বাইরে অন্বেষণ করতে অথবা মাথার উপর শিলাখন্ড ঝুলাতে অথবা প্রতিকূল আবহাওয়া প্রতিরোধে সাধারণ বাতাস প্রতিরোধক গড়ে তুলতে যা ছিল তা নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না; কিন্তু যখন তারা কুঁড়েঘর তৈরী করতে লাগল সেটা ছিল গোল আকারের তাদের জন্য তৈরী ঘর বিশেষ।
আদিম মানুষের কুঁড়েঘর দেখতে মৌচাকের মত; লম্বা খাড়া কোন দেয়াল নাই, কোন চতুস্কোণ তার হাতে জন্মায় না : মৌলিক কৃষ্টির “স্থানক” বা অবস্থান ধারণার এবং প্রাথমিক স্তরের বৃহৎ অংশ জুড়ে চক্রাকারের প্রয়োগ আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নাচের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য রূপে অবস্থান করে এমনকি গোল আকৃতি সৃষ্টির আদিকাল থেকে মূর্ত হয়ে আসছে।
সত্যিকারভাবে নাচের মধ্যে এটা অতীব আদিকালেরঃ পূর্বে মানুষ তার অবস্থানকে সংহত করতে প্রকাশ করত কাঠ, বৃত্ত, পাথর ইত্যাদি বাহ্যিক বস্তুর উপলক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে, সে এটাকে অবশ্যই সন্তুষ্ট করতে চেত নিজের শরীরের হাত, পা, ধড়ের স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে।
কতটুকু শক্তিশালী এই অন্তর্নিহিত প্রয়োজন, দেহভঙ্গির কতটুকু গঠনশৈলী থেকে একীভূত করা যায় এবং নির্মাণের কতটুকু একীভূত করা যায় তা আরো তথ্যের মধ্যে বিবৃত আছে : সেই সমস্ত কৃষ্টি যা গোলক তৈরী থেকে সরে এসেছে এবং চতুষ্কোণ কুঁড়েঘর তৈরী করেছে এবং এইরূপ কৃষ্টিতে বাহ্যিক ভাবে সংঘবদ্ধ নাচ সোজা লাইনের গঠনশৈলী ধারণ করে।
গোল হয়ে নাচা গঠনশৈলী বা ফরমের উৎপত্তি ও বিকাশের সঙ্গে প্রাসংগিকভাবে গোল কুঁড়েঘরের গঠন ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত; মুখোমুখি নাচ চতুষ্কোণ কুঁড়ে ঘরের গঠন ও উন্নয়নের সঙ্গে সংযুক্ত।উত্তর-আমেরিকায় এইরূপ সাদৃশ্য পরিস্কার দেখা যায়। যেখানে গোলচক্র বিদ্যমান সেখানে আমরা গোল কুঁড়ে-ঘর, গোল নাচ-ঘর দেখতে পাই।
শুধুমাত্র উত্তর পশ্চিমে যেখানে তক্তা দিয়ে চতুষ্কোণ বাড়ী তৈরী করতে হয়েছে এবং ক্যালিফোর্ণিয়ায় এই বাড়ীর প্রভাবে চতুষ্কোণ কুঁড়ে-ঘর ও নাচ-ঘর একই সঙ্গে অনুষ্ঠানিক নাচের জন্য গোল কুঁড়েঘর ও নাচ-ঘর তৈরী হয়েছে শুধুমাত্র এই বিভাগে মুখোমুখি নাচ গোলচক্রে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য। সত্যিকারভাবে এই মিশ্র কুঁড়ে-ঘরের এলাকায় সংঘবদ্ধ গোল-নাচ প্রায়ই মুখোমুখি নাচ হয়ে পরে।
গোল কুঁড়েঘরের মত আগুন জ্বালানোর স্থান (ফায়ার প্লেস) অথবা কেন্দ্রীয়দন্ড সেখানে যেমন থাকে তদ্রুপ গোল সংঘবদ্ধ নাচ, আগুন, কূপ অথবা দন্ডের চারদিক ঘিরে ঘুরে। এমনকি শিম্পাঞ্জীর চক্করে কেন্দ্রবিন্দু থাকে। এবার আমরা নিম্নলিখিত বর্ণনাকে তুলনামূলক আলোচনা করব।
প্রথমে যেটা সচেতন করে তুলে নিউ ক্যালিফোর্ণিয়ার গোল কুঁড়েঘর নির্মান ঃ “মাটি খুঁড়ে গর্তের মাঝখানে তারা গাছের গুঁড়ি রাখে বাইরের চারধারে দন্ড গাঁথে এবং তার মাথা কাত করে গাছের কান্ড মাঝখানে বাঁধে। এই দন্ডের মধ্যে গাছের ডাল পুরে সমস্ত জিনিসটি পাতা ও ঘাস দিয়ে আবৃত করে দেয়, ।
“ব্রাজিলের চিয়াংগ্যাংগদের পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে এর তুলনা করলে নাচের উৎস সমন্ধে আমাদেরকে পূর্বেই অবহিত করা হয়েছে : “একদিন সাইরুসারদের পুরুষগণ শিকারের জন্য জঙ্গল পরিস্কার করতে গিয়ে তারা লক্ষ্য করল একটা খোলা চমৎকার স্থানে উঁচু গাছের কান্ডের চারদিকে গাছের কাঠি সহ পাতা হেলে আছে এর একটার মধ্যে ফাঁপা লাউ- খোল বাইরের দিকে প্রবৃষ্ঠ করা-অল্প কিছু সময়ের পর ছোট কাঠিগুলো ছন্দে ছন্দে নিচ থেকে উপরে চলতে আরম্ভ করে”।
যে কেউ ফায়ার প্লেসের চারদিক ঘিরে নাচে তারা পৃথিবীর একটা গর্তের চারদিক ঘুরে নাচে। এই কারণে পৃথিবীর অনেক অংশে আগুনহীন গর্ত ঘুরবার কেন্দ্র বলে ধরা হয়। তারপর প্রাক্ নারী প্রভাবিত কৃষ্টিতে মাতৃতান্ত্রিকতার দিকে ঝুঁকে পরায় মাটিতে গর্ত পরিস্কার যাদুতান্ত্রিক তাৎপর্য বহন করে যেন মাতৃগর্ভ সৃষ্টির প্রতীক স্বরূপ এবং পৃথিবী নিজেই ফল উৎপন্ন করে ।
সূচনা-নাচে ও একই ধরণের ধর্মীয় প্রথায় খাড়া (লম্বালম্বি) ঢোল এবং নাচের গাছ কখন কখন অগ্রবর্তী হয়ে গর্তের উপর স্থাপন করা হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মিয়োক্স ও পমোদের মধ্যে তাদের একটা অপশক্তি নাচের সঙ্গে গর্ত থেকে উঠে আসে ও ঢোলের উপর পদাঘাত করতে থাকে।
এটা সেই একই মূল শিল্পউপাদান যেটা আমরা একবার ক্যালিফোর্ণিয়ান ইন্ডিয়ানদের মধ্যে মেয়েদের সূচনাপর্বে মুখোমুখি হয়েছি যাতে নিমগ্ন শিক্ষানবীশ মৃত জগৎ থেকে পার হয়ে আসে। কূপ তাই কোন জ্ঞানেই শ্রুতিগুণের সম্পদের কারণে স্থান নির্বাচিত হয়নি এমনকি ক্যালিফোর্ণিয়া ও আমেরিকার বাইরে পর্যন্ত ।
এইজন্যই বসোর মুখোশ পরা কিউম্যানগ নাচুয়েগণ যখন কূপ থেকে বের হয়ে আসে আমরা তখন পুনরায় আফ্রিকার মাটিতে সেই একই মূলশিল্প উপাদান লক্ষ্য করি। এইরূপে আমরা তিন মহাদেশের কূপ-নাচের ব্যাখ্যা করতে পারি।
সবচেয়ে শুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গোলক অঙ্গভঙ্গির চলন কোন দিকে হবে যেখানে নাচুয়েগণ একস্থানে থাকে না-সম্ভবতঃ সব ক্ষেত্রে উত্তর পাওয়া যাবে না : শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক অনুসন্ধানী নাচের এই অংশের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। যখনই কোথাও আমাদের এই তথ্য থাকে আমরা অঙ্গভঙ্গির ডান দিকের কথা বলি যেমন ঘড়ির কাটার মত নাচুয়ে গোলকের লাইন অনুসরণ করবে এবং ডান দিকে যাবে। সেইমত অঙ্গভঙ্গি বাম দিকে ঘড়ির কাটার দিকে চলন যাবে।
ডানদিকে চলার অঙ্গভঙ্গি এত বৈচিত্রপূর্ণ যে, কোন একরীতি প্রচলন হয় না। নাভাজোগণ এটা সূর্য-নাচে, মাইডুগণ মেয়েদের ধর্মীয় প্রথায়, দক্ষিণ আমেরিকার টুপিগণ যুদ্ধ-নাচে ব্যবহার করে। ব্রাজিলের সিউশিগণ “তাদের গতিভঙ্গি বামদিকে রাখে” যখন তাদের পাঁচজন বড় বাঁশী বাজায় এবং প্রত্যেকে তাদের এক হাত তাদের সহযাত্রী মেয়ের ডান কাঁধে রাখে; প্রতিবেশী হুহুটেনিদেরও একই ঐতিহ্য আছে।
দক্ষিণ-শ্লাভদের মধ্যে সূর্য-নাচে ডান দিক থেকে অঙ্গভঙ্গি ব্যবহৃত হয়, আলার এবং বুরজাটিদের ‘ঘোড়া দৌড়” ডান দিক থেকে নাচা হয় এবং সূর্য প্রথায় প্রযোজ্য বাম দিকের অঙ্গভঙ্গির উদাহরণ খুবই এবং অর্থ পরিস্কার না। স্লিবিসের টোরাজাগণের মৃতপ্রথা নাচের চলন বুঝা যায় বাম দিকে এবং পুগেট সাউন্ড ইন্ডিয়ানগণের মধ্যে নাচে ডানদিকে ঘুরছে ধরা হয় জীবন বিপজ্জনক বলে। অন্য ঘটনায় নাচুয়ে পিছনের দিকে ঘুরে অন্য পথে অগ্রসর হতে পারে।
ঘুরার সংখ্যা এবং পদক্ষেপ, কতদিন নাচা হবে, গান এবং গানের পুনরাবৃত্তি কতবার হবে প্রায়ই পবিত্র সংখ্যার দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে । ক্যালিফোর্ণিয়ার ইন্ডিয়ানগণের চার সংখ্যা খুবই পবিত্র, উদাহরণস্বরূপ; এই সংখ্যা মাইডু, উকি, হুপা ও মোজেবদের জন্য নাচের পথপ্রদর্শক।
অন্য দিকে পাঁচ সংখ্যা ইউরোক, ওইট, সিষ্কোনী, যডোক, এচোমাউই এবং আটসুগিউদের পরিচালিত করে। চার সংখ্যা পূর্ব থেকেই পুগেট সাউন্ড প্রভাবিত হয়ে আছে। অন্য কোথাও আর্ট ও নয় সংখ্যা পছন্দ করা হয়, উদাহরণস্বরূপ ডাইয়াকগণ আট ও কেরামগণ নয় সংখ্যা।
দ্বৈত চক্র : (ভিতরে ও বাইরের দিকে চক্র) কুঁড়েঘর গঠনশৈলী নাচের ঘটনায় খুবই সাধারণ, যেখানে অধিক সংখ্যক অংশগ্রহণকারী অংশ নেয়, তাদের সবাইকে ধারণ করতে একটা গোলক পর্যাপ্ত না। অন্য ঘটনায় উভয় লিঙ্গের অংশগ্রহণকারীদের সংমিশ্রণ এড়ায়ে যাবার জন্য এইরূপ ব্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের বাইরের গোলকে এবং পুরুষদের ভেতরের গোলকে রাখা হয়।
যেটা খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় : এটা পরিস্কার বুঝা যায় পুরুষদের চক্রে মহিলদের অন্তর্ভুক্ত না করলে এই রকম হবে, তবে নাচের উচ্ছাস দমে যায় এবং নিষ্প্রভ ভাবে চক্রের বাইরে অংশ নিতে আরম্ভ করে। যে সমস্ত স্থানে মহিলাগণ ভিতরে নাচে, সেখানে যাদু-ধারণার সংশ্লিষ্টতার আমেজ থাকে যার প্রতি আমাদের মনোযোগ এরই মধ্যে আকৃষ্ট হয়েছে।
একই চক্রে উভয় লিঙ্গের মিশ্রণ বলা যায় পরবর্তী কালের উন্নত প্রক্রিয়া : প্রথমত ঃ বৃত্তাংশের বিভক্তিকরণ, শেষে যেমন স্লিবিসে নারী পুরুষ এক সারিতে একজন পুরুষের পর অন্য একজন মহিলা অবস্থান নেয়। বিপরীত অঙ্গভঙ্গি দুই গোলকে প্রায়ই সংশ্লিষ্ট থাকে নিউ আয়ারল্যান্ডে এটা চাঁদের প্রতিনিধিত্ব করে।
তিন ঘেরের গোলক : আদিম জগতের মধ্যে দেখা যায় স্লিবিসে টোরাডজাদের ও পশ্চিম মেলেনেশিয়ায় তাদের নাচেও মহিলা ও শিশু বাইরের ঘেরে থাকে। ইউরোপে ঘটনাচক্রে তিন ঘেরের গোলক নাচের উদাহরণ দেখা যায়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ পাওয়া যায় ফ্লোরেন্স থেকে, যেখানে ১৪৯৭ খৃষ্টাব্দে সেভোনারোলায় ধর্মোপদেশের পর বিরাট উৎসাহী শ্রোতাগণ সেন্ট মার্কস স্কোয়ারের সামনে তিন ঘেরের গোলকে নাচতে থাকে ।
“ভিতর গোলকের ঘেরে মঠ পুরোহিত এই মঠবাসী সমবেত গায়ক বালকদের বদল করে, দ্বিতীয় ঘেরে যুবক ধর্মযাজক এবং অসহায় লোকজন এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বাইরের ঘেরে বৃদ্ধ, নাগরিক এবং পাদ্রীগণ” । এটা হতে পারে এমন একটি দৃশ্যপট যেটা সূর্যের চক্র-নাচকে দান্তের দীপ্তিময় অবলোকনকে অনুপ্রাণিত করেছে :
এবং আগে তার ঘুরে গেছে পূর্ণ ঘের, নতুন এক ভিড়
দ্বিতীয় ঘেরের মাঝে আবদ্ধ তাই চক্রাকারে
এবং গতিময় মিলেছে গতি লয়ে গানে গানে মীড় ।
তারপর উভয়ের ঐক্যতানে ঘুড়িছে সৌন্দর্যে
যতক্ষণ প্রথমা শুরু করে দ্বিতীয়া থির অবলোকনে
তের, ১৭-১৮
এবং দেখো আমাদের ঘিরে উঠিছে আর এক জ্যোর্তিময়
তার চেয়ে আরো অধিক ঔজ্জল্য আছে তথায়
এবং ফুটে উঠা দিগন্তের সীমানার মত যা দীপ্তিময়।
এবং সাঁঝের পূর্বে জেগে উঠা নতুন
বেহেস্তের উপর দিয়ে আবির্ভাবের আবেশ
এবং আমাদের দৃষ্টির অনুভবে মনের বাইরে সত্যি,
সুতরাং নতুন সত্ত্বা মিলিত হতে থাকে,
মনে হয় আমার চোখের আগে এবং ঘুরে বার বার
অন্য দু’টা গড়ছে তৃতীয় এক গোলক।
দরবেশদের বিপরীতমুখী অঙ্গভঙ্গির নাচে জ্যোর্তিবিদ্যা সম্পর্কিত তাৎপর্য আছে। বিশেষ করে পূর্ব মেলেনেশিয়ায় চার বা আরো অধিক ঘেরের-নাচের সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের সলোমন দ্বীপপুঞ্জে এবং নিউ ক্যালিডোনিয়ায় এই রকম উদাহরণ আছে।
তারা নবীন নাচুয়েদের বাইরের ঘেরে রাখে—শুধুমাত্র নিউগিনির কিউইদের এককেন্দ্রীক মহিলাদের নাচ বিপরীত ব্যাপার। ইয়র্ক ও অন্য ক্যালিফোর্ণিয়ার উপজাতি সমূহকে বলা হয় যে তারা দশ ঘেরে বিপরীত পথে অদলবদল করে চলা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং কুইটজ্যালকোটালের মস্ত বড় উৎসবেও প্রাচীন ম্যাক্সিকানগণ প্রায় অনেকগুলি সার্কেল গঠন করার প্রচলন রাখে ।
যখন আমরা এককেন্দ্রীক ঘের বা গোলক বিবেচনা করি, এটা খুবই পরিস্কার যে, চক্র নাচের অঙ্গভঙ্গির তাৎপর্য সীমাবদ্ধ না এবং যে কোন পরিকল্পনাকে গোলক নাচ শুধুমাত্র সাধারণ এক সারির নাচের বিপরীতরূপে শ্রেণীবিন্যাস করলে তাও কিন্তু হবে হালকা ধরনের ।
আমরা স্মরণ করতে পারি নিউ ক্যালিডোনিয়ানদের পিলু পিলু : ভেতরের ঘের শুধুমাত্র ছোট পদক্ষেপ নিবে, মধ্য ঘের অবশ্যই ঘুরবে অধিক বেগে, এবং বাইরের ঘের উড়ে চলার মত পাগলের বোঁ বোঁ চক্কর দিয়ে ঘুরে। অধিকাংশ গোল নাচের সারি সাধারণ ঘুরা থেকে কতদূর পথ পার হয়ে এই ঘুরা গতি আকৃতি লাভ করেছে! এটা এত দূরে গেছে যে ঘূর্ণিয়মান প্রপলার (পাখা) ডিজাইন এটাকে সরায়ে দিয়েছে (অতিক্রম করেছে) এবং নিষ্প্রাণ সারির সাধারণ
চক্করের সাজ থেকে পরিপক্ক সজ্জায় মালগাড়ীর চাকার স্পোক বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। গোল হয়ে নাচার সহজ গঠনশৈলী এই বই এর বিভিন্ন অংশে আলোচিত হয়েছে। এই লক্ষ্যে আমরা উত্তর-আমেরিকার এসিনিবইনদের শুধু খেলা বর্ণনা করব।
মধ্যখানে নারী পুরুষ অংশগ্রহনকারী তার ঘুষি সামনে ধরে রাখে, হঠাৎ হাত দিয়ে তার একটা কেড়ে নিয়ে উপরে তুলে ধরে, তারসঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য নাচ করে এবং তাকে ঘেরের মাঝখারে দাঁড় করায়ে রাখে, তারপর দ্বিতীয়জন তৃতীয়জন সকলেই, যতক্ষণ না সবাই মাঝখানে দাঁড়ায়।
এই রকমের নাচে আমাদের বিশেষ আগ্রহ আছে এইজন্য যে, এটা আমরা আমাদের শিশুদের মধ্যে তার উত্তরণ ঘটায়েছি; যেমন খেলা “গোইং টু জেরুজালেমে” ঘেরকে সেইরকম ভাবে ভাঙ্গা হয়।
(বাংলা চার ইংরেজী আট) চার আকৃতির গোলক নিয়ে যায় সর্পিল নাচে যা নিচে বর্ণনা করা আছেঃ এটা চূড়ান্ত সময়ের প্রথমেই আসে দ্বৈত (রোমান হরফ এস) “S” কালাহারি মরুভূমির বুশম্যানদের মধ্যে আমরা তা দেখতে পাই এবং আবার আমরা ঘন ঘন সাক্ষৎ পাই তরবারি ঘুরাতে ও ইউরোপের অন্য আকৃতির নাচে । সর্পিল নাচের সঠিক যাত্রা শুরুর কেন্দ্র যদিও স্বছন্দে গোল করা যেটা চক্কর থেকে উন্নত হয়েছে। যেমন আমরা দেখেছি
মাঝখানকে কেন্দ্র করে খুব ঘনিষ্ঠভাবে গোল হয়ে ঘুরার নাচুয়েগণ সামনাসামনি হয় অথবা যা তারা ঘুরে এটাই সাধারণ গোল হবার গঠনশৈলী বা ফরম। নারী পুরুষ নাচুয়েগণ একটা গোলক বা গোল ঘের বা চক্র গঠন করে। কিন্তু এটাও হতে পারে যে নাচের আঙ্গিনা গোল গঠনের হতে পারে নাচুয়েগণ না।
পরেরটা যার ঘের গঠনের পর্যাপ্ত সদস্য হয়ত নাই শুধু বৃত্তাংশ হতে পারে এবং যখন ঘুরতে থাকে তখন বর্ণনা করে গোল হয়ে ঘুরছে। নাচুয়েগণ গোল হয়ে হাঁটে। যখন নারী পুরুষ এই ফ্যাশনে গোল হয়ে হাটে এবং চক্কর অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে এই মার্চকে যুক্ত করে, চক্কর, গোল অথবা চাকা আকৃতি স্বাধীন হয়ে যায় এবং ‘উন্মুক্ত, ক্রমাগত অঙ্গভঙ্গিতে মূল-চক্র গোলক মূল্যহীন হয়ে পড়ে এবং যা শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে অদৃশ্য হয়ে যায়।
তখন নাচুয়েদের সারি এক রকম সাপের মত হয় যা সমস্ত বাড়ীর উপরতালা নিচতালা ঘুরাফেরা করে, পার্শ্ববর্তী কুঁড়েঘরে, এবং শহরের রাস্তায় সর্বদা নেতাকে অনুসরণ করে তার পদক্ষেপ সঠিকভাবে সব সময় অনুকরণ করে; এই অঙ্গভঙ্গির আকর্ষণ।
বর্ণাঢ্য এবং আশ্চর্যজনক বৈচিত্রময় পথে এই নাচ পরিচালিত হয়। মুক্ত গোল জার্মানীর Langtanze এবং প্রভেন্স্যাল farandoule র মত আমাদের বল-রুমের Polonaises 3 _cotillons এর মধ্যে বেঁচে আছে। এখন আমরা সাপ শব্দ ব্যবহার করি- খুব খোলা গোল সর্পিল নাচ হয়ে উঠে। পরবর্তী অংশে আমরা এটার অদ্ভুত গঠনশৈলী এবং এর অর্থ আলোচনা করব।
আরও দেখুনঃ