আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – গঠন ও আকৃতি।যা “যুগ যুগব্যাপী নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
গঠন ও আকৃতি
আমরা প্রায় সব দেহভঙ্গিমার ব্যাপারে দেখি খোলামেলা, চলমান উচ্ছাসপূর্ণ গঠন-আকৃতি। ইন্ডিয়ানদের খোলা সুরে প্রশস্ততা ও পুনরাবৃত্তির অভাব লক্ষ্য করা যায়। এটার (থিমের) বিষয়বস্তু ছোট ছন্দময় গঠন ও আকৃতি, প্রায় শুধু দুই স্বরে, পরিবর্তনশীল ও কোণ বিশিষ্ট ।
এটা পড়ে যাওয়া ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে একত্রে বাজান হয় যেমন একটা পাথর নিচে ধাপে ধাপে গড়ায়ে পড়ে। মূল শিল্পউপাদান সর্বদা উচ্চস্বরে শুরু হয় এবং একটা ঘটনার সঙ্গে আর একটা ঘটনা যুক্ত হয়ে সামগ্রিক বিষয়বস্তু গঠিত হয়। মেলেনেশিয়ান এবং অবশ্য প্রায় এশিয়া বিষয়ক সুর ক্ষুদ্র মূল শিল্প উপাদান থেকে কখনই জন্ম লাভ করতে পারে নাই।
এটা যেমন এশিয়া বিষয়ক ও মেলেনেশিয়ান লোকজনের নাচের বিপরীতে পরিচ্ছন্ন বাঁক নিয়ে অগ্রে দোলে প্রায় জাঁকাল প্রশস্ততায় ও সমৃদ্ধ গোল-চক্রে ও বিভিন্ন আকৃতিতে কিন্তু পদক্ষেপের সারিব্ধতায় সাধারণতঃ ইন্ডিয়ানদের মত সুসজ্জিত ও ফাঁকা * (স্বরলিপি-৭,-১৫)। “সংযত ভঙ্গিমায়” পরিপক্ক লোকজন কখনই এই ফ্যাশনের খন্ড-রচনা গঠন ও আকৃতি করে না।
এর বিপরীতে আমরা এর মধ্যেই ক্যামেরুনের প্যাংউইদের দিকে নির্দেশ করেছি। আমরা অবশ্যই আর একবার তাদের গানের খন্ড অংশের দিকে লক্ষ্য করব * (স্বরলিপি-১৭), এখানে সুর ছয়টি স্বর নিয়ে গঠিত। এমনকি প্রায়ই এটা অল্প হয়ে থাকে, অষ্টকের পরিসরে এটা খুব কমই পৌঁছতে পারে । পদক্ষেপগুলি খুব অল্পই সমগ্র স্বরকে অতিক্রম করতে পারে।
কিন্তু এটা না যেটা এইসকল অল্পস্বরকে মনে হয় এত পরিচিত করে, আমাদের এত ঘনিষ্ঠ যেটা মনে করায় “প্রায়ই ইউরোপীয়ান ফোক (লোকগানের) সুর সমূহ” যা ভন হর্নবষ্টল উল্লেখ করেন। এটা তার চেয়েও পরিস্কার সুসামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্নঃ
৬ অষ্টক + ১ চতুর্থাংশ / ৪ অষ্টক + ১ অর্ধেক
৬ অষ্টক + ১ চতুর্থাংশ / ৪ অষ্টক + ১ অর্ধেক
এবং এটার সঙ্গে দুই গণনার সূচনা শব্দগুচ্ছ শেষ হয় অর্ধ-স্বরের উত্থান পতনের প্রবলতায় এবং উত্তরপূর্ণ শেষ শব্দগুচ্ছ শেষ হয় সম্পূর্ণ স্বরের উত্থান পতনের সঙ্গে বলবৃদ্ধিতে একদম যেভাবে আমাদের টেক্সটবুক নির্দেশ করে। এটা আমাদের লোকগীতির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রকৃত “সংক্ষিপ্ত সময়” যা ষষ্ঠ পরিসরে পরিমিত।
ইউরোপীয় প্রভাব বলয়? সেই রকম কিছুই নাই। অন্যদিকে এটা পৃথিবীর সমস্ত অংশে দেখা যায়। অরিনোকা জেলার ম্যাকুইসী নারীগণ গান গায় * (স্বরলিপি-১৮) তে ধারণাকৃত গণনায় এবং মালাবারের শিশুগণ আমাদের (স্বরলিপি-১৯) এর মত ললিত সুরে তালে তালে গান গায় ।
সকল সন্দেহ শুদ্ধ হয়ে যায় যখন আমরা জানতে পারি সাদা মানুষের সভ্যতার সম্পূর্ণ স্পর্শহীন থেকে মালাক্কা জঙ্গলের সিমাঙ্গগণ শুধুমাত্র একইরূপ সময়ের পরিমাপের গঠন প্রকৃতি বজায় রাখেনি বরং তাদের অসম্পূর্ণ রচনা খন্ডে ক্রমোন্নত এই গঠন শৈলী দেখায়েছে যা ইউরোপীয়ানগণ প্রকৃত পাশ্চাত্য বলে দাবী করতে পছন্দ করে।
তাদের মূল শিল্পউপাদান দ্বিগুণ অথবা চতুগুণ সময়ের যা সম্পূর্ণভাবে সর্বদা দুই গণনার সংখ্যা দিয়ে গঠিত * (স্বরলিপি-২০)। এই উদাহরণগুলি সবচেয়ে আদিম জনগোষ্ঠী সিমাঙ্গ, কেনটাদের থেকে নেওয়া যারমধ্যে পাওয়া যায় মূল শিল্পউপাদানের পুনরাবৃত্তি যেমন কার্নিসের নিচে সৌন্দর্যময় কারুকাজ।
আমরা যেমন একস্তরের নিচে আর এক স্তরের মধ্যে অল্প উচ্চকৃষ্টির কিছু না কিছু একই ধরনের দেখতে পাই। আমি দুই উদাহরণ উল্লেখ করছি যেটা ১৯৩০ সালের মার্চ মাসেমিশরে আমার নিজের কানে শোনা। প্রথমটি মিশরের তিনজন পথ-গায়ক অসংখ্যবার পুনরাবৃত্তি করে পাচ্ছিল।
তারা নিজেদের সঙ্গে সঙ্গত করছিল স্থানীয় নামের “টার” বা ফ্রেম ঢোল frame drum এবং স্থানীয় নামের ডারবুকা (বিকার ঢোল) (বাংলা ঢোলকের সাদৃশ্যময়), দ্বিতীয়টা হল অল্প কিছু পরিবর্তন করে, কিন্তু অন্যভাবে পরিবর্তন ছাড়া বিষয়-বস্তুর উন্নয়ন ঘটায়ে ডারবুকা বাজান গানের নেতাসহ চৌদ্দজন নিউবিয়ান বারবার আসোয়ানের নীল নদের ফালুকার উপর সমবেত ভাবে গান গায় (তারা নিজেরা দাঁড় টানে না) * (স্বরলিপি-২২ ও ২৩)।
এইরূপ মূল শিল্পউপাদানের সঙ্গে দুই গণনার সুষম গঠনের প্রত্যুত্তর থাকে কিন্তু এমন কি উচ্চস্তরের সিমাঙ্গগণ ও উত্তর দেয় এইরূপে আরো অগ্রশীল চার গণনার ফরম সৃষ্টি হয়ে উঠে * (স্বরলিপি-২০)। এবং সিমাঙ্গদের মত এত নিচু যে পিগমি-কৃষ্টি এমনকি তারমধ্যেও আমরা শেষপর্যন্ত প্রথমটার একটা উঠতিভাব দেখি এবং নিম্নগামীতা শেষপর্যন্ত দ্বিতীয়টার দুই গণনার পদে দেখতে পাই* (স্বরলিপি-২৪)।
যদি আমাদেরকে সামঞ্জস্যের জন্য ( স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণ যে শব্দে উচ্চারিত হয় তা ছাড়া অন্য শব্দ) বর্ণশব্দের বিপক্ষে এই গানের গঠন শৈলী মনোনীত করতে হয়, এটাকে অবশ্য সম্পূর্ণভাবে নাচের গানের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে নিতে হবে। ঘনিষ্ঠ সংঘবদ্ধ নাচের বৃহৎ অংশ নারী-পুরুষ দ্বারা বর্ণ-শব্দের বিপক্ষের গঠন শৈলীর ভিত্তিতে গাওয়া হয়েছে অথবা গানের নেতার প্রতিউত্তরে ও সমবেত ভাবে, তাঁছাড়া এই মিউজিকের গঠন শৈলী ঘনিষ্ঠ সংঘবন্ধের (নাচ) মধ্যে সীমাবদ্ধ।
প্রতি উত্তর দেওয়ার এই ধরনের গান বিভিন্ন ভাবে পরিচালনা করা হয় : গানের নেতা ও সমবেত গায়কদল একই সময়ের দৈর্ঘ্য পর্যন্ত গেতে পারে যেমন সিমাঙ্গদের মধ্যে (গাওয়া হয়) অথবা আন্দামানীয়দের গানের নেতার গঠন শৈলী তৈরী করে নিবার স্বাধীনতা আছে। সমবেত ঐক্যতান সংক্ষিপ্ত করণেও কঠোর নিয়মসিদ্ধ গঠন শৈলীর উপর ঐতিহ্যগত বিধি-নিষেধ আছে।
আমাদের আছে এই আকৃতিতে তার সবচেয়ে প্রান্তিয় পর্যায়, যখন গানের নেতা ও সমবেত গায়ক দল একই মূল বিষয়বস্তু পর্যায়ক্রমে গেতে থাকে, যেমন আসোয়ানে নীল নদে নৌকার গান * (স্বরলিপি-২৩)। জাভার কাছে ম্যাডোরাতে চারলাইন পুনরাবৃত্তি করা হয়।
এখানে আবার সেই বৰ্গসূচক গঠন শৈলী ! এই সমস্ত উদাহরণ থেকে একটা অবিচ্ছন্ন ধারা চলে আসছে ইউরোপীয় লোক-নাচের প্রতি-উত্তর করা পান এবং মধ্যযুগীয় রাজনা জাত নাচের “সময়”। এখানে আমরা এই ব্যাপারে যোগ করতে পারি যে, প্রতি-উত্তর করা গানের বিরাট অংশের নেতৃত্ব দেয় নারীগণ ।
এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে, দক্ষিণ আফ্রিকার হিরেরো নাচের জগতে প্রসারিত ভঙ্গিমার প্রান্তিক নমুনা যাতে গানের নেতা আছে কিন্তু প্রতি-উত্তর দেবার সমবেত দল নাই। “প্রায় ত্রিশ চল্লিশ জনের পুরুষ একটা গোলক তৈরী করে তাদের গায়ে লাল রঙের গিরিমাটি ও মাখান চর্বি ফোটা ফোটা ঝড়ে, দুইজন নাচুয়ে ও একজন গানের নেতা মাঝখানের জায়গা নেয়।
গানের নেতা তাদের প্রধানের সমস্ত গুণাবলী গান গেয়ে গায় এবং সম্ভবতঃ তাদের প্রিয় বৃষগুলিও তাতে থাকে এবং অন্য দুই নাচুয়ে যখন নাচতে নাচতে বড় বড় লাফ দেয় সেই সময় গায়ক হাতে তালি দেয়। গোলকে থাকা লোকজন পা দিয়ে পদাঘাত করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা কম্পিত হতে থাকে” ।
ভিলোটিউ নামক একজন ফরাসী একশত বৎসর পূর্বে তাৎপর্যপূর্ণ সংঘবদ্ধ নাচসমূহ ও তাদের মিউজিক লিপিবদ্ধ (রেকর্ড করা) করেন, সমরূপ বৃষ্টির যেটা আমরা নীল নদের নৌকার গানে পেয়েছি। তাদের দুই সারির নাচুয়ে থাকে এবং দুই সমবেত গায়ক দলও থাকে, তারপর এক সারি অন্য সারির দিকে তালি দিয়ে, পদাঘাত করে ও গান গেয়ে আগায়, তখন যেমন তারা পিছনে ফিরেতে শুরু করে অন্য দল সামনে গান গেয়ে অগ্রসর হয় *
(স্বরলিপি-২৫-২৬)। সংযত গানের গঠন শৈলী ও ফিরতি-নাচ, মিউজিকে ও নাচের কদমে উপর নিচ করা ও সামনে পিছনে যাওয়া এইগুলিকে সম্পূর্ণ সাধারণভাবে একীভূত করে নেয় সামগ্রীকভাবে স্বীকৃত হতে পারে। এই ছন্দের দোলার জন্য।
সম্পূর্ণভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মত উদ্বিগ্নতা ও পরিতৃপ্তির গতিপথে একটার সঙ্গে অপরটা জড়ান থাকে। সামনে পিছনের শরীরের ভঙ্গিমা উদ্বিগ্নতা ও তৃপ্তির সেই একই গতিপথের প্রতিফলন, যা মিউজিক গঠনের সঙ্গে সূচনা ও সমাপ্তির (শুরু ও শেষে) পদসমুহ শেষ হয় অর্ধ ও পূর্ণ স্বরের উত্থান পতনে ।
এটা ঐগুলির মধ্যে একটা মূল ভিত্তি সম্পন্ন। পরিচিতি যা বুদ্ধিজীবির ব্যাখ্যা কৌশলে পরিহার করে কিন্তু সচেতন মনের জনগণ দ্বারা স্বীকৃত একটা প্রিওরি (Priori) । সাধারণভাবে সামনে পিছনে দিক্ পরিবর্তনে মিউজিকের দিক থেকে তার একটা ভিত্তি আছে।
ওলান্দাজ নিউগিনির প্রত্যন্ত অঞ্চলে ম্যারিন্ড-এনিমদের সম্পর্কে ওয়ার্জ মন্তব্য করেন : “গ্যাড-জী গেয়ে এবং ঢোলের বিট সঙ্গতসহ সকল নাচুয়ে কয়েক ধাপ সামনে যায়, দাঁড়ায় নিশ্চল কয়েক মূহুর্তের জন্য এবং তারপর যখন পরবর্তী মূল গান গাওয়া হয়, দৌড়ে আগের স্থানে ফিরে আসে”।
এখানে বাহ্যিক কর্ম তৎপরতার সম্পর্ক এখন ও সম্পূর্ণ স্কুল কিন্তু হিন্দুস্থানে এটা পরিস্কারভাবে সামনে দাঁড়ায় এবং সম্পূর্ণ উন্নত ধরনের। যখন আমরা বক্তৃতার ঢঙ্গে Amphibrachic পা কবিতার চরণে বলি, আমরা মধ্য অংশে অল্প জোর দেই এবং তৃতীয়টার পর একটু বিরতি দেই :- – – . . হিন্দুগণ এইটা মিউজিকে প্রয়োগ করে থাকে। পঙতির প্রেক্ষাপটে বিরাম যেমন আছে প্রকৃতপক্ষে সুরে কোন বিরাম রাখে নাই কিন্তু তারচেয়ে এক রকমের ছেদ দিয়ে ভঙ্গিমা সম্পন্ন করে যার নিজের সময় মূল্যআছে।
* (স্বরলিপি-৬) নীরব কোয়ার্টারের (এক চতুর্থাংশের এক অংশ) টেক্নিকাল নাম Khali বা খালি। একজন গায়ক বসে ও সময়ে তাল দেয়, তার উরুতে হাত দিয়ে আঘাত করে ১,২,৩ কিন্তু ০ (শূন্য) কে নির্দেশ করে তার হাতের তালুকে উপরের দিকে উঠাতে। সেই একই সত্য পঙতির দৈর্ঘ্যের জন্য যা সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ পরিমান নিয়ে গঠিত : দীর্ঘ পরিমানের দ্বিতীয় অর্ধাংশের উপরে একটা বিরাম তাল হয়। * (স্বরলিপি-৭)
যখন এই পরিমাপ ধরনের নাচ নাচা হয়, নাচুয়ে এই বিরাম তাল অঙ্গভঙ্গির প্রতিবন্ধক বলে অনুভব করে : সে তার পা পিছনে রাখে। এই তিন স্বরের পা (পা চালান) অথবা আমরা যেমন এটার তর্জমা করি, চার তালের পরিসর নাচে আসে : ডান সামনে, বাম সামনে ডান পিছনের দিকে এবং এইরূপ।
অন্য ধরনের পরিমাপ তার অনুসারে হয় : * (স্বরলিপি-৮) এটা কথা ও নাচের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘনিষ্ঠতা দেখায় এবং পিছনে পদক্ষেপ ও মিউজিকের মূল্যে মধ্যেরকার্যকারী সংযোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ করে প্রসঙ্গক্রমে ভাবনগরের রাজকীয় পরিবেশনার যুবতীদের নাচের গানে তালের ফাঁক ষ্টেঞ্জয়েজ আমাদেরকে নিশ্চিত করেন, পিছনের ধাপ দিয়ে প্রয়োগ করা হয়, অবশ্য স্বরলিপি-২৭ সম্মিলন নির্দেশ করে।
উচ্চ কৃষ্টির উপাদানের সঙ্গে আমরা লেনদেন করছি এটা ভাবা একটা ভুল হবে। সেই একই গীত প্রধান্য পায় হিন্দুস্তানের আদিম গন্ডদের স্থানীয় গোলক নাচে এবং চার নাচুয়ের গোল-নাচ গুর্খা ও গরওয়ালীদের মধ্যে : প্রথম কোয়ার্টার : সব তালি ।
দ্বিতীয় কোয়ার্টর : নাচুয়ে বি এবং ডি তাদের ডান তালু রাখে বিপক্ষের এ ও সির বাম তালুতে। তৃতীয় কোয়ার্টার : সব তালি। চতুর্থ কোয়ার্টার : বি এবং ডি তাদের বাম তালু বিপক্ষের এ এবং সির ডান তালুতে। প্রতি প্রথম তিন গণনায় নাচুয়ে একটা সামনে ধাপ নেয়, চতুর্থতে, তালের ফাঁক (খালি), এক ধাপ পিছনে * (স্বরলিপি-২৮)। অথবা একশত পাঞ্জাবী আগুনের চারদিকে দুই ঘেরে নাচে, সামনে পিছনে ঘুরে।

ফক্স ট্রেঞ্জওয়েজ বলে যাননি যে কিভাবে সামনে পিছনে অঙ্গভঙ্গি ওবো (এক রকম কাঠের বাদ্যযন্ত্র) সঙ্গতের সঙ্গে মিল রাখে যদিও প্রত্যেক অঙ্গভঙ্গির জন্য সেখানে দুই বা চার গণনার পরিসর যেটাই থাকুক না কেন। কিন্তু এটা সত্যিকারভাবে কোন প্রকৃত ব্যাপার না। সুর * (স্বরলিপি-২৯) প্রকৃতপক্ষে ইউরোপীয়ানদের “অল্প কাল” এর মত তৈরী করে সূচনাপদ চার গণনা দিয়ে এবং সমাপ্তিপদ চার গণনা পরিসরে নির্দেশ করে সামনে ও পিছনের অঙ্গভঙ্গি যা প্রতিপদ যতটুকু এটার মধ্যে করতে পারে ।
কোন নাচে কোন ধরনের সুর চলে তা আমরা প্রায়ই জানি না। কিন্তু আমরা শিখেছি যে, যেকোন জনগোষ্ঠীর ফিরতি-নাচ থাকলে তাদের সুষম সুর সমভাবে থাকবে। যদি আমরা এই সকল কেস যুক্ত করি তাহলে উপাদান জমা হয়ে উঠে। তার মাত্র দুইটা উদাহরণ এখানে উল্লেখ করব : একটা সিংহলের (শ্রীলঙ্কা) গানে নিহিত থাকে একক, সমবেত এবং ঢোল সঙ্গতে * (স্বরলিপি-৩০) এবং অন্য ররোইমা ও অরিনোকো লোকজনের মধ্যের গান থাকে।
দূর্ভাগ্যবশতঃ কচ-গাণবার্জ একজন আশ্চর্যজনক পর্যবেক্ষক হয়েও আমাদেরকে এখানে অসহায় অবস্থায় ত্যাগ করেন। আমাদেরকে যে অল্প কিছু দিয়েছেন তা থেকে শুধু আমরা লিখেছি যে, অনেক ক্রমাগতচালু নাচের মধ্যে সেখানে অল্প কিছু মাত্র আছে যা নাচ হয় “এখন সামনে পিছনে”। একইভাবে এই অভিযাত্রায় নাচের গানের মধ্যে সেখানে কিছু উল্লেখ করার মত পূর্ণঙ্গ গানের গঠন আছে যা ভন হর্নবষ্টল লিখে গেছেন।
যাইহোক, এই তুলনা অবশ্য অর্থ করার নেয়া যাবে না যে, গানের গঠন থেকে ফিরতি-নাচ জন্ম নিয়েছে অথবা তার উল্টা। এটা শুধুমাত্র সঠিক বলে প্রামণ করে যে, উভয়ে একই স্বয়ংক্রিয় প্রবৃত্তি থেকে উৎসারিত হয়েছে এবং এই স্বয়ংক্রিয় প্রবৃত্তির সঙ্গে সংযত দেহভঙ্গিমা একই সঙ্গে ঘটে।
আমরা এখন বুঝতে পারি কেন সমগ্র বিশ্বব্যাপী এই সেই নারীগণ যারা এই গঠন শৈলী অধিকতর পছন্দ করে। ওটা হল তারা যারা আমাদের জন্য দক্ষিণ-আমেরিকান, মালাক্কান এবং আফ্রিকান উদাহরণের গান গেয়েছে এবং এটা সহজ হবে তাদেরকে যুক্ত করতে তাদের জন্যই।
যাইহোক, আরো তাৎপর্যময় ব্যাপার হল, যে সমস্ত লোকজনের মধ্যে যে স্থানে পুরুষগণ প্রসারিত সুরগুলি উদ্ভাবন করেছে, নারীদের সুরগুলি উপজাতীয় প্যার্টানের অনুরূপ মিল খায় না কিন্তু সংযত ধরনের এমনকি সঠিক গানের গঠন শৈলীতে যেভাবে আমরা নাচের মধ্যে দেখেছি।
আমরা একটা হৃদয়গ্রাহী চিত্র পেয়েছি। যার মধ্য দিয়ে দেখা যায় ভন হর্নবষ্টলে মিউজিকের পরিশিষ্ট থেকে কচ-গার্নবার্জের ররোইমা কাজ ঃ ম্যকুইসির এবং ভাপিকসায়ানাদের একুশটা প্রথাগত গানের মধ্যে ইউরোপীয় গানের দৃষ্টিভঙ্গিতে এগারটা ফরম বা গঠন শৈলী ছাড়া নয়টা সঠিক গানের গঠন শৈলী এবং একটা সন্দেহজনক পর্যায়ে আছে। যাইহোক, শেষ দশটার মধ্যে সাতটা নারীদের গান অন্যগুলির নিরপেক্ষ শিরোনাম দেয়া হয়েছে “সমবেত গান” ।
আমরা পৃথিবীর অন্য দিকে এর সমান সমান দেখি : রুমানিয়ানদের মারামুরিসের মধ্যে আট রকম নাচের টাইপ যার মিউজিক বেলাবারটক শত শত অংশে সম্পাদিত করেছে, তার দুইটা শুধুমাত্র নারীদের নাচ সংযত গানের গঠন শৈলীর সুর দিয়ে বিশেষভাবে গঠিত ।
আগে যেটা প্রায় হত এই ঘটনা সে ধারণার পরামর্শ দেয় যে, আদি থেকে পরিপক্কতায় সোজাসুজি উন্নয়ন, সহজ সরল থেকে জটিল ও বিস্তারিত, আর যেন এইভাবে মিউজিকের প্রাচীন (বা পূর্ববর্তী প্রাক্ ইতিহাস কালের) ইতিহাস বিবেচনা করা না হয়।
এই ব্যাখ্যা যে কোন ভাবেই রীতি বিরুদ্ধ, যখন পরিবর্তীত হয়েছে বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রণালী যা আপাতঃদৃষ্টিতে যুক্তিযুক্ত, দূর্ভাগ্যজনক যে, নিজেদের দ্বারা বিচার করানোর অভ্যাস সম্পূর্ণ ভিন্ন মন মানসিকাতায় অনেক যুগ আগেই আমাদের থেকে মুছে গেছে। “আদিম” এবং “সরল” এইগুলি সত্যই একটা ধ্যান-ধারণা যা আমরা প্রায়ই খুববেশী ব্যবহার করি ।
আমাদের কাছে যা স্বাভাবিক মনে হয় তা হয়তবা ঐ সকল প্রাচীন কৃষ্টিসমূহে তদরূপ ধরা হত না, আমাদের কাছে যা জড়িত এবং ক্ষতিগ্রস্থ বলে ধরা হয় আদিমদের কাছে হয়তবা তা পৃথিবীর খুবই স্বাভাবিক জিনিস, কারণস্বরূপ বলা যায় সে আমাদের প্রবৃত্তি ও আমাদের অভ্যাসের সঙ্গে জড়িত না।
শেষের কতকগুলি প্যারাগ্রাফের মধ্য দিয়ে যে উপসংহার আমাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করে আমাদেরকে অত্যাবশ্যক করেছে নাচের ইতিহাসের জ্ঞান মিউজিকের ইতিহাসে প্রয়োগ করতে এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যে মিউজিকের উন্নতি বুঝতে একই মৌলিক উপাদান থেকে তারা তাদের নাচগুলিও নির্দিষ্ট করে ।
আমাদের নাচের অঙ্গভঙ্গির তদন্ত (অনুসন্ধান) দুই শক্তিশালী বিপরীতমুখী মৌলিক কৃষ্টির উপর ভিত্তি করে আছে যেটা হল গিয়ে ভেড্ডা এবং আর হল আন্দামানীয়। ভেড্ডাগণ, আমরা দেখেছি যে তারা নাচের অনুরক্ত না। তাদের নাচ খেঁচুনিযুক্ত এবং শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।
আন্দামানীয়গণ নাচের অনুরক্ত। তাদের নাচ স্বাধীন এবং শরীরে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বৈপরীত্য আরো অধিক সম্প্রসারিত হতে পারে প্রকৃত নাচের লোকজনের মধ্যে এবং কম মেধাসম্পন্ন নাচে, কম স্বতঃস্ফূর্ত লোকজনের মধ্যে আরো বৃহত্তর বৈপরীত্যে।
এই পার্থক্য ভিত্তি করে নাচে, মনে হয় এই একইভাবে প্রকৃত মিউজিকেরও পার্থক্য। কি উল্লেখযোগ্য বিপরীতবস্তু! একদিকে আমরা দেখি ভেড্ডাদের কাঠোর প্রায় অত্যাচারিত পারল্যান্ডো অন্যদিকে আমরা দেখি আন্দামানীয়দের সুর ও শুধুমাত্র তিনটি সংক্ষিপ্ত স্বর কিন্তু স্বাধীন, চলমান এবং একক ও প্রত্যুত্তর দেয়া ঐক্যতান ।
বোধগম্যভাবেই এই পার্থক্য সমগ্র বিশ্বেই ছড়ায়ে আছে। এই বৃহৎ দ্বন্দ্ব শরীরের সামঞ্জস্যহীন নাচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাচের এবং গানেও একই সমপরিমাণ দ্বন্দ্ব আবৃত্তিমূলক গান এবং সুরেলা গানের মধ্যে আছে। ভেড্ডাগণ আবৃত্তিমূলক এবং কুবু এবং প্যাটাগোনিয়ান সম্পর্কীত সুর “আদিম” না কিন্তু তারা সম্পূর্ণ নির্দিষ্ট দলের আদিম জনগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
অধিকন্তু এটা সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়বস্তু- এই কথা, গান আরো উন্নত কৃষ্টিতে পথ করে নেয় অন্য উপায়ে তুলনামূলক ভাবে যার সমৃদ্ধ স্বর গঠন আছে। এটার প্রধান অঞ্চল ফকিরতন্ত্র। যেখানে কবিরাজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে, মিউজিক সর্বজনীন গানের সুরে আবৃত্তি করে চলে।
ওঝার মন্ত্রতন্ত্র পাঠ (ধর্মীয় গীত) হতে এটা পূর্ব পুরুষাগত একটা সুদূর শৃঙ্খলিত ধারা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত যেটা উচ্চতর ধর্মের সর্বজনীন ধর্মীয় অনুষ্ঠান : এটা “শম” হিন্দুদের মধ্যে, লিনেন ইহুদিদের এবং লেকটিও খৃষ্টায়ান গীর্জায়।
একটা পার্শ্বপথ “আধ্যাত্মিক মিছিল” সহকারে ধর্মীয় স্তব সহযোগে নিয়ে যায় মাইক্রোনেশিয়ান ও পলেনেশিয়ান নাচুয়েদের জগতে। যদিও হাওয়াইয়ান ও মারকুইন দ্বীপপুঞ্জে স্তুতি গানের স্বর ভেড্ডাদের আধ্যাত্মিকতা থেকে পার্থক্য সৃষ্টি করে সেটা আমাদের পক্ষে নির্ণয় করা কঠিন কাজ, যাইহোক, আমরা তাদের মহৎ শিল্প নৈপূণ্য উপলদ্ধি করতে পারি ।
এমনকি কুবুদের মধ্যে আবৃত্তিসুলভতা কখন কখন একাকী দাঁড়ায়। সাধারণতঃ সর্বোচ্চ উত্তেজনায় কন্ঠস্বর শুরু হয় উচ্চ স্কেলে বেঁধে এবং নামে হঠাৎ করে উদাসীনভাবে আবৃত্তিসুলভ সুরে খুবই নিম্ন স্কেলে সুর বাঁধায়। স্তুতিগান হর্ষোল্লাসের কারণ হয়। বাধাহীন চিৎকার, যার থেকে কন্ঠস্বর হঠাৎ নেমে যায় কোন নির্মিত অগ্রগতি ছাড়া, উত্তেজনা ও তৃপ্তির মাঝে কোন স্তরবিন্যাস ছাড়া- যেটা হল হর্ষোল্লাস।
যেখানে ফকিরতন্ত্র সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা সেখানে এই সব ধরনের উপাদান পাশাপাশি দেখতে পাই। তৃতীয় উপাদান সবচেয়ে প্রচন্ডভাবে উত্তেজিত, জোড়ালো, মর্মস্পর্শী উচ্চারণ এবং চতুর্থটি কোন পরিচ্ছন্ন, সুষম গানের গঠন শৈলী ছাড়া। এটা খুব পরিস্কার দেখা যায় উত্তর-আমেরিকায় ।
ফকিরতান্ত্রিক ভেড্ডিওড বৈশিষ্ট্য অনেক ব্যাপারের মধ্যে- যেমন খেঁচুনিযুক্ত নাচ- প্রসারিত স্টাইলের সঙ্গে অতিক্রান্ত হয়। আমরা জানি উভয়ের দিক্ থেকে আমাদের উত্তর-আমেরিকার এবং পূর্ব-আফ্রিকার উদাহরণসমূহ সত্য হবে। প্রশস্ত পরিসর এবং চওড়া লাফ ইন্ডিয়ানদের মধ্যে সংযুক্ত যার সঙ্গে খেঁচুনিযুক্ত প্রাথমিক শিহরণ ও সুরেলা প্রাণবন্ত কন্ঠের নিম্নগামীতা আছে; নিগ্রোদের মধ্যে আছে একঘেয়েমির বক্তৃতা ।
যেকোনস্থানে নাচকে শরীরের সামঞ্জস্য রেখে বাধা ছাড়া পারফরম করা হলে, দুই মিউজিক সম্বন্ধীয় পদ্ধতি বা স্টাইল পরিস্কারভাবে পার্থক্য করা যাবে। একদিকে আমরা দেখি সুরেলা পথ যা উদারভাবে প্রশস্ত কন্ঠস্বরের স্থান পূর্ণ করে, বিরাট ধাপের ভয় করেনা এমনকি লম্পঝম্ফ এবং মনে হয় এটার ছন্দের ও ফরমের স্বধীনতায় সকল বাধা দূর করে এবং তিন, পাঁচ, সাত বিট ডবল ও চতুগুণ সময়ের গণনা ভাল মনে করে। অন্যদিকে আমাদের আছে যে সুর তা ঘনঘন পরিবর্তন করে নেয়।
গানের নেতা ও সমবেত গায়কদল, একটা সুর তার অল্প মূল শিল্পউপাদানকে বাধ্য করে কঠোর বর্ণশব্দহীন সুষমায় গানের ফরম নির্মাণে যা পরিচিত পথে সূচনাপদ শেষ হয় অর্ধ সুর প্রবাহে এবং সমাপ্তিপদ শেষ হয় পূর্ণ স্বর প্রবাহে। এই গানের গঠন শৈলী অটল ও তৎপর থাকে ছন্দে, সহজ সময় পছন্দ করে এবং সাধারণভাবে শান্ত, উদাসীন পারফরমেন্স নিয়ে আসে।এই মৌলিক দ্বন্দ্ব শুধু নাচের কার্যকর ঐক্য পরিচ্ছন্ন করে না আরো করে থাকে মিউজিকের সঙ্গে মানব জাতির আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছ সম্বন্ধ।
একই চিন্তাশীল, সহিঞ্চু, শান্ত, অন্তর্মুখী ঝোঁক যা নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যের প্রাধান্যের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করে মুখ্যত মেয়েলী কৃষ্টি এবং খাদ্য সংগ্রহকারীদের স্তর থেকে (কৃষি) বপনকারী স্তরে নিয়ে আসে, সংযত অঙ্গভঙ্গির মধ্য দিয়ে নিজেকে নাচ ও মিউজিকে স্থিতিশীল ও সুষমামন্ডিত আকুতি অনুভব করে। সতর্কতা, অসহিঞ্চু, সক্রিয়, আবেগ-প্রবণ বহির্মুখী ঝোঁক যা পৌরুষময় বৈশিষ্ট্যের কৃষ্টির আধিপত্য বিস্তার করে এবং শিকারজীবি, পশু-পালন
প্রসারিত অঙ্গভঙ্গির মধ্য দিয়ে নাচ ও মিউজিকে প্রতিফলিত করে গতিময়তা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ আকুতি । এইরূপ ইউরোপে সংযত গানের গঠন শৈলীর প্রাধান্য মনে হয় কৃষিজীবি পূর্ব-পুরুষের উত্তরাধিকার । এটা আরো তাৎপর্যময় যে উন্মুক্ত, স্বাধীন উচ্ছাসপূর্ণ অসংলগ্ন আবৃত্তির লোক-সঙ্গীত আমাদের মধ্যে আসেশুধুমাত্র বৃহত্তর……………পশু-উৎপাদক. অঞ্চল থেকে।
আরও দেখুনঃ