নৃত্যশিল্পী শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ

 আজকের আলোচনার বিষয়ঃ  নৃত্যশিল্পী শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ

 

নৃত্যশিল্পী শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ

 

নৃত্যশিল্পী শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ

কথকলী নৃত্যগুরু, শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ । ত্রিবাংকুরের এক অভিজাত ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। বেদ ও ধর্মগ্রন্থাদিতে তিনি যেমন সুপণ্ডিত, সংগীত- বিশেষত কথকলী নৃত্য ও অভিনয়ের প্রতিও তাঁর ছিল তেমনি অখণ্ড অনরাগ।

সে সময়ে মালবারের কোন ব্রাহ্মণ পরিবারে নৃত্যশিক্ষার প্রচলন ছিল না । এ কাজ তখন অত্যন্ত দোষণীয় মনে করা হত। তাই শংকরণ গোপনে কথকলি নৃত্য শিক্ষা আরম্ভ করেন। ঘটনাচক্রে একদিন তিনি পিতার নিকট ধরা পড়ে যান। পিতাও সংগীতানুরাগী ছিলেন, তাই পরের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে ভালোভাবে তাঁর নতো শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেন। পনের বছর নিরলস সাধনা করে নম বস্ত্রেীপাদ এই বিদ্যার বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

ত্রিবান্দ্রমে ১৯৩৪ খৃষ্টাব্দে উদয়শংকরের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়। প্রথম দর্শনেই রতনে রতন চিনে ফেললেন । পরে উদয়শংকর তাঁর শিষ্যর গ্রহণ করেছিলেন।

 

নৃত্যশিল্পী শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ

 

১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে কথবলী নৃত্যনাট্য-দলের সঙ্গে শংকরণ সারা উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করে প্রভুত যশ খ্যাতি প্রাপ্ত হন । ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে শংকর তাঁকে নিয়ে গেলেন আলমোড়ায় কথকলি নতো অভিনয়ের অধ্যাপক হিসেবে। এই সহৃদয় ও নিরহংকার বাপ্তিটি উদয়শংকরকে প্রাণাধিক ভালবাসতেন।

শংকরণ ছিলেন ষোল আনা সংগীত-প্রাণ। কট্টর রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হয়েও নিজে শশাচারী সাত্মিক ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও সংঘাতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন জাতি ধর্ম ভেদাভেদের অনেক ঊর্ধ্বে। এই সঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে ।

আলমোড়ায় উদয়শংকর ইন্ডিয়া কালচের সেন্টারে গিয়ে শংকরণ নটরাজের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। একদিন উদ্ভাদ আলাউদ্দীন খাঁ সাহেবকে (সে সময় খাঁ সাহেব এখানেই থাকতেন তিনি অননুরোধ জানালেন তাঁর প্রিয়তম ইষ্টদেবতা নটরাজকে সরোদ শোনাবার জন্য। নিরভিমানী সাহেব সানন্দে সম্মত হলেন। নির্দিষ্ট সময়ে সরোদ নিয়ে হাজির হলেন মন্দিরের সামনে। শংকরণ তাঁকে মন্দিরের ভিতরে গিয়ে নটরাজের সামনে বসতে বললেন। খাঁ সাহেব এই প্রস্তাবে কিছুতেই রাজি নন। বলেন : আমি সলমান হিন্দুর মন্দিরকে অপবিত্র করার স্পা বা সাহস আমার নেই। নমঃ বাদ্রীপাদ তাঁকে বোঝালেন এই ভেদাভেদ মানষের সৃষ্টি।

 

নৃত্যশিল্পী শংকরণ নমব্রুদ্রীপাদ

 

তার জন্য দেবতাকে দায়ী করে তাঁকে এই অনপেম সংগীত সুধা থেকে বঞ্চিত রাখা কি উচিত? নটরাজের সামনে বসে বাজালে তিনি নিশ্চয়ই প্রসন্ন হবেন। এই ভাবে অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে অবশ্য খাঁ সাহেব মন্দিরা- ভাত্তরে বসেই পরম তুয়ি ভরে নটরাজকে সংগীত শুনিয়েছিলেন।

কুশল অভিনেতা শংকরণ যেমন আজীবন নৃত্যনাট্যের সেবাতেই আত্ম নিয়োগ করেছিলে তেমনি তাঁর শেষ জীবনেরও অবসান ঘটেছিল নাটকীয় ভাবে।

আলমোড়া কেন্দ্রে সেদিন অন হচ্ছিল “দুঃশাসন বাদাম”। প্রায় তেষট্টি বছরের বৃদ্ধে নমস্ত্রে পান সবে মাত্র একটি দৃশ্যে অভিনয় শেষ করে এসে প্রবেশ করলেন প্রেক্ষাগৃহে। এখনি তাঁর প্রিয় শিষ্য উদয়শংকর ইন্দ্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। তিনি পরমাগ্রহে সেই দৃশ্যে উপভোগের জন্য এসে বসলেন আসনে। কিন্তু হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একটা কাণ্ড ঘটে গেল।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইন্দ্ররাপী উদয়শংকর মঞ্চে এসে নৃত্য আরম্ভ করবেন, এমন সময় শংকরণ তাঁর আসনের ওপর ঢলে পড়লেন। সবাই ধরাধরি করে তাঁকে প্রেক্ষাগৃহের বাইরের খোলা হাওয়ায় নিয়ে গিয়ে শশ্রুষা করতে লাগলেন । বেশভূষা সমেত শংকরও ততক্ষণে ছুটে এসেচেন গহর কাছে। আতবিহবল হয়ে জড়িয়ে ধরলেন গল্পের দেহ। কিন্তু শিষ্যের উষ্ণ স্পর্শ পাবার অনেক আগেই তিনি প্রস্থান করেচেন অমরলোকে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment