লোকনৃত্যের পরিচয় পাঠটি “লোকনৃত্যের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং আবশ্যকতা” বিষয়ের একটি পাঠ। লোকনৃত্যের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং আবশ্যকতা [ Definition, features and requirements of folk dance ] প্রধানত সামাজিক উৎসদ অনুষ্ঠানে লৌকিক জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দম,খরতার অভিবত্তি ঘটে যে সংহত সামাজিক নৃত্যের মাধ্যমে তাকেই বলা হয় লোকনৃত্য। সামাজিক অনুষ্ঠান কোন ব্যক্তিবিশেষের জন্য হয় না। তাই সমাজের সর্বস্তরের লোকেই এতে অংশগ্রহণ করে থাকে। এখানে একক নৃত্যের অবকাশ নেই। তবে উল্লেখ্য এই যে প্রধানতঃ সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে লোকনত্যের প্রথা প্রচলিত থাকলেও দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অনাবষ্টি ইত্যাদিতেও রাষ্ট্র দেবতাকে তুষ্ট করবার জন্যও লোকনাত্যের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই নৃত্যে শাস্ত্রীয় নিম্নমকাননের কোন বন্ধন নেই, কিংবা এতে রঙ্গমঞ্চ বা বেশভূষারও প্রয়োজন হয় না।
Table of Contents
লোকনৃত্যের পরিচয়
লোকনৃত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই যে, এর পরিশীলনে কান শিক্ষিতপটুত্বের প্রয়োজন হয় না। এই অনুষ্ঠানগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হলেও বংশপরম্পরায় মালনাত্যের আঙ্গিক ক্রমে পরিবর্তিত হয়ে এর একটা বিশেষ আঙ্গিক গড়ে উঠেছে।
লোক সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে নৃত্য-গীত। মানুষের প্রথম আবির্ভাব থেকেই নৃত্য-গীত তার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে। সমাজের নানা বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নৃত্য-গীতেরও বিবর্তন ঘটেছে এবং ঘটছে। মাননুষের বাঁচার তাগিদে দেহের মত মনেরও আহার্যে’র প্রয়োজন সিদ্ধ হতে পারে একমত ননৃত্য-গীতের মাধ্যমে। আর আনন্দের প্রকাশ ছাড়াও লোকনৃত্যাদির অনুষ্ঠান সামাজিকভাবে বহর ভাবের আদান প্রদানেও সহায়তা করে এবং সকলের মধ্যে একটা আত্মিক বন্দন গড়ে ওঠে।
লোকনৃত্য লৌলিক জীবনে সমবেতভাবে যে ছন্দের স্পন্দন জাগ্রষ করে তার অনুসরণে কম মথের সমাজজীবনে আসে আনন্দের প্রবাহ, জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। তখনই বলা যায় “আনন্দেন জাতানি জীবস্তি’।
লোকনৃত্যের বিভিন্ন বিভাগ এবং আবশ্যক অবয়ব : আঙ্গিক বিনিময়ের তারতম্যে লোকন,তাকে মোট দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে: –
(১) “স্বতঃস্ফ‚ত সহজ, সাবলীল সমবেত গোষ্ঠী নৃত্য।
(২) জটিল, তাল, লয়, ছন্দে শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের গতি, চারাঁ, চলন, উৎপ্লাবন, ভ্রামরী ও হস্তকমে পাষ্ট লোকসমাজের নাট্যধর্মীয় নত্যাদি— ‘কাল বিচ’, ‘বাউল’ প্রভৃতি একক নৃত্য ।
ভৌগোলিক সংস্থা, পরিবেশ, প্রথা, রীতি ও ব্যবহৃত আঞ্চলিক কথ্যভাষা ভেদেও | রুচি রসবোধের দৃষ্টিভঙ্গি ও আঙ্গিক প্রয়োগকৌশলের পার্থক্যহেতু লোকন,তোর তিন শ্রেণী:-
(১) ধর্মীয় আচরণথম্ভে নৃত্যোদি- যে সব নৃত্যে বৎসরের বিশেষ তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন, গাজন ন ত্য, কালীকাচ, শবখেলা, গীবিতী — বিশাল নৃত্য, মদনকাম, মেচেনী নৃত্য।
(২) সামাজিক উৎসবে অনুষ্ঠিত নৃত্যাদি— বহরংপী, কাঠি নৃত্য, লেটো প্রভৃতি নৃত্য ৷ (৩) শন্তিচর্চা ও অঙ্গচালনার কৌশল,ক্ত রণনৃত্যের অঙ্গীভূত নৃত্যাদি যেমন, ঢালি, পাইকান, রায়বেশে, শেরপাদের ‘বিয়াছম নৃত্য’ [ বাংলার লোকন,ত্য ও গীত বৈচিত্র্য –শ্রীমণি বর্ধন ]।
মানুষের সামাজজীবনের সঙ্গে ধর্ম চৈতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাই ধর্মকে বাদ দিয়ে লোক-সংস্কৃতির কথা চিন্তাই করা যায় না। লোক নৃত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। নৃত্যে ছাড়া যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান জৌল,সহীন। বৎসরের বিভিন্ন নির্দিষ্ট দিনে বা মাসে নানা ধর্মীর উৎসব উপলক্ষ্যে নৃত্যান,ষ্ঠান হয়ে থাকে। যেমন, বাংলায় চৈত্র মাসে গাজন নৃত্য, চৈত্র সংক্রান্তির গাজন উৎসবে কান্দির শবখেলা নৃত্য, মদন চতুর্দশীতে মদনকাম নৃত্য ইত্যাদি।
নিম্নে বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের উল্লেখ্য লোকনৃত্যগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।
বাংলার লোকনৃত্যঃ
বাংলাদেশে তিন ধারার লোকনৃত্যের প্রচলন আছে – ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক। এসবের মধ্যে ধর্মীয় নৃত্যের সংখ্যাই বেশি। এর পেছনের কারণ হলো, এ নৃত্যের উদ্ভব হয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগে, যখন লোকসমাজে ধর্মীয় প্রভাব ছিল বহুবিস্তৃত। কীর্তননাচ, ব্রতনাচ, বাউলনাচ, গম্ভীরানাচ, জারিনাচ, ফকিরনাচ ইত্যাদির উৎসে বিভিন্ন ধর্মবোধ ও আচার-সংস্কার জড়িত আছে। ঢালিনাচ ও লাঠিনাচে সামাজিক উপযোগ এবং ছোকরানাচ, ঘাটুনাচ ও খেমটানাচে সাংস্কৃতিক বিনোদনের প্রেরণা আছে।
কোনো কোনো লোক নৃত্যে হিন্দু ও ইসলাম এ দুটি ধর্মের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। সেগুলো মূলত এই দুই ধর্মের লোকেরাই অংশগ্রহণ করে এবং উপভোগ করে। যেমন লাঠিনাচ ও ঢালিনাচে কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদ নেই। আবার ছোকরানাচ, ঘাটুনাচ ও লেটোনাচের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মুসলমান সমাজ হলেও রসোপভোগ ও চিত্তবিনোদনের জন্য এর দ্বার সকলের জন্য উন্মুক্ত। বিস্তারিত দেখুন আমাদের এই আর্টিকেলটিতে।
ভারতের অন্যান্য স্থানের লোকনৃত্য:
ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম লোকনৃত্যের প্রচলন রয়েছে। ভারতে নৃত্য অনেক ধরনের নৃত্য নিয়ে গঠিত,যা সাধারণত ধ্রুপদী বা লোক নৃত্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যান্য দিকের মত, ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকারের নৃত্যের উদ্ভব হয়েছে, যা স্থানীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী উন্নত হয়েছে এবং দেশের অন্যান্য অংশ থেকে উপাদান আত্মভূত করেছে। আমরা এই আর্টিকেলে লিংক এ ভারতের বিভিন্ন স্থানীয় লোকনৃত্যের সাথে পরিচিত হবো।
আধুনিক ও পাশ্চাত্য নৃত্যধারা:
আধুনিক ও পাশ্চাত্য নৃত্যধারা সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেশে পরিচিতি ও জনপ্রিয় হয়েছে। কিছু বিষয় আমাদের নৃত্যধারা সাথে মিশেছে। আমাদের নৃত্যশিল্পীদের অনেকেই পাশ্চাত্য নৃত্যধারাকে আমাদের নৃতরীতির সাথে মিশিয়ে নতুন আঙ্গীক তৈরি করেছেন। বিস্তারিত পড়ুন এই লিংক এ।
আরও দেখুন: