মোহিনীআট্টম জয়শ্রী মুন্দকুর

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মোহিনীআট্টম জয়শ্রী মুন্দকুর , যা ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য এর অন্তর্ভুক্ত।

মোহিনীআট্টম জয়শ্রী মুন্দকুর

মোহিনী নৃত্য আজও পর্যন্ত সাধারণের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। এই নৃত্যের ইতিহাস, প্রকরণ এবং বিষয় এখনো অবধি বিতর্কিত। একটি ক্ষেত্রে অবশ্য সকলেই একমত যে, নারীদের এই নৃত্য মাধুর্যমণ্ডিত, গীতিধর্মী এবং কমনীয়; তাই এর নাম মোহিনীআট্টম ।

কে এই মোহিনী এবং তার নাচের উদ্ভবই বা কোথায়? আমাদের পুরাণ ও রূপকথায় এমনকি নৃত্যরাজ নটরাজের বা পার্বতীর নৃত্যে, কোথাও এই প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এমনকি, ব্রহ্মাসৃষ্ট অপ্সরা যারা দেবতা এবং মুনিদেরও মতিভ্রম করতে সক্ষম ছিল তারাও এই মোহিনী থেকে পৃথক।

পুরাণ অনুসারে শুভশক্তি দেবগণকে একসময়ে অশুভশক্তি দৈত্যগণ ভীতি প্রদর্শন করেন, এই দেব-দৈত্যের দ্বন্দ্বে জয়ের কোনও আশা না দেখে ভগবান বিষ্ণু মোহিনীর ছদ্মবেশ ধারণ করেন যাতে এর মায়ায় মুগ্ধ হয়ে অশুভশক্তি সাময়িকভাবে হলেও বশীভূত হয়। বিষ্ণুপুরাণে ক্ষীরসাগর মন্থনকালে বিষ্ণুর এরকম আবির্ভাবের কথা উল্লেখ আছে।

 

মোহিনীআট্টম জয়শ্রী মুন্দকুর

 

দুর্বাসা মুনির শাপে (এর জন্য দেবরাজ ইন্দ্র দায়ী ছিলেন) ত্রিলোক বন্ধ্যা হয়ে যায়, জনমানবহীন ত্রিলোক হয় অমঙ্গলে পরিপূর্ণ। তখন ব্রহ্মার পরামর্শে দেবগণ ক্ষীরসাগরে আদিশেষে বিষ্ণুর কাছে গিয়ে তাঁকে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানান। মন্দরা পর্বতকে মন্থনদণ্ডস্বরূপ এবং নাগ বাসুকীকে রজ্জু করে দৈত্যের সহায়তায় তাঁরা ক্ষীরসাগর মন্থর করেন।

দৈত্যদের কাছে দেবতারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন যে, দৈত্যরাও মন্থনকৃত অমৃতের অংশ পাবেন। দেবতাদের আশা ছিল— এই অমৃত পান করলে তাঁরা পুনরায় তাঁদের শক্তি ফিরে পাবে, পুনযৌবন লাভ করবেন এবং পুনরায় এই পৃথিবী শাসন করবেন। ভগবান বিষ্ণু মন্দার পর্বতকে পিঠে ভর দিয়ে রাখেন এবং দেবতা ও দৈত্যরা সমুদ্র মন্থন করেন।

সমুদ্র মন্থনকালে ক্ষীরসাগর থেকে একে একে অমূল্য সব জিনিস উঠতে থাকে। সেই অতল জলরাশি থেকে ক্রমে দেবগাভী সুরভি, সুরার দেবী বারুণী, স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ, তীব্র বিষ হলাহল এবং অবশেষে লক্ষ্মীদেবী উদ্ভুত হন ।

প্রতিটি দ্রব্য উদ্ভুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেবতারা নিজেদের অধিকারগত করেছিলেন। শ্রী (লক্ষ্মী) আবির্ভূত হয়ে ভগবান বিষ্ণুর পার্শ্বে স্থান গ্রহণ করেন। এতে দৈত্যরা ক্রুদ্ধ হয়। ফলে যখন দেবচিকিৎসক ধন্বন্তরী অমৃতপাত্র নিয়ে আসেন তখন দৈত্যরা কালক্ষেপ না করে সেটি ছিনিয়ে নেয়। দেবতাদের ভবিষ্যৎ, সমগ্র সৃষ্টি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

এইরকম পরিস্থিতিতে ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপে দৈত্যদের মধ্যে আবির্ভূত হন। দৈত্যগণ মোহিনীর আকর্ষণীয় সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে মুহূর্তের জন্য তাদের উদ্দেশ্যের কথা বিস্মৃত করেন এবং তাঁর অনুগ্রহ পাবার জন্য সচেষ্ট হন। তাঁর সৌন্দর্যের মায়ায় দৈত্যগণ চোখ নিমীলিত করলে মোহিনী অমৃতপাত্র নিয়ে অন্তর্হিতা হন।

কিন্তু মনে হয় দৈত্যদের কাছে সেই মুহূর্ত স্বর্গীয় সুষমামণ্ডিত হয়েছিল। এবং অমৃত ব্যতিরেকেই জীবন সুসহ হয়েছিল। এমনও হতে পারে যে, যতবারই তাঁরা চোখ নিমীলিত করেছেন ততবারই তাঁদের সামনে মোহিনীকে নৃত্যরতা দেখেছেন। কিন্তু দৈত্য ভস্মাসুর তত ভাগ্যবান ছিল না।

অন্য এক পৌরাণিক গাথা অনুসারে শিবের বরে সমৃদ্ধ এই দৈত্য যে ব্যক্তির মাথায় তাঁর আঙুল রাখবেন সেই ব্যক্তি ভস্মে পরিণত হবেন। নির্লজ্জ, ধৃষ্ট, চাতুর্যের সঙ্গে সে বরপ্রদানকারীর উপরই বর-এর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। শিব ভীত হয়ে বিষ্ণুর কাছে যান, বিষ্ণু মোহিনীমূর্তি ধারণ করেন এবং অসুরের সম্মুখীন হন।

ভস্মাসুর মোহিনীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সবকিছু বিস্মৃত হন এবং বিবাহের প্রস্তাব করেন। মোহিনী দৈত্যকে বিবাহ করতে রাজি হয় তবে এই শর্তে যে দৈত্যকেও নৃত্যে অংশ নিতে হবে। এই ভাববিনিময়ের সময় মোহিনী এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন যাতে দানব তার আঙুল নিজের মাথায় রাখে এবং স্বীয় অঙ্গুলিস্পর্শে নিজেই অদৃশ্য হয়।

কেবলমাত্র দৈত্যই নয়, শিবও মোহিনীর আকর্ষণে আবদ্ধ হন। ত্রিপুরাসুর বধের পর শিব অন্যান্য অসুরের উপরও ক্রোধান্বিত হন। কেউই যখন এই অসুরনিধন থেকে কোনওভাবেই শিবকে বিরত করতে পারলেন না তখন ভগবান বিষ্ণু পুনরায় মোহিনীরূপ ধারণ করলেন। যা কামদেবের শর করতে পারেনি মোহিনী তা পারল।

শিব গভীরভাবে মোহিনীর প্রেমাসক্ত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মিলিত হলেন। এই মিলনের ফল আইয়াপ্পা । এই মনোমুগ্ধকর আকর্ষণশক্তি মোহিনীর প্রধান গুণ। সংক্ষেপে ঐন্দ্রজালিক প্রভাব সমন্বিত সুসমঞ্জস সুগঠনা সালঙ্কারা মাধুর্যমণ্ডিত অবয়ববিশিষ্ট এক নারী এই মোহিনীমূর্তি। তার দীর্ঘ উজ্জ্বল কেশরাজি সুগন্ধি পুষ্পবিজড়িত, তার সৌন্দর্য আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর।

কিন্তু তার নৃত্যপ্রতিভা? তাও কি দ্যুতিময়, চমকপ্রদ, লাস্যময়, সম্মোহক এবং মনোরক যা অনুগতজনকে নিস্পন্দ-স্থির করতে সক্ষম ছিল অথবা তার নৃত্য কি এমন এক আঙ্গিকের ছিল যা মাধুর্যমণ্ডিত মনোরক, জাঁকজমকপূর্ণ অথচ গম্ভীর-শান্ত যাতে সকলে তার উপর নির্ভর করে এবং স্বর্গীয় ত্রাতা বলে মনে করে? দেখা যাক মোহিনীআট্টমের মোহিনী কি ।

বর্তমান মোহিনীর অতীত ইতিহাস নিহিত পরশুরামের দেশ কেরালায় নৃত্যধারায়। তালগাছ পরিবৃত আবর সমুদ্রের লবণাক্ত জলচুম্বিত এই দেশ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দ্রাবিড়িয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এবং এই দেশে ফিনিসীয়রা আসার পর থেকেই এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যভূমি হিসাব স্বীকৃত। এখানকার সমাজব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক বা ‘মর্মকাটায়ম’।

পরশুরামের মাতৃহত্যাজনিত পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ এই নারীজাতির প্রাধান্য এখানে স্বীকৃত বলে কেউ কেউ মনে করেন । কারণ যাই হোক না কেন পুরুষরা যুদ্ধের জন্য দেশের বাইরে থাকায় উত্তরাধিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মা এবং সন্তানের সম্পর্ক সমাজ ও আইনগতভাবে বেশি স্বীকৃত।

এছাড়া দ্রাবিড়িয় সংস্কৃতির দেবীমাতৃকার পূজা (পরে হিন্দুধর্মেও যা প্রচলিত হয়েছে) কেরালায় নারীজাতিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করেছে। পরশুরামের এই দেশে এত বিভিন্নরকমের উৎকৃষ্ট নৃত্যকলা প্রচলিত যে এদের মধ্যে বিশেষ কোনো একটিকে পৃথকভাবে মোহিনীআট্টমের পূর্বসূরী বলা মুশকিল।

প্রচলিত মহিলা নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য যে একান্তভাবে নারীদের জন্যই- এর সূচনা খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতক থেকে। কয়েক শতাব্দী ধরে প্রচলিত নাঙ্গিয়ার, দেবদাসী ও রাজদাসীর নৃত্য এবং মহিলাদের মল্লক্রীড়ার প্রথা থেকে প্রভাবিত হয়ে একটি নতুন নৃত্যধারার সূচনা হয় যা বর্তমানে মোহিনীআট্টম নামে খ্যাত হয়েছে।

তবে কথাকলি বা কুডিয়াট্টম-এর মতো নৃত্যনাট্য যা কেবলমাত্র পুরুষের দ্বারাই নাট্যায়িত হতো তার প্রভাবের কথাও একেবারে অস্বীকার করা যায় না। ‘কুডিয়াট্টম’ কেরালার চাকিয়ারগণ কর্তৃক অনুষ্ঠিত এক ধরনের প্রাচীন নাটক। এই চাকিয়ার সম্প্রদায় উত্তরাধিকারসূত্রে ছিলেন দক্ষ এবং শিক্ষিত অভিনেতা।

নাম্বিয়ার সম্প্রদায়ের মেয়েরা এই চাকিয়ারদের অনুষ্ঠানে ঝাঁঝ-করতাল ধরনের যন্ত্রানুষঙ্গ বাজাতেন। নাম্বিয়ার সম্প্রদায়ের এই নারীরদের বলা হতো নাঙ্গিয়ার। এঁরা নাট্যাভিনয়, নৃত্য এবং সঙ্গীতে খুবই দক্ষ ছিলেন এমনকি অনেকসময় কুড়িআট্টম অনুষ্ঠানে নারীচরিত্রে অংশগ্রহণও করতেন।

এই নারীরা তাদের কুত্তাম্বলম-এ (মন্দির পরিধির অন্তর্গত স্তম্ভময় নৃত্যগৃহ) তাঁদের নিজস্ব নাটকও করতেন। তাঁদের ধ্রুপদীশৈলীর এই নাট্যধারায় ছন্দময় সূক্ষ্ম পদক্ষেপের নৃত্য অপেক্ষা অভিনয় এবং নাট্যিক উপস্থাপনার উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো ।

কেরালার নাঙ্গিয়ারের এই কুশলী ধারার প্রভাব থেকেই সম্ভবত অন্য এক নৃত্যধারার সূচনা হয় ‘দাসীআট্ম’ যা মন্দিরে দেবতার সামনে নৃত্যায়িত হতো। দেবদাসী বা তেবদিচি (কেরালায় কথিত) এই নাচ করতেন । দেবদাসীরা প্রধানত তামিলনাডুর কিন্তু ক্রমে তাঁর নায়ার (এই নায়াররা সৈনিক শ্রেণীর) নারীদের প্রথা, পরিচ্ছদ এবং আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যান।

সূচনায় রাজকুলবালারাও এই প্রথার সম্মানজনক ও অতি পবিত্র নৃত্য অভ্যাস করতেন। কেরালার বেশির ভাগ স্থানেই তেবদিচির বিবাহ হতো মন্দিরের দেবতার সঙ্গে। মন্দির থেকেই তাঁদের আহার ও বেতন দেওয়া হতো কিন্তু তাঁদের প্রাপ্যের পরিমাণ এতই কম ছিল যে মন্দিরের মধ্যে যেমন তেমনি মন্দিরের বাইরের অনুষ্ঠানে যেতে তাঁরা বাধ্য হতেন।

তথাপি এঁরা ছিলেন খুবই ভদ্র, সমস্ত অনুষ্ঠানেই এদের উপস্থিতি প্রয়োজনীয় এবং মঙ্গলজনক বলে পরিগণিত হতো। ক্রমে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক নানা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এঁদের নৈতিক চরিত্রের অবনমনের সঙ্গে সামাজিক মর্যাদাও ক্রমশ কমতে থাকে। বর্তমান শতাব্দীর প্রারম্ভে এরা সাধারণ বারণিতা থেকে উন্নত স্তরের কিছু ছিলেন না ।

এইভাবে যে প্রথা খ্রীষ্টীয় দশম শতাব্দীতে প্রচলিত হয়েছিল তা ১৯৩০ সালে রাণী সেতু লক্ষ্মীবাঈ আইন করে নিষিদ্ধ করেন। খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীরও আগে নাঙ্গিয়ার ও তেবদিচি অপেক্ষাও অন্য এক ধরনের রোমান্টিক বর্ণাঢ্য প্রথা ছিল- হিন্দুরাজসভায় রাজনর্তকী হিসাবে এঁরা পরিচিত ছিলেন। কেরালা রাজসভার নৃত্যশিল্পীরা তাঁদের সৌন্দর্য ও নৃত্যকুশলতার জন্য খ্যাত ছিলেন।

উন্নিয়তি এবং রঙ্গলক্ষ্মী প্রভৃতি নৃত্যপটীয়সীদের সৌন্দর্য তৎকালীন কবিদের সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল যেমন ‘উন্নয়চি চরিত্রম’- এ মর্ত্যের এক নর্তকীয় সৌন্দর্যের কথা শুনে এক গন্ধর্ব নেমে আসেন মর্তলোকে তাকে দেখার জন্য। “উন্নিচিরিত্তেভি চরিত্রম’-এ ইন্দ্র নিজেই এই সৌন্দর্যসুষমা উপভোগ করতে আসেন।

দামোদর চাকিয়ার উন্নিয়তির সৌন্দর্য সম্পর্কিত নাটক এবং চম্পূ রচনা করেন। এই নৃত্যকুশলীগণ বা কুট্টাচিদের নৃত্য ছিল কৈশিকি বৃত্তিনির্ভর। ফলে তাঁদের নৃত্যে লাস্য ও শৃঙ্গারের সব দিকই নৃত্ত এবং নৃত্য- উভয় ক্ষেত্রেই উন্মোচিত হত। তাঁদের নৃত্যবিষয়ের প্রধান অঙ্গ ছিল শৃঙ্গার রসের সঞ্চারী এবং এই নৃত্যপটীয়সীরা সংস্কৃত প্রেমকাব্য সম্পর্কে খুবই অবহিত ছিলেন ।

মোহিনীআট্টম শব্দের উৎপত্তি কি থেকে তা ঠিক জানা যায় না। পুরুষনৃত্য থেকে নারীনৃত্যকে পৃথকীকৃত করার জন্যই কি মোহিনীআট্টম শব্দটির উদ্ভব? সর্বাঙ্গে ছোট ছোট ঘট বসিয়ে (কিডাঙ্গুর সুব্রহ্মণীয় মন্দিরে এই নৃত্যের ভাস্কর্য দেখা যায়) অথবা

জাদুরের বল বসিয়ে (মহাদেব মন্দিরগাত্রের ভাস্কর্যে এর প্রমাণ আছে) ভারসাম্য রক্ষা করে রমণীয় রোমাঞ্চকর নৃত্য পদক্ষেপকে কি এই নামে অভিহিত করা হতো।

অথবা তামিল দাসীআট্টম থেকে বা মালয়ালম কৃষ্ণআট্টম, রামনাট্যম, কালীআট্টম থেকেই এক সম্পূর্ণ পৃথক মহিলাদের জন্য নৃত্যধারার নাম হল মোহিনীআট্টম? উল্লুর এস পরমেশ্বর আয়ার লিখেছেন যে, ত্রাভাঙ্কুরের মহারাজা কার্তিক তিরুনাল রামবর্মা (খ্রীষ্টীয় সপ্তদশ শতকে) সমগ্র কেরালায় দাসীআট্টম কে মোহিনীআট্টম নামে প্রচারের নির্দেশ দেন।

এন বালকৃষ্ণ আয়ারের মতানুসারে কোরাঙ্গুলুর জেলার মেয়েরাই একমাত্র মোহিনীআট্টম করতেন। নৃত্যশৈলীর উৎস নিয়ে যত বিতর্কই থাক না কেন একটি বিষয় স্পষ্ট যে, অষ্টাদশ শতক থেকে মোহিনীআট্টম কেরালায় দৃঢ়ভাবে স্থান পেল এবং মালয়ালম প্রভাবে প্রভাবিত হলো। পেলো উদ্যম ও প্রেরণা।

কার্তিক তিরুনালের উত্তরসূরি মহারাজ স্বাতী তিরুনাল রামবর্মার রাজসভায় মোহিনীআট্টম সমাদৃত হয়েছিল। এই রাজা মাত্ৰ ৩১ বছরে মারা যান। ইনি শিল্পকলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাঁর রাজসভায় জ্ঞানীগুণীজন, শিল্পী, অধ্যাপকগণ আমন্ত্রিত হতেন, কাজেই তিনি কেবল ভিন্ন দেশীয় সংস্কৃতিকে স্বদেশে বিস্তৃত করেছিলেন তা নয়,

সেইসঙ্গে স্বদেশের সংস্কৃতিকেও সমৃদ্ধ করেছিলেন। রাজপৃষ্ঠপোষকতায় মোহিনীআট্টমের যে স্বর্ণযুগ ছিল তার কতগুলো কারণ আছে। তাঞ্জাভুরের বিখ্যাত পিল্লাই ভ্রাতৃদ্বয় সার্বভৌম সারাফোজি মহারাজার রাজসভা থেকে বিতাড়িত হয়ে ত্রাভাঙ্কুরের রাজসভায় আশ্রয় নেন; তাঁদের সঙ্গে দুই দেবদাসী এসেছিলেন।

দেবদাসীদ্বয়ের একজন সুগন্ধাবলীর সঙ্গে যুবক রাজার এক রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুবক মহারাজা বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন। পিল্লাই ভ্রাতৃদ্বয় এবং ইরাইমান তাম্পির মতো সঙ্গীতজ্ঞরা সেগুলোকে বর্ণম, পদম, কীর্তনম এবং তিলানায় সুর দেন। মোহিনীআট্টমের শৈলীকে আরও মর্যাদাসম্পন্ন করে তোলার জন্য পিল্লাই ভ্রাতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সুন্দরী ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী সুগন্ধাবলীকে মোহিনীআট্টমের কয়েকটি অনুষঙ্গে নতুন আঙ্গিকে আনার জন্য মহারাজা এবং চারজন পণ্ডিত অনুপ্রাণিত করেছিলেন- এমন অনুমান করা খুব অসঙ্গত হবে না। ভরতনাট্যমের মতো অভিনয়াঙ্গিকের প্রচলন পিল্লাই ভ্রাতৃদ্বয়েরও অবদান আছে বলে মনে করা হয়।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

জাতিস্বরম বা স্বরজাতি, বণম, পদম, কীর্তনম, জাভালি এবং তিলানা উভয় আঙ্গিকেই আছে। মোহিনীআট্টমে পন্থাভি (যেখানে একটি বল নিয়ে খেলার ভঙ্গি নারী দেখান) অনুপম। নৃত্যের প্রথম পর্যায়ে আঙ্গিকের দিক থেকে দুটি নৃত্যে পৃথক- ভরতনাট্যম এবং মোহিনীআট্টম-এ, একে বলা হয় যথাক্রমে আল্লারিপু ও চোলকেটু; উভয় ক্ষেত্রেই এই নৃত্যাংশ প্রার্থনাসূচক ।

এই দুটি নৃত্যশৈলীতে সামান্য সাদৃশ্যও আছে। প্রকরণগত দিক থেকে দেখলে এই নৃত্য কেরালার ধ্রুপদী নৃত্য কথাকলি এবং কৈকোটিকলি এবং কুম্মি-র মতো, জনপ্রিয় লোকনৃত্যের অনেকটা কাছাকাছি।

ভরতনাট্যমে আছে ঔজ্জ্বল্য এবং দ্রুতি, কথাকলিতে আছে মানবাতীত উচ্চস্তরের এক অভিজাত জীবনের উপস্থাপনা, আর মোহিনীআট্টমে এল গীতিময় কোমলতা এবং পেলব স্নিগ্ধতা। এই সময়ে কেরালার সাহিত্যে রেনেসাঁ আসে। সংস্কৃতভিত্তিক ভাষা মণিপ্রভালম পরিণত হলো মালয়ালমে। শিল্প এবং সাহিত্যিকরা পেলেন রাজার অনুপ্রেরণা।

কিন্তু স্বাতী তিরুমলের মৃত্যুতে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলো। তাঁর উত্তরসূরি মহারাজা উত্তরাম তিরুনাল ছিলেন কথাকলির পৃষ্ঠপোষক এবং তিনি তাঁর রাজসভায় অন্য সবরকমের নৃত্য নিষিদ্ধ করেন। মোহিনীআট্টম এতে গুরুত্ব হারাল এবং ক্রমে অনেক তুচ্ছ সস্তা উপাদান কেবলমাত্র আকর্ষণীয় করার জন্য নৃত্যাভিনয়ে যুক্ত হলো।

এমন একটা সাধারণের কাছে এই শৃঙ্গাররসাসিত মোহিনী নৃত্য উপহাসাম্পদ হয়ে ওঠে। আনেকেই এই নৃত্যশৈলী অন্য জীবিকার সন্ধান করলো আর মোহিনীআটা সের মুখে এসে দাঁড়াল। ১৯৩০ সালে নৃত্যশিল্পীদের উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির জন্য মোহিনী আম নিশিদ্ধ হয়। সৌভাগ্যবশত মোহিনীআট্টমের সবটাই লয়প্রাপ্ত হলো না।

একই বছরে মহাকবি ভালাতো নারায়ণ মেনন স্বদেশী কলাবিদ্যা শিক্ষাদানের জন্য এবং চিরস্থায়ী করার জন্য কেরালা কপামণ্ডল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোহিনীআট্টমের শৈলীকে পুনরুজ্জীবিত করে তার অতীত গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সচেষ্ট হন। মুকুন্দরাজের পুরনো শৈলীর কুশলী কল্যাণী কুটি আম্মাকেও তিনি পান।

কিন্তু কোনো পরিবারই তাদের মেয়েকে এই নাচ শিখতে দিতে রাজি হননি। কারণ ইতিমধ্যেই একটা কলঙ্ক এই মোহিনী আইনের শিল্পীদের সম্বন্ধে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৩৪ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্যাণী কৃষ্টি আম্মাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন।

১৯৩৮ সালে কৃষ্ণ পানিকার যিনি ‘নাটডনার’ হিসেবে কল্যাণী কৃষ্টি আম্মার সঙ্গে এসেছিলেন তিনি কলামণ্ডলমে শেখাতে থাকেন। আমৃত্যু তিনি শিখিয়েছিলেন তবে মাত্রই দুবছর। এই ঘরানায় তাঁর প্রথম ছাত্র থাঙ্কমণি গোপীনাথ। ১৯৪৯ সালে কলামুরি কৃষ্ণ মেননের শিয্যা চিন্নামো আম্মা এই প্রতিষ্ঠানে এই ঘরানার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

বর্তমানে তাঁর শিয্যা শ্রীমতী কলামণ্ডলম সত্যভামা কেরালা কলামণ্ডলমে শেখান। আরেকজন শিষ্যা শ্রীমতী কলামণ্ডলম থাঙ্কমণি কুট্টি কলকাতায় তাঁর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান করেছেন ‘কলকাতা কলামণ্ডলম’ যেখানে তিনি মোহিনীআট্টম এবং ভরতনাট্যম শেখান।

খ্যাতিমান কথাকলি বিশেষজ্ঞ কলামণ্ডলম কৃষ্ণ আয়ারের স্ত্রী কলামণ্ডলম কল্যাণী কুট্টি আম্মাও কেরালা কলামণ্ডলমে শেখান। এই মোহিনীআট্টম শৈলীর বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বর্তমানে শান্তা রাও, কনক রেলে এবং ভারতী শিবাজী সুপরিচিত।

অন্যান্য ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের মোহিনীআট্টমেও আঙ্গিকগত দুটি দিক আছে- নৃত্ত বা প্রকৃত নৃত্য এবং নৃত্য বা অভিব্যক্তিমূলক নৃত্য। এই দুটি আঙ্গিকেই মোহিনীআট্টমে পাস্যর অভিব্যক্তি এবং ভাবগত দিক রূপায়িত করে। বর্তমান পটভূমিতে বিশেষজ্ঞভেদে এই মোহিনীআট্টমে শৈলীরও বৈচিত্র্য দেখা যায়।

তবে মূল ভঙ্গি একই থাকে। ভরতনাট্যম বা ওড়িশি নৃত্যের মতো মোহিনীআট্টমেও এটি বৈশিষ্ট্যায়িত। ভরতনাট্যমে সমভঙ্গি অর্থাৎ দেহের ভার সমভাবে দুদিকেই রাখা হয় এখান থেকেই সমগ্র গতির সূচনা।

ওড়িশিতে দেহসঞ্চালনের তিনটি ভঙ্গির মধ্যে শরীর মধ্যগ অবস্থানে রেখে ‘ত্রিভঙ্গি’ বা আসনপিডি হয়ে চতুষ্কোপিক অবস্থানে রেখে ‘চৌক ভঙ্গি’ মূল ভঙ্গিমা অর্থাৎ, সমস্ত ভার একদিকে ন্যস্ত হয়। যেহেতু নৃত্যকালীন এই ভঙ্গিমায় বেশিক্ষণ থাকা যায় না তার জন্য এই ‘অতিভঙ্গি’ এক দিক থেকে আর এক দিকে করা হয় তবে তা পেণ্ডুলামসদৃশ নয়।

শরীর সুষমভাবে রাখার জন্য এক্ষেত্রে দেহ সঞ্চালিত হয় কল্পিত আনুভূমিক ৪ আকারে। সমস্ত প্রত্যঙ্গের ছন্দোময় সঞ্চালনের সঙ্গে সঙ্গে মাধুর্যমণ্ডিতভাবে এই উপস্থাপনা দেখা যায়। মোহিনীআট্টমের নৃত্ত ভরতনাট্যমের আড়াভূ পর্যায়ের মতো। দুটি ক্ষেত্রেই ছন্দোময় বোলের সঙ্গে নৃত্যরতার দেহ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মাথা এবং চোখ সম্পৃক্ত ও সঞ্চালিত হয়।

বিভিন্ন শরীর সঞ্চালন অনুযায়ী প্রায় পনের রকমের আড়াভূ ভরতনাট্যমে আছে। যে ছন্দোময় বোলে আডাভূ অনুসৃত তার চারটি আডাভূ আছে মোহিনীআট্টমে। আঙ্গিকের ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কয়েকটি পর্যায় আছে যা ঠিক আড্ডাভুর সমগোত্রীয় নয়। সম্ভবত এগুলো লোকনৃত্য থেকে গৃহীত ।

অন্যান্য নৃত্যশৈলীর মতো বিশেষ দেহভঙ্গিমা, পদভঙ্গিমা, পদচালনা বা ঘূর্ণন, ‘স্থানক, ‘পদভেদচারী’, ‘গতি’, ‘ভ্রমরী’ ইত্যাদি এই নৃত্যেও আছে। মোহিনীআট্টমে ব্যবহৃত স্থানক হলো ‘মণ্ডল’ যাতে দুই পা দ্বিধাবিভক্ত থাকে, পা এবং হাঁটু বাইরের দিকে একটু নোয়ানো থাকে যাতে অর্ধ-বসার ভঙ্গিমা দেখা যায়।

‘মুঢ়মগুরম’-এ পায়ের গোড়ালির ওপর শিল্পী বসে, এতে পায়ের আঙুল ভূমি স্পর্শ করে এবং হাঁটু দ্বিধাবিভক্ত থাকে। ‘সমমণ্ডল স্থানক’ পর্যায়ে পা সামনের দিকে জোড়া করে ঋজুভাবে দাঁড়ায়। ‘মণ্ডল স্থানক’ রূপায়িত করে অতিভঙ্গিকে।

এই আঙ্গিকে আঙুল দিয়ে পায়ে আঘাত করা হয় এবং গোড়ালিতে অন্য পা দিয়ে আঘাত করা হয় এবং মঞ্চে শিল্পের ক্রমান্বয়ে পাশের দিকে ঘষে সঞ্চরণ দেখা যায়। তার চলনভঙ্গিতে একটা নৃত্যজনিত আনন্দের প্রকাশ থাকে। ছোট ছোট লাফ দিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা এমনই সম্বন্ধ ও মৃদু অথচ অনতিপ্রকাশিত।

পদসঞ্চালনে এটি ‘নাগবন্ধ’ পর্যায়। আঙ্গিকের মাধুর্য বজায় রেখে হাতকে বক্রভাবে আন্দোলিত করে অনুভূতির প্রকাশ সূক্ষ্মভাবে বিধৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে, এই নৃত্যের সৌন্দর্য সূক্ষ্ম ভঙ্গিমায় যথাযথ প্রকরণ ও মাধুর্যমণ্ডিত করার দায়িত্ব এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শিল্পীর। এই নৃত্য সম্পূর্ণভাবে নৃতশিল্পীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাসঞ্জাত, তার শৃঙ্খলা পরিমিতির ওপর অর্থাৎ ‘স্বানুভাব’-এর ওপর নির্ভরশীল।

‘হস্ত’ ভরতনাট্যমে যেভাবে ব্যবহৃত হয় তা অন্যান্য নৃত্য থেকে পৃথক। মোহিনীআট্টমের নৃত্ত এবং নৃত্য পর্যায়ে অঙ্গুলি মুদ্রা কতকটা কথাকলির অনুরূপ। নান্দিকেশ্বরের ‘অভিনয়দর্পণ’ অপেক্ষা বলরামভারতম-এর ‘হস্তলক্ষণদীপিকা’র অনুসরণে ‘বিনিয়োগ’ পর্যায় রূপায়িত হয়।

মহারাজা স্বাতী তিরুমলের সযত্ন পৃষ্ঠপোষকতায় মোহিনীআট্টম রাজসভার এক প্রধান অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে। মন্দিরের গর্ভগৃহে হয়তো ঠিক এরকমটি হতো না, কিন্তু রাজসভার অনুষ্ঠানে এক ধর্মীয় আবেদন পর্যবসিত হয় মনোরঞ্জনের ঈন্সায়। ঈশ্বরকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্য বিলীন হয়ে এক আকর্ষণীয় মায়াবী নৃত্যে মোহিনীআট্টম উপনীত হয় ।

অভিনয় (অভিব্যক্তিমূলক নৃত্য) নৃত্যশাস্ত্র অনুসরণকারী মোহিনীআট্টমের চারটি দিক আছে— আঙ্গিক, বাচিক, আহার্য (বেশভূষা সম্পর্কিত) ও সাত্ত্বিক। মূল রসসৃষ্টি ও উপস্থাপনায় এগুলোর ব্যবহার হয়।

এই নৃত্যে নবরসের মধ্যে শৃঙ্গার রস প্রধান। এই রসের দুটি দিক-

(১) প্রিয়তমের সঙ্গে মিলনে সৃষ্ট অনুভূতি ‘সম্ভোগ’

(২) প্রিয়তমের বিচ্ছেদ সৃষ্ট অনুভূতি ‘বিপ্রলম্ভ’।

এই অনুভূতিদ্বয় সঞ্চারী ভাবের মুখ্য বিষয় এবং অভিনয়ের মাধ্যমে তা পরিস্ফুটিত হয় । এই নৃত্যের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই এই ভাবের বিন্যাস শুরু হয়। ‘চোলকেটু’ তেও শিল্পী এই প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রকাশ উপস্থাপিত করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানে শিল্পী হয়ে ওঠেন মোহিনী, এই মোহিনীর মায়া ও আকর্ষণের কখনও বিচ্যুতি হয় না ।

বর্তমানে অনেকেই মোহিনীআট্টমের প্রকরণে অনেককিছু সংযোজন করছেন কিন্তু সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে নৃত্যশৈলীর সামগ্রিক চেতনায় তা সংশ্লিষ্ট হয়, একীভূত হয়। যেমন বীভৎস রস এই শৈলীতে একেবারেই অচল। মোহিনীআট্টমের নিজস্ব তাল আছে কারণ এটি কেরালার প্রথাগত ছন্দের অনুসারী যা দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য স্থানের তাল থেকে পৃথক ।

এই মোহিনীআট্টমে অডাক্য নামে পারকাশন যন্ত্র ব্যবহৃত হয় (যাতে শিল্পীর এক হাতে থাকে একটি বক্র কাষ্ঠদণ্ড এবং অন্য হাতে থাকে একটি ঢোল যার দুই প্রান্ত কিন্তু সূত্র-ঝালর দিয়ে বাঁধা থাকে; এই সূত্র সঞ্চালনে সুর ধ্বনিত হয়)। এডাক্য এমন একটি বাদ্যযন্ত্র যাতে বিভিন্ন সপ্তকের সুর সহজেই ধ্বনিত হয়।

 

মোহিনীআট্টম জয়শ্রী মুন্দকুর

 

যেখানে অবিচ্ছিন্নতা রাখার জন্য মোহিনীআট্টম অনুষ্ঠানে ছন্দোময় বোল আবৃত্তি না করে সুরে গীত হয় সেখানে এডাক্য একমাত্র উপযুক্ত সহায়ক পারকাসন বাদ্যযন্ত্র যা থেকে সপ্তস্বর সমভাবে সৃষ্ট হয়। এই ঘরানার নিজস্ব পরিধেয় ও অলঙ্কার আছে। পরিচ্ছদ হয় সোনালী বা লাল বর্ডার দেওয়া সাদা রঙের।

কোমরে কুঁচি-দেওয়া ঘাঘরা এবং ব্লাউজের উপরে একটি পৃথক কুঁচি- দেওয়া আঁচল থাকে। খোপাবাদা চুল থাকে পুষ্পসজ্জিত। অঙ্গসজ্জায় সোনার গহনা ব্যবহৃত হয়, কানে তোড়া নামক দুল, গলায় থাকে নাগপদম নামে (সাপের মতো জড়ানো) নেকলেস এবং পবনমালা নামে স্বর্ণমুদ্রার নেকলেস, নাকে সুকুতি নামক রিং এবং হাতে প্রবালখচিত সোনার বালা।

এছাড়াও কোমরে সোনার কটিবন্ধনী এবং পায়ে ঘুঙুর থাকে। কপালে একটি বড় লাল টিপ বা তিলক থাকে; এটি সূর্যের প্রতীক। তারই ওপরে শ্বেতচন্দনে অঙ্কিত রেখা চাঁদের সুষমা ও শিল্পীর সাত্ত্বিক সৌন্দর্যের প্রকাশক ।

মোহিনীআট্টমের উপস্থাপনায় প্রাচীন দেবমন্দির থেকে আধুনিক মঞ্চে এসে পৌঁছেছে কিন্তু মোহিনীর উদ্দেশ্য রয়ে গেছে একই। যতদিন মনোরঞ্জনের আকর্ষণ ও প্রয়োজনীয়তা থাকবে ততদিনই থাকবে মোহিনী ।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment