ভারতীয় নৃত্য

ভারতীয় নৃত্য : সঙ্গীতশাস্ত্রের তিনটি প্রধান অঙ্গের একটি অন্যতম অঙ্গ। অপর দুটি অঙ্গ হলো- গীত ও বাদ্য। নৃত্য এমন একটি উপস্থাপনযোগ্য শিল্পকর্ম, যা দেহভঙ্গিমার দ্বারা শৈল্পিকভাবে মনোভাবকে প্রকাশ করে এবং এই প্রকাশভঙ্গীতে থাকে গতি ও ছন্দ।

ভারতীয় নৃত্য - A 7th century Shiva in Karnataka
A 7th century Shiva in Karnataka

ভারতীয় নৃত্য

ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে মহাদেব-এর তাণ্ডব নৃত্য থেকে নাচের উৎপত্তি হয়েছে। নটরাজ-রূপী মহাদেব তাণ্ডবনৃত্যের শেষে চৌদ্দবার ডমরুধ্বনি সৃষ্টি করেছিল। সেই চৌদ্দটি ধ্বনি থেকে নাচের বর্ণগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। ত্রেতা যুগের প্রারম্ভে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছিল। এই সময় দেবতারা মানুষের চরিত্র সংশোধন এবং উন্নতির জন্য ব্রহ্মার কাছে নতুন বেদ তৈরির আবেদন করেন।

Tandava and Lasya
Tandava and Lasya

ব্রহ্মা এই আবেদনে সাড়া দিয়ে চতুর্বেদ থেকে নাট্যবেদ তৈরি করেন। ব্রহ্মা ভরতমুনিকে এই নাট্যবেদ প্রচারের ভার দেন ভরতমুনিকে। ব্রহ্মার আদেশ অনুসারে তাঁর শত পুত্রকে ভারতী, সাত্ত্বতী ও আরভট্ট বৃত্তিতে শিক্ষা দেন। এরপর ব্রহ্মা কৌশিকী বৃত্তি প্রয়োগ করার কথা বললে, ভরত বলেন নারী ছাড়া শুধু পুরুষ দ্বারা এই বৃত্তি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। এরপর ব্রহ্মা এরপর মন থেকে অপ্সরা তৈরি করলেন। পরে ভরতমুনি গন্ধর্ব এবং অপ্সরা দিয়ে নাট্য, বৃত্ত ও নৃত্যের প্রয়োগ করেন। এই সময় মহাদেব নিজে ভক্ত তণ্ডুর মাধ্যমে ভরতমুনিকে তাণ্ডব নৃত্য শিক্ষা দেন।

ভারতীয় নৃত্য পদ্ধতিতে নৃত্যকে দুটিভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো- তাণ্ডবলাস্য

Forms of Lasya - Kalyani Kala Mandir
Forms of Lasya – Kalyani Kala Mandir

তাণ্ডব ও লাস্য:

সঙ্গীত রত্নাকরের মতে, অঙ্গহারসমূহের উদ্ধত প্রয়োগই হলো তাণ্ডব। সঙ্গীত-দামোদরের মতে, তাণ্ডব নৃত্য দুই প্রকার। প্রকার দুটি হলো পেবলি ও বহুরূপ। ভরতের মতে এক সময় তাণ্ডব নৃত্যে নারী-পুরুষ উভয়ই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতো। কালক্রমে তাণ্ডবনৃত্যকে পুরুষের জন্য নির্ধারণ করা হয় এবং নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয় লাস্য নৃত্য।

লাস্য নৃত্য ভরতকে শিখিয়েছিলেন পার্বতী (দুর্গা)। পুরুষের জন্য তাণ্ডব এবং নারীর জন্য লাস্য নৃত্য ভরতমুনি মানুষের ভিতর প্রচলন করেন। অন্যমতে বাণাসুরের কন্যা ঊষাকে পার্বতী লাস্যনৃত্য শিখিয়েছিলেন। লাস্য নৃত্য হলো মার্গ ও দেশী নৃত্যের সংমিশ্রণে সৃষ্ট রসভাবযুক্ত নারীর উপযোগী নৃত্য। এতে অঙ্গহার ও লয় থাকে ললিত এবং গীতের ভাব দ্বারা পুষ্ট। লাস্য নৃত্য চার প্রকার। এগুলো হলো লতা, পিণ্ডী, ভেদাক ও শৃঙ্খল। প্রয়োগের বিচারে সঙ্গীতরত্নাকরের মতে- লাস্যের প্রয়োগ সুকুমার এবং কামবর্ধক। সঙ্গীত দামোদরের মতে লাস্যের প্রয়োগ সুকুমার এবং তা ছুরিত ও যৌবত অংশে বিভাজিত।

সূত্র :
ভারতের নৃত্যকলা । গায়ত্রী বসু। নবপত্র প্রকাশন। নভেম্বর ১৯৮৯।

আরও দেখুন:

Leave a Comment