ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা : ভারতবর্ষে অনেক রকম নৃত্যকলা রয়েছে। আজ আমরা পরিচিত হবো ভারতবর্ষের ১০ টি প্রসিদ্ধ নৃত্যকলার সাথে।
Table of Contents
ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা
ভারতনাট্যম:
ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যকলার একটি বিশেষ ধারা হল ভারতনাট্যম। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে এই নৃত্যকলার উৎপত্তি। ভারতনাট্যমে ভাগ, রাগ ও তালের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। অনেকের মতে, এই তিনটি শব্দের প্রথম বর্ণ নিয়ে গঠিত হয়েছে ভারতনাট্যম নৃত্যকলা। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে এ নৃত্যকলার উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রথমদিকে মন্দিরের দেবদাসীরা এই নৃত্য পরিবেশন করত। পরে ভারতনট্যম নৃত্যের চর্চা বেড়েছে।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 2 ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা - ভারতনাট্যম [ Bharata Natyam Performance DS ]](/wp-content/uploads/2022/05/ভারতনাট্যম-Bharata-Natyam-Performance-DS-191x300.jpg)
ভরতনাট্য ভাব, রাগ ও তালের অপূৰ্ব সমন্বয় ঘটিছে। অনেকের মতে এই তিনটা শব্দের প্ৰথম বৰ্ণকে নিয়ে ভরতনাট্যম শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। অন্য অনেকে মনে করে যে ভরত মুনি এর প্ৰবৰ্তন করেছিলেন বলে এই নৃত্যকলার নাম ভরতনাট্যম হয়। অন্যান্য ভারতীয় নৃত্যধারার তুলনায় ভরতনাট্যমের ভাবধারা মূলত ধৰ্মভিত্তিক ও দেবতাকেন্দ্ৰিক।ভরত মুনির লেখা নাট্যশাস্ত্র গ্রন্থে ভরতনাট্যম নাচের কিছু কৌশল, মুদ্ৰা ও সংজ্ঞা বর্ণনা রয়েছে। মহাদেব শিবকে এই নৃত্যশৈলীর ভগবান মানা হয়। আজ ভরতনাট্যম বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় নৃত্যশৈলী।
কথক:
ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে একটি হল কত্থক। এটি উত্তর ভারতের যাযাবর সম্প্রদায় থেকে উদ্ভুত হয়েছে। কত্থক বা কথক নৃত্যে প্রধানত রাধা কৃষ্ণের লীলা কাহিনি পরিবেশিত হয়। দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয় উৎসব ও মন্দির কথক পরিবেশিত হত। কথক নৃত্যের সব থেকে বিকাশ ঘটে উনবিংশ শতাব্দীতে লখনউ-এর আসাফুদ্দৌলা ও ওয়াজীদ আলশাহ-এর দরবারে।

কথাকলি:
ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি অন্যতম প্রধান ধারা হল কথাকলি। এই নাচের মধ্য দিয়ে একটি কাহিনি তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন রূপসজ্জা, পোশাক ও মুখোশ পরা হয় এই নাচের সময়। এই ভারতের মালয়ালন ভাষী দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে হিন্দু প্রদর্শন কলা। কথা শব্দের অর্থ কাহিনি ও কলি শব্দের অর্থ অভিনয়।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 4 শ্রীরাম পট্টাভিষেকম কথাকলি [ SreeRama Pattabhishekam Kathakali ]](/wp-content/uploads/2022/05/SreeRama-Pattabhishekam-Kathakali-300x157.jpg)
মণিপুরী নৃত্য:
মণিপুরী নৃত্য জাগই নামেও পরিচিত। এর উৎপত্তি মণিপুরে। এই নৃত্য মণিপুরের সুপ্রাচীন নৃত্যধারা হিসেবে বিবেচিত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি অন্যতম প্রধান ধারা। মণিপুরি লাই শব্দের অর্থ হল দেবতা, হারাউবা শব্দের অর্থ হল আনন্দ নৃত্য। মণিপুরের বৈষ্ণব ধর্ম প্রাধান্যলাভের আগে, শৈবমতের ব্যাপক প্রভাব ছিল।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 5 মনিপুরি নৃত্য [ Ras Lila ]](/wp-content/uploads/2022/05/মনিপুরি-নৃত্য-Ras-Lila-৯-300x169.jpg)
কুচিপুড়ি :
কুচিপুড়ি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের প্রধান আটটি নৃত্যশৈলীর মধ্যে একটি হল এটি। দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কুচিপুড়ি গ্রামে এই নাচের উৎপত্তি। এই নাচের পোশাক ও আদবকায়দার সঙ্গে ভারতনাট্যমের কিছু মিল আছে। প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃত ভাষায় নাট্য শাস্ত্র পুঁথিতে এই নাচের উল্লেখ আছে। কুচিপুড়ি মূলত হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের বৈষ্ণব রীতি হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 6 প্যারিসে পারফর্ম করছেন কুচিপুড়ি নৃত্যশিল্পীরা [ Kuchipudi dancers performing in Paris ]](/wp-content/uploads/2022/05/Kuchipudi-dancers-performing-in-Paris-267x300.jpg)
ওড়িশি:
পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যের এই ওড়িশি নৃত্য ভারত খ্যাত। এটি ধ্রুপদী নৃত্যশৈলীর মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় নৃত্যের আদগ্রন্থ নাট্যশাস্ত্র এই নৃত্যশৈলীটিকে ওড্র মাগধী নামে অভিহিত করা হয়েছিল। এই নৃত্যের তিনিটি ঘরানা আছে। মহারি, নর্তকী ও গোতিপুয়া। ওড়িশার মন্দিরগুলোতে এই নৃত্য প্রদর্শীত হত এক সময়। বর্তমানে এর চর্চা ভারত তথা বিশ্বের সর্বত্র।
ভাংড়া:
ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের এটি একটি নৃত্যকলা। বর্তমানে শিখ সম্প্রদায় এই নৃত্যেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দরবারে তুলে ধরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। এই নাচের জনপ্রিয়তা বিশ্ব জোড়া। এই নাচের সঙ্গে গানেরও জনপ্রিয়তা বিস্তর। অন্যান্য নাচের মতো এই নাচের খ্যাতিও বিশ্ব জোড়া।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 8 ভাংড়া নৃত্যশিল্পী [ Bhangra dancers ]](/wp-content/uploads/2022/05/Bhangra-dancers-257x300.jpg)
বিহু:
অসনের বিহু উৎসবের খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। পুরুষ ও মহিলারা উভয় মিলিত হয়ে সমবেত লোকনৃত্য পরিবেশন করে থাকে এই সময়। এই নৃত্য প্রদর্শনীতে ঢুলীয়ার ঢোল ওর সঙ্গে মুগার মেখেলা চাদর পরে নৃত্য প্রদর্শন করা হয়। অসমীয়া জাতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে এই নৃত্য।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 9 বিহু নৃত্য [ Bihu dance ]](/wp-content/uploads/2022/05/Bihu-dance-8-199x300.jpg)
গাড়বা:
গুজরাতের গাড়বা নৃত্যকলার খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। এটি গুজরাটের সর্বাধিক পালিত সাংস্কৃতিক নৃত্য শৈলী। আজ আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে এই নৃত্যের গুরুত্বকের কথা অস্বীকার করা যায় না। গুজরাতের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে গাড়বা। এদিকে, প্রতিবছর এই আন্তর্জাতির নৃত্য দিবস একটি করে বার্তা প্রেরণ করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 10 গরবা নাচ [ Garba Dance ]](/wp-content/uploads/2022/05/Garba-Dance-1-300x169.jpg)
মোহিনীঅট্টম:
কেরল রাজ্য থেকে বিকশিত হয়েছে মোহিনীঅট্টম নৃত্য। বিষ্ণুর সম্মোহিনী অবতার মোহিনীর সমোমহিী শক্তি ব্যবহার করা হয় এই নাচে।। এক সময় মন্দিরে প্রদর্শীত হত এই নৃত্য। নাট্য শাস্ত্রে বর্ণিত লাস্য শৈলী অনুসরণ করে উপস্থাপন করা হয় মোহিনীঅট্টম। মোহিনীঅট্টম সাধারণত আবৃত্তি সব সোপান শৈলীর গানের সঙ্গে বিশুদ্ধ এবং ভাবপূর্ণ নৃত্য নাট্য হিসেবে মঞ্চস্থ করা হয়।
![ভারতবর্ষের ১০ ধরনের নৃত্যকলা 11 মোহিনীঅট্টম [ Mohiniyattam ]](/wp-content/uploads/2022/05/Mohiniyattam-2-221x300.jpg)
আরও পড়ুন: