নৃত্যের ইতিবৃত্ত

আজকে আমরা নৃত্যের ইতিবৃত্ত সম্পর্কে আলোচনা করবো।

 

নৃত্যের ইতিবৃত্ত
নৃত্যের ইতিবৃত্ত

 

নৃত্যের ইতিবৃত্ত

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানব জীবনের যে পরিধি, সেই পরিধির ব্যাপক ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষের ইন্দ্রিয়জাত সংবেদনের অনন্ত বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যের প্রকাশ পাওয়া যায় তার নানা শিল্পকর্মে। দার্শনিক অধ্যাপক আরইন এডম্যান বলেচেন : জীবন যেখানে আপনার রূপেটুকু খাজে পায় সেখানেই সে শিল্প পদবাচ্য হয়ে ওঠে।

আদিম যুগের মানুষের তাদের মনের অন্তনিহিত ভাবাবেগ প্রকাশ করত কতগুলি অর্থহীন শব্দ মুখাবয়ব ও অন্যান্য দেহভঙ্গির মাধ্যমে। সেই চিৎকার হাততালি এবং হস্তপদাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছন্দ থেকেই ক্রমশ নৃত্য-গীত- বাদ্যের বিকাশ হয়েছে। যে অঙ্গবিক্ষেপাদির প্রতীকগুলি একদা নানা অসংগতিতে ছিল পূর্ণে, সভ্যতার আলোয় নিজেদের মানসিক চিন্তার সেই সংগীত-বিহীন রূপে দেখে, রুমে সেগুলিকে সুসম্যে করার প্রচেষ্টা দেখা দিল।

এই ভাবে ক্রমবর্ধমান বিশ্ব-সভ্যতা যেমন বিভিন্ন ধারায় উৎকর্ষ লাভ করতে লাগল, সংগীতের নানা শাখারও ক্রমবিকাশ ঘটতে লাগল তেমনি ভাবেই । অসংস্কৃত ছন্দের প্রতীকগুলি নানা ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে সুসংস্কৃত হয়ে রুমে শিল্প পদবাচ্য হল এবং সেগুলি পেল নন্দনতাত্ত্বিক মর্যাদা।

 

নৃত্যের ইতিবৃত্ত
নৃত্যের ইতিবৃত্ত

 

 

আদিম কালের মানুষেরা ছিল ধর্মভীর, শভ-অশুভ যেকোন ঘটনাকেই তারা মনে করত দৈব বলে। সেই কারণে, ভগবানের তুষ্টি বিধানের জন্য সাহায্য নিত নৃত্যগীতের। অবশ্য বাদোরও। ইট-অনিষ্ট উভয়বিধ কর্মে’ই নভোগী বাধা সেজে ছিল অপরিহার্থ’।

ভারতবর্ষ’ আধ্যাত্মিক দেশ। তাই আজও এ দেশবাসীরা সংগীতকে মনে করে মোক্ষপ্রাপ্তির অন্যতম সাধন। সেই কারণেই ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে নানা দেবদেবী সম্বলিত রূপক কাহিনীর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। সেই উপকথা ও কিংবদন্তীতে কি কাহিনীর কোনটি যে অগ্রিম, বলা খুব শক্ত। কয়েকটি সংক্ষিপ্ত উদাহরণ দেখুন ।—

সংগীতের আদি স্রষ্টা বলা হয় দেবাদিদেব মহাদেবকে। তাঁর কাছ থেকে ব্রহ্মা এবং পরে ভরত, নারদ রঙা, হহ, ও তবর, প্রভৃতি এই কলা শিক্ষা করেন ।…

কোন মতে ব্রহ্মা সংগীতের আদি গল্পে। তিনি মহাদেবকে, মহাদেব সরস্বতীকে, সরস্বতী নারদকে এবং নারদ ভরতকে শেখান। অতঃপর ভর তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যদের সহায়তায় সমগ্র বিশ্বে তা প্রচার করেন। আবার সরস্বতীকে আমরা সংগীতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করি ।

 

নৃত্যের ইতিবৃত্ত
নৃত্যের ইতিবৃত্ত

 

আমাদের বর্তমান আলোচ্য বিষয় নৃত্য। কথিত আছে, বিপ,রাসুরকে বধ করার উল্লাসে ভগবান শংকর যে বীর রসাত্মক নৃত্য করেছিলেন এবং বিজয়ানন্দে পার্বতী করেছিলেন উল্লাস-নত্যে পরবর্তীকালে সেই দুটিই অভিহিত হয়েছে যথাক্রমে ‘তাণ্ডব’ ও ‘লাস্য নামে। অবশ্য তান্ডব ও ‘লাস্য’ নৃত্যের সৃষ্টি সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্র ও পরোণাদিতে বিভিন্ন মতবাদ ছড়িয়ে আছে। ‘নাট্যশাস্ত্র’-এর প্রথম অধ্যায়ে ত্রেতা যুগের প্রারম্ভে মানষের দঃখ কষ্টাদি দূরীকরণের জন্য দেবরাজ ইন্দ্র একদা পিতামহ ব্রহ্মাকে অননুরোধ করলেন এমন কোন বিষয় বস্তু রচনা করতে, যার দ্বারা সকল দঃখ, কষ্ট, শ্রম ও শোক ইত্যাদি রহিত হয়ে সুখ-শান্তি লাভ করে। তখন ব্রহ্মা ঋগবেদ থেকে পাঠ্য, সামবেদ থেকে গীত, যজ্ঞবেদি থেকে অভিনয় এবং অথব বেদ থেকে রস সংকলন করে নাট্যবেদ নামক পঞ্চমবেদ রচনা করেন।

জগ্রাহ পাঠামুগবেদাৎ সামভ্যো গীতমেব চ।

যজুবেদাদভিনয়ান, রসানাথব নাদপি ।।

সংগীত ( গীত বাদা ও নতা ) এই পঞ্চমবেদের অন্তর্গতি ।—

ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, প্রাক বৈদিক যুগে (আনমানিক খৃ. পর্ব পাঁচ হাজার বছর) কিছু সাঙ্গীতিক নিদর্শনাদি পাওয়া গেলেও তার বিধিবদ্ধ ইতিহাস দল। প্রত্নতত্ত্ববিদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাপ্ত সাঙ্গীতিক অভিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, বৈদিক যুগের পর্বেও সংগীত ছিল। হরপ্পা ও মহোঞ্জোদাড়োর ভগ্নাবশেষ থেকে সে যুগের বহু, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যছন্দের স্বাক্ষর যুক্ত বিভিন্ন মূর্তিরি ভগ্নাংশ, শীলমোহর, গুপ্তর ক্ষোদিত মার্তি’ প্রভৃতি প্রত্নতাত্ত্বিকেরা আবিষ্কার করেচেন।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অবশ্য এই প্রমাণাদি সবন্ধেও মতৈক্য নেই। কোন কোন পণ্ডিত সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ঐ নিদশনগগুলি নাকি ইতিহাসপূর্ব নয় । এর সত্যাসত্য নির্ধারণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেগুলি গবেষকদের অনসন্ধান সাপেক্ষ। তবে নাত্যের প্রাচীনত্ব সবন্ধে পণ্ডিতদের মত : ভাষা সাষ্টির পর্বে মানষের সম্পূর্ণ অভিব্যক্তির উপায় ছিল তথাকথিত নৃত্য।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment