গারো উপজাতির নৃত্য বিভা সাংমা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় গারো উপজাতির নৃত্য বিভা সাংমা , যা বাংলাদেশের নৃত্যচর্চা এর অন্তর্ভুক্ত।

গারো উপজাতির নৃত্য বিভা সাংমা

গারো উপজাতির মধ্যে কবে নৃত্যের প্রচলন হয়েছিল সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে নৃত্যের গতি-প্রকৃতি ও উপকথা পর্যালোচনা করলে জানা যায়, অতি প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নৃত্য অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

সাধারণত গান্না অর্থাৎ নাকমার (head man) অভিষেক অনুষ্ঠানে যুদ্ধবিষয়ক নৃত্য, আঃসং এগি খাস্তা ও দেনঃবিলাসিয়ার পূজার অনুষ্ঠানে মাংনা অর্থাৎ শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে এবং ওয়ানগালা (নবান্ন) অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের নৃত্য পরিবেশিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া আয়মাবং বৃত্তা, দাকগিপা আমুয়া, সংআদিং বৃত্তা, নকদংগাআ, নকফাছে নকসংগাআ ইত্যাদি আচার- অনুষ্ঠানেও নৃত্যানুষ্ঠান হতে দেখা যায়। মেয়ে-পুরুষ উভয়েই নৃত্যে অংশগ্রহণ করে।

কোনো কোনো নৃত্য বিশেষ শ্রেণীর জন্য যেমন, গৃক্কা ও ছাবিল মিসাআ, পুরুষদের এবং মি সুজো, দঃদি মিসাআ, মিঃগারু দেনঃনা, বাংরা সুঃআর ও আবুআ মেয়েদের মধ্যে সীমিত।

গোত্রভেদে নৃত্যগীতের বিষয়বস্তু, মুদ্রা ও তালের বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। নৃত্যে সাধারণত কাহারবা, দাদরা ও খেমটা তাল ব্যবহৃত হয়ে তাকে। কোনো কোনো নৃত্য সব গোত্রের পরিচিত আবার কোনো কোনোটা বিশেষ গোত্র কর্তৃক সংরক্ষিত। দেওয়ানসিং রংমুখ, তার The Folk Tales of the garos’ পুস্তকের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন :

 

গারো উপজাতির নৃত্য বিভা সাংমা

 

The Folk Dances of the Achiks are of various kinds, such as various forms of martial dances such as performed in the gana ceremonial performances and Ahsong Khosi Tata and Denbilsia sacrificial Performances,

in the Mangona or saram (post funeral ceremonial performances) and in the Wangala (Post-harvest Ceremonial Performanees) Dances are also perfomred in certain sacrificial ceremonies and riees, such as Aemarong krita, Dakgipa amua, Songading Krita, Nakdonggaa, Nokphante Nokdonggaa etc.

Tomtoms of different sizes & shapes, which emit sevaral varieties of intonations, known as Damas, Krams, Nakaras, Krambichoks and valuable gongs, bearing different names, bamboo flutes, brass cymbals known as Kakwas, trumpets known as Adils (Prepared from buffalo horns) and singgass (a buffalo horn with bamboo-tubes stuck into them) are all used as musical instruments during all these Performances.

কীভাবে পৃথিবীতে নাচের প্রচলন হলো এ সম্বন্ধে গারো উপরদায় সুন্দর আছে। পাতালপুরীর আধো আলো আধো অন্ধকারে নিজের পেটটাকে ম সিসি পপ্পা, মুখে বাঁশির সুর তুলে নানুদেসা, স্থূল দেহী ফক্কা রদা ও পায়ে বাটা মালিং বিসর অবস্থায় নেচে-গেয়ে দিন মাস বছর ভুলে আমোদ-ফুর্তিতে রত ছিল।

একদিন ফক্কা রাজা ছেংসা নকমা (পান কৌড়ি) বেড়াতে বেড়াতে গভীর তলদেশ পার হয়ে সেই আনন্দালোকে উপস্থিত হলো। তাদের নাচ দেখে ে এমন কাও সে জীবনে দেখেনি। তাদের নাচ দেখতে দেখতে তাদের নাচ তার মধ্যেও সংক্রমিত হলো। শরীর দুলিয়ে নাচের তালের সঙ্গে সেও হাতে তালি দিতে থাকে।

এক সম সিসি গপ্পা নাচতে নাচতে তাকে দলে টেনে নিল। সবকিছু ভুলে গিয়ে সেও তালে তালে আরম্ভ করল। কিছু দিন পর দেখা গেল সকলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সে মনের আনন্দে কেবলই নাচে আর গান গায়।হঠাৎ একদিন নিজ দেশের কথা তার মনে পড়ে। এরপর সবুজ গাছ আর নীল আকাশ তাকে কেবলই হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। সে আনমনা হয়ে পড়ে। থেকে থেকে তাল কেটে যায়।

বন্ধুরা চিন্তিত হয়, কোনো অসুখ-বিসুখ না তো? আপারগ হয়ে শেষ পর্যন্ত সে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় চাইল। চোখের পানি চাপতে চাপতে সিসি পরা বলে : আবার এসো। আমার বাঁশির সুর মনে রেখো। নানুদেহা দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একখানা বাঁধি তার হাতে তুলে দেয়। কর-রন্দা ও দালিং তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, নাচের তাল আর নে আছে তো?

দেশে ফিরে গিয়ে ওয়াক মিথং বাজারের কাছে যে বিশাল জলাভূমি ছিল, তারই কিনারে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় কখনো ডানা মেলে, কখনো গুটিয়ে বা কখনো ডানা ঝাপটি ভালে তালে সামনে অগ্রসর হয়ে কখনো পিছু হটে সে মনের আনন্দে পাকিয়ে ঝাঁপিয়ে, নেচে গেয়ে বেড়াতে লাগল।

তার আনন্দ ঢেউয়ের সঙ্গে জলাভূমির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সোনালি রোদ মেখে ঝিকমিক করতে থাকে। একদিন আছু দুঃছোকা ও সামনেকো এই দুই ভাই ওয়াক মিথং বাজারে আনা বিক্রি করতে এল। জলাভূমির কাছে আসতেই দুঃভোকা

“হেই সামনে দেখছিস?

“তাই তো! ধান ভালো করে দেখে নিই।

“আমার ঝুড়িটা নামালাম

“তাহলে আমিও জিরিয়ে নিই।

“ফক্কা-বাজা-ছেংসা-নাকমা, তুমি কী করছ ?

দেখছ না আমি নাচছি, যার মনে আনন্দ থাকে সে-ই নাচে?

“তুমি কোথা থেকে এই নাচ শিখলে?

“শিখেছি এক জায়গা থেকে। আহা কী সুন্দর সেই দেশ।

“সেই জায়গার নাম আমাদের বলে দেবে ?

বললেও কোনো লাভ নেই।

কেন?

“বড় বিপৎসংকুল সেই পথ। কত দৈত্য-দানব, ভূত-প্রেত, হাঙ্গর ভূমির দিলে যাবার জন্য বসে আছে। বাদ দাও সেই মতলব, তার চেয়ে এই ভালো মুখে বাঁশির সুর তুলে সে নাচতে থাকে।লক্ষ্মী, সোনা মানিক, কক্কা রন্দা, বলে দাও না, আমরা শুধু একটিবার দেখে আসব।’ “বিরক্ত করো না।’ এই বলে সে লম্বা লাফ দিয়ে নাচ শেষ করে আর চোখের পলকে ডুব দিয়ে কোথায় যে অদৃশ্য হয়ে যায়, বহুক্ষণ অপেক্ষা করেও তার পাত্তা পাওয়া গেল না।

মনের দুঃখে দুই ভাই চলে গেল। সারা রাস্তা, হাটবাজার করার সময়ে আর বাড়ি ফিরে এসে তারা কেবলই এই বিষয়ে আলাপ করল। না, যেমন করেই হোক ফক্কা রন্দার কাছ থেকে পথ জেনে নিতে হবে। পরের সপ্তাহে দুই ভাই আবার সওদা নিয়ে হাটে গেল। ওয়াক মিথং বাজারের কাছে এসে দেখে আজ ফক্কা-রন্দা একা নয়, আরও পাঁচজন সঙ্গীসহ জমজমাট আসর। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! নাচের তালে তালে তাদের সুঠাম দেহ অপূর্ব ছন্দে দুলছে।

হ্রদ, পর্বত ও উদীয়মান সূর্যের প্রেক্ষাপটে নৃত্যের প্রতিটি মুদ্রার জীবন্ত ছবি তাদের মনে মুদ্রিত হয়ে রইল। সোজা পিঠ থেকে ঝুড়িটা নামিয়ে তারা নানা স্তোক বাক্যে এবং উপাচারে ফক্কা রাজা চেংসা সকমার তৃষ্টি সাধনে তৎপর হলো। এভাবে কয়েক দিন ঘোরাঘুরির পর শেষ পর্যন্ত ফক্কা রাজার মন নরম হয়, সে তাদের পথ বাতলে দেয়। গভীর সমুদ্রের তলদেশের নানা অজানা বিপদ বহু কষ্টে পার হয়ে তারা সেই আনন্দালোকে উপস্থিত হলো।

সেই সময় ধূপধুনা জালিয়ে গোরী নাচের মহড়া চলছে। তারা কতদিন সেখানে অবস্থান করছিল তার কোনো হিসাব ছিল না। নাচের তাল, লয়, মুদ্রা সবকিছু আয়ত্ত করে একদিন তারা নিজ দেশে ফিরে এল। বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন হওয়ায় তারা বাঁশের চোঙার দুই প্রান্তে ‘দাঃমিলজাংআ’ গাছের পাতা লাগিয়ে ‘সিথ্রি’ লতা দিয়ে টান টান করে বেঁধে নিল। দুই হাত দিয়ে চোঙার দুই প্রান্তে বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে পাতা ফেটে চৌচির। আর লতাটাও ছিঁড়ে টুকরো হয়ে গেল।

নানা গাছের পাতা, ছাল আর হরেক রকমের জিনিস লাগিয়ে পরীক্ষা করা হলো কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। সবশেষে বলাগিপক গাছ কেটে সেটা খোদাই করে গরুর চামড়া দিয়ে ছাউনি দেওয়া হলো। সেটা বাজালে এত সুন্দর আওয়াজ হলো যে সাল ছাপা, মংজিমফা, আফফা সুসিমি, খুরিগিপা, মেলাদমফা সকলে খুশি হয়ে হাততালি দিয়ে নাচতে আরম্ভ করে দিল। বাদ্যের তালে মিসি সালজং প্রথমে গোরী নাচ দেখালেন।

এইভাবে পৃথিবীতে ওয়ানগালার সময়ে গ্রাম বাজিয়ে গোরী নাচের প্রচলন হলো। গারো উপজাতির প্রধান উৎসব ওয়ানগাল্লা প্রথমে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পরে নৃত্যগীতের মাধ্যমে পালন করা হয়ে থাকে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পর প্রথমে নকমা, খামাল ও উৎসাহী ব্যক্তিরা গুক্কা করে । গৃক্কার (তরোবারি) সময়ে মিল্লাম (ঢাল) ও স্কি নিয়ে যুদ্ধের নাচ দেখানো হয় । এই বীরত্বব্যঞ্জক নাচের মাঝে মাঝে কা সাংমা, খা মরাক এই কথা বলে তালে তালে নাচে।

গৃতার পর সাধারণত দলগতভাবে নৃত্যগীত পরিবেশিত হয়। উত্তম পোশাক, নানা ধরনের অলঙ্কার, মোরগের পালক ইত্যাদি দিয়ে মেয়েরা নিজেদের সজ্জিত করে, ছেলেরা মাথায় পাগড়ি বাঁধে অনুষ্ঠানে গ্রাম রাং, দামা, বাংশী, আদুরু কাল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সারা রাত ধরে নৃত্যগীত চলে । আসর জমানোর জন্য বাদ্যযন্ত্রীরা খুব জোরেশোরে বাদ্য বাজাতে থাকে। এরপর নাচ আরম্ভ হয়। নিচে কতকগুলো নাচের বিবরণ দেওয়া গেল।

সালাম খাঃ আঃ (সালাম জানানো)
নৃত্যানুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আসরে উপস্থিত সকলকে নৃত্যের তালে সালাম জানানো হয়ে থাকে
নমিল দঃমি সুআলাঃ (কন্যার মোরগের লেজ বণ্টন)।

মোরগের লেজের লম্বা পালক মাথায় দিয়ে ওয়ানগালার সময় নাচতে হয়। চার-পাঁচটা পালক একসঙ্গে বেঁধে মেয়েরা খোঁপায় লাগায়। পুরুষেরা পাগড়িতে বাঁধে। একটা নতুন কুলায় পালকগুলো গুচ্ছাকারে বাঁধা অবস্থায় রেখে নাচের মাধ্যমে প্রত্যেককে একেকটা গোছা পরিবেশন করা হয়ে থাকে।

নমিল খাম্বি থোওয়াঃ (কন্যার উচ্চতা পরিমাপ) মেয়েরা পরস্পরের মাঝখানে খানিকটা দূরত্ব রেখে একজনের পেছনে আরেকজন এভাবে সারিতে দাঁড়ায়। অন্য মেয়েরা নাচতে নাচতে তাদের জোড়ার কাছে যায় এবং পরস্পরের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ায়, তখন সম্মুখের মেয়েটি অর্ধেক বসার ভঙ্গি করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নাচের তালে তালে পরবর্তী মেয়ের কাছে গেলে সেও অনুরূপ ভঙ্গি করে।

এভাবে তারা প্রত্যেক মেয়ের সঙ্গে উচ্চতা পরিমাপ করেছু খান্নাঃ (মদ খাওয়ানো) বাদ্যের তালে তালে নৃত্যের মাধ্যমে এক ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে সকলকে মদ খাওয়ায়। কোনো ব্যক্তিকে মদ খাওয়ানো হলে সেও পরিবেশনকারীর ফংসুদ্ধ হাত তার মুখের দিকে ঘুরিয়ে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তাকেও খাওয়ায়। এভাবে যাকে মদ খাওয়ানো হয় সেই উপজাতীয় ভদ্রতা অনুযায়ী পরিবেশনকারীকে মদ খাওয়ায় ।

খিল ফুআঃ (তুলা চাষ ঝুমচাষের মাধ্যমে পাহাড়ি লোকেরা তুলার আবাদ করে থাকে। প্রথমে জঙ্গল পরিষ্কার, কেটে ফেলা গাছপালা শুকালে আগুন লাগানো, এরপর কোনো গাছের চিকন লম্বা ডালের একদিক চোখা করে তুলা লাগানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। চোখা অংশ দিয়ে মাটিতে গর্ত করে সেই গর্তে বীজ বপন করা হয়ে থাকে।

বীজ অঙ্কুরিত হয়ে গাছ বড় হয়। তুলা সংগ্রহের উপযুক্ত হলে খক মাথায় নিয়ে পাহাড়ি লোকেরা সেগুলো তুলে আনে। বাদ্যের তালে তালে নর্তকী মুদ্রার সাহায্যে মাটিতে গর্ত করে, তাতে বীজ ফেলা এবং সংগ্রহের সময়ে ঝুড়ি মাথায় নিয়ে তাতে তুলা রাখার অভিনয় করে।

মি সুঃআঃ (ধান ভানা)পাহাড়ি লোকেরা গাছের কাণ্ডের একটা টুকরা নিয়ে তাতে গর্ত করে। সেই গর্তে ধান দিয়ে দুজন মেয়ে রিম্মলের সাহায্যে তালে তালে ধান ভানে। দুজন মেয়ে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে মুদ্রার সাহায্যে ধান ভানা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি দেখায় । কাঠের লম্বা দণ্ডের সাহায্যে পাহাড়ি লোকেরা ধান ভানে।

রাজ ও আবুয়ার কাপড় কাচা ও রা সারা দিন কঠোর পরিশ্রমের পর সন্ধ্যার আগে পাহাড়ি লোকেরা স্নান করে থাকে। সরে আসে তারা কাপড় কাচ, গা ডলে ঝর্ণার পানিতে গোসল করে। গোসলের পর পানি ভর্তি কলসি মাথায় করে বাড়িতে ফিরে আসে। ছয় অথবা আটজন মেয়ে লাইনে দাঁড়িে ভালে মুদ্রার সাহায্যে এই বিষয়গুলো নাচের মাধ্যমে প্রদর্শন করে। আমি রুরুয়াঃ (আফিল সহ) আমি এক ধরনের বন্য ফল।

পাহাড়ি ছেলেমেয়েরা এই ফল খুব পছন্দ করে। ফল পাকলে তারা দলবেঁধে গাছতলায় যায়, ফল কুড়ায় আর মাঝে মাঝে সকালে নিলে গাছ ঝাঁকি দিয়ে ফ পাড়ে। প্রথমে দুজন মেয়ে একজনের পেছনে অন্যজন খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দুহাত উঁচু করে একটি গাছ হয়। একজন অন্যজনের হাতের ফাঁকে তার হাত এমনভাবে রাখে মনে হাতগুলো গাছের ডাল। বাকি মেয়েরা তাদের চারপাশে নাচতে নাচতে ফল কুড়ায় আর মাঝে মাঝে সকলে মিলে গাছ ঝাঁকানোর অভিনয় করে।

সেই সময় পাতাসহ গাছ প্রবল বেগে দুলতে থাকে। পরে মেয়েরা ফল কুড়ায় এবং কোঁচড়ে রাখে। এই সময় গাছ তাদের হাত নিচে নামার এবং ঝাঁকুনি দেওয়ার সময় হলে আবার হাত উপরে ওঠায়। দু-তিনবার এই রূপ করার পর কুড়ানো ফল খেতে খেতে সবাই চলে যায়। Major A Playfair তার The garos পুস্তকে আম্রি রুরুয়া সম্বন্ধে এই রূপ বর্ণনা দিয়েছেন :

‘The Ambre rurus derives its name from the ambretong (the hog- plum). In this dance only two women take part or more correctly they dance in pairs. One woman in each pair goes through the performance of Imitating a tree which is being violently shaken to make the fruit fall, while the other follows her, and stops while dancing, as if to pick up the fallen fruit.

দঃ গোআঃ (পাখি শিকার) ছেলেরা তীর-ধনু নিয়ে পাখি শিকারে গেলে মেয়েরা আহত পাখিগুলো সংগ্রহ করে। ক্লান্ত হলে তারা গাছের ছায়ায় বসে বাতাস খায়। বনের ফল-মূল সংগ্রহ করে, বুনো ফুল তোলে, ছেলেরা সেই ফুল মেয়েদের খোঁপায় লাগায় অথবা উভয়ে মিলে প্রজাপতি ধরে এবং দিনের শেষে আনন্দিত মনে বাড়িতে ফিরে আসে। চারজন মেয়ে ও চারজন ছেলে এই নাচ দেখায়। অথবা জোড় অবস্থায় সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

দঃফিৎ রিকা (পাখি তাড়ানো) ঝুমখেতের ফসল পাকলে শত শত পাখি এসে ফসল নষ্ট করে। একা পাখি তাড়াতে তাড়াতে পাখি তাড়ুয়া ক্লান্ত হয়ে সাহায্যের আশায় তার বোনকে গান গেয়ে ডাকে পাখি না তাড়ালে সব ধান খেয়ে ফেলবে, বোন তাড়াতাড়ি এসো। বিরাট পাখির ঝাঁক, একা তাড়ানো যাচ্ছে না,

সবাই মিলে হাত তালি দিলে পাখি ভয়ে উড়ে পালাবে। ক্ষেতের কিনার দিয়ে এসো, আসার আগে আগুন জ্বালিয়ে রেখে আসবে, কেমন? আর মাঝে মাঝে ওয়াগাপে” টান দিতে থাক। নাচের জন্য চারজন ছেলে ও চারজন মেয়ে অথবা জোড় অবস্থায় সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

পাখি তাড়ানোর গান

রা, রা, ননো রা

দঃফিৎ রিককে দংবর,

অংজাওদে মিগিমিক খো

বাংসান ছাঃ এ গালগেনরা

রা, রা, ননো রা, হাই!

আঃসাম মাললে রিবাব

ওয়াল স্লামে দনবাব

দংত্র দংত্র ওয়াকাপ কাপখো

সালথিক থিককে দংবরা

রা, রা, ননো রা, হাই!

মিঃ গারু দেনঃনাঃ (মিঃ গারু সংগ্রহ)

মিঃ গারু এক প্রকার পাহাড়ি ফসল। এই গাছ সাত-আট হাত লম্বা হয়ে থাকে। মিঃ থারুর দানা থেকে খই, নাডু, ইত্যাদি তৈরি হয়। একদল মেয়ে গাছ ও অন্য দল কাঠুরে হয়।

দঃদি মিসাআ (ময়ূর নাচ)

এই নাচে মেয়েরা দুই সারিতে দাঁড়ায়। দুই সারির শেষ প্রান্তের মাঝখানে একজন মেয়ে থাকে, সে ময়ূর। বাদ্যের তালে তালে সকলে নাচে । ময়ূরটিও নাচতে নাচতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সে সারির প্রথম দুই মেয়ের মাঝখানে এসে উপস্থিত হলে মুদ্রার সাহায্যে ময়ূরের ভঙ্গি করে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পাশের দুই মেয়ে তাদের দুই হাত উপরে ছড়িয়ে ধরে তার পেখম বানায় । বাকি মেয়েরা অর্ধবৃত্ত আকারে নেচে আবার পূর্বের সারিতে ফিরে আসে। ময়ূরটি এখন এক সারির সামনে দাঁড়ায়, ওই সারির সর্বশেষ মেয়েটি তখন ময়ূর হয়। এভাবে পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে।

ছাম্বিল মিসাআঃ (ছাম্বিল নাচ)

ছাম্বিল এক ধরনের বন্য ফল। সেই ফল এই নাচের উদ্দেশ্যে তৈরি দড়ির ছোট জালি ব্যাগে ভরে নর্তকের গামছা বাঁধা কোমরে লেজের মতো বেঁধে দেওয়া হয়। নর্তক তালে তালে দেহটাকে এমনভাবে নাড়ায়, যাতে ছাম্বিল তার পেছনে বৃত্তের আকারে ঘুরতে থাকে। এই অবস্থায় সে মাটি থেকে ছাম্বিল তুলে, হাতে কিছু নিয়ে ওপরের দিকে ছোড়াছুড়ি করে, মিঃল্লাম ও স্কি নিয়ে গৃক্কাঃ করে এবং “. ফং এ * ছু-বিছি’ নিয়ে উপস্থিত লোকজনকে মদ খাওয়ায় ।

* ঝুম খেতের ফসল পাখি এবং অন্যান্য বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য পাহাড়ি লোকেরা চেরা বাঁশের সাহায্যে শব্দ করে তাদের ভয় দেখায়। এই বাঁশকে ওয়াখাপ বলে। মদ খাওয়ার পাত্র, এক ধরনের পাহাড়ি লম্বা গলাবিশিষ্ট লাউয়ের খোলস ।

ছম্বিল মিসাআর গান

আই আও ছাম্বিল মিসাআ

জগপ জঅপ দাককে উল উল দাউল,

বামগপে বামপপে উল উল দাউল দাককে

ছাম্বিল বিথিখোবা খললেংআ (আইও) ২

জাককো মিত্তাম খাললে গোদএ গোদএ

খ্রিঃসাংওবা রংসা খা তমা

থামবিং থামবিং দাককে নিনা নিথোরিরি

দোঃদি বিনজি দাককে রোএংআ (আইও) ২

দাদিমিতা দিমমি‍ দাৎ, ছাম্বিল রংসা খললি খাৎ,

দামাখোবা দাদি ছাংএ রনঃ এং আ

আঃংখি রোআও বা জপে জপারি গৃককে

দংএ দংএ মিঃল্লামহি সাত্তেংআ (আইও) ২

জাককো খাকসি দিঃছাত্র ছু বিছিখো রাঃচাএ

দারাংনান ছুখোবা গাননে খাননে রোএংআ

Major A. Poayfair তার The garos পুস্তকের ৫৬ পৃষ্ঠার ছম্বিল মিসাআ সম্বন্ধে লিখেছেন : Another dance is chamble-mesaa (the pumelo dance) in which men only take para. Apumelo is tied up in the end of a piece of cloth, which is fastened round a mans waist, and allowed to hang down behind like a tail about 2 ft long.

Where beginning to dance, the man gives an imputes to the weighed cloth, so, that it swings round in a circle behind him, and if he be an expert, he can keep it swinging thus by the motion of his body alone, as he keeps time with the music.

I have seen the dance performed with two pumcloes, one suspended behind as above described, & the other hanging down in front from the dancers forehead. He keeps the two cloths swinging round & round a high rate of speed without apparent effort, though he had some difficulty in starting them to swing in unison.

দঃক্রু সু আঃ (ঘুঘুর নাচ) এই নৃতে একজন দঃখু রানী মাঝখানে থাকে। তার চারপাশে গোল হয়ে অন্যান্য

১. দং (তার্থাৎ মেয়েরা দামার তালে তালে নাচে। এই মেয়েদের চারপাশে পুরুষেরা বেশ দূরত্ব রেখে গোল হয়ে নাচতে নাচতে

২. দামা বাজায়।

দঃখু সু সার গান

হাই সারি রিঃনামা

মি ‘মিত্তিম’ চাল দ্বারা তৈরি উত্তর মদ।

দঃখু সুত্র রেনামা,

ফাংঃসি রো রো জাজং নামমা

নকমা ওয়ানগাল্লেং আনা

জাঃগিৎ থিংগিৎ দাককেহা

আইও জাঃখি রপপেহা,

গাকগু গারুদাক মিথো রি রি

হাই সারি রোবনে৷

বিলদিং বিলদিং দাকনাবে বিদিংঅনি জিনাবে,

রনদো রনদো জাঃরিক কেহা

হাই সারি রোবনো

দামা দঃদি থিংছাংএ

আইও খিন্না থোস্রাংএ ।

নামমে নামমে দংএ দংএ

দাদি ছাংএ রনবনো

নাকমার বাড়িতে ওয়ানগালা হচ্ছে। এমন ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় এসো সখি আমরা নাচি। হাত-পা, মাথা ও সর্বাঙ্গে তাল দিয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে নাচবে। শৃঙ্খলার সাথে অগ্রবর্তীকে অনুসরণ কর। নৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে সুমধুর তালে দামা বাজাও।
Major A. Playfair আবার তার The garos পুস্তকের ৫৫ পৃষ্ঠায় বলেছেন,

The dokru sua is a dance in which only two women take part, It is supposed to represent two doves picking one another, and each woman takes the part of a dove. The women stand facing each other with one hand on the hip, and the elbow to the rear, to represent the birds tail,

while the other hand is raised to the forehead, with the first finger bent a little and pointing forwards to represent the beak of the bird. the dancing consists of moving to and fro in time with the music, alternately changing the positions of the hands, and going through the pantomime of two birds picking at each other.

ছামে মিকখাং নিআঃ (প্রিয়ার মুখ দর্শন) ওয়ানগাল্লা অনুষ্ঠানে যুবক-যুবতীরা নিজেদের সঙ্গী নির্বাচনের সুযোগ লাভ করে। এখানেই তাদের মন দেওয়া-নেওয়া হয়। আজিয়া রে রে গ্যালো ইত্যাদি গানের মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের কথা অপরের কাছে ব্যক্ত করে। মেয়েরা লাইন বেঁধে বাদ্যের তালে তালে নাচতে থাকে। ছেলেরা নিচ জোড়ার কাছে গিয়ে একবার ডান আর একবার বাঁয়ে মাথা নাড়িয়ে মেয়েটির মুখ দেখে। এই সময়ে মেয়েটিও ছেলেটির বিপরীত দিকে মাথা নাড়ায়।

১. আবেং গোষ্ঠীর প্রচলিত মুখে মুখে রচিত গানের নাম।

২. ব্রাক ও দুয়াল গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত মুখে মুখে রচিত গানের নাম।

৩. আত্তং গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত মুখে মুখে রচিত গানের নাম।

কি কি (লেমিকের সঙ্গে পলায়ন) মেয়ে মাঝখানে বেশ দূরত্ব রেখে পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়ায়। দুজন পুরুষ দুদলের মাঝখানে অবস্থান নেয়। একজন দামা বাজাতে বাজাতে তার বিপরীত দলের মেয়েদের কাছে দিয়ে একজনকে পছন্দপূর্বক মূকাভিনয় দ্বারা প্রেম নিবেদন করে। মেয়েটি সম্মতিসূচক মাথা বাড়লে সে তাকে অনুসরণের ইঙ্গিত করবে।

মেয়েটি তাকে অনুসরণ করলে মেয়েটির দলনেতা দামা বাজাতে বাজাতে প্রথম পুরুষটির পথ রোধ করতে চেষ্টা করবে। অসমর্থ হলে প্রথম পুরুষ মেয়েটিকে নিয়ে তার দলের মেয়েদের কাছে রেখে আসবে।প্রতিশোধস্বরূপ দ্বিতীয় দলের নেতা প্রথম দলের নেতার বাধাদান উপেক্ষা করে প্রথম দলের মেয়েদের কাছে গিয়ে পূর্বোক্ত উপায়ে প্রেম নিবেদন করবে। মেয়েটি হাস্যপূর্বক মাথা হেলিয়ো সম্মতি প্রদান করলে তাকে নিয়ে নিজ দলে রেখে আসবে।

এভাবে প্রত্যেকে বিপরীত দলের মেয়োদের নিজ দলে আনবে। প্রথম দলের শেষ মেয়েটিকে যখন আনতে যাবে, তখন ওই দলের সব মেয়ে দলনেতার সঙ্গে দ্বিতীয় দলের নেতাকে নানা উপায়ে বাধা প্রদান করবে।শেষে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে। ওই লোকনৃতাগুলো কেবল আনন্দ দান এবং লাভের নিমিত্তে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।

Robins Burling তার Rengsanggri পুস্তকের ৬৬ পৃষ্ঠায় ওয়ানগালার নৃত্য সম্বন্ধে বলেছেন: Wangala is one of the three festivals at which group dancing takes place, this occurs in the courtyards in front of the houses, where people like to keep a sizable cleared space for this very purpose. Both married & unmarried people take part,

though dancing is generally felt to be most appropriate for the young, especially those who are unmarried group dancing is almost exclusively a night pastime. & may continue intermittently until down.

The dance figures are stylized partomimes of everyday activities. In one girl’s pretend to cut off their heads, letting them flop to on side in imitation of cuting down a tree. In another, a girl dances with one boy & then moves to a second in a way suggfesting that the has been stolen away by a new lover, & in fact, such boy & girl teasing is in element expressed in many of the dances.

Groups of girls always dance more or less apposed to groups of boys. Though they pair off now & then temporarily & there need not even be equal numbers of the two sexes dancing. Each boy carries a drum suspended from a cord around his neck, & maintains a seady & sometimes intricate rhythm while every one executes the various steps & patterns, Though the boys & girls approach one another repeatedly,

they never quite come into physical contact, apparently easing each other by coming as close as possible without touching. Some people are recognised as being more skilled than others at dancing & not all are equally enthusiastic. People drop out when tired & rejoin when they wish to,

for no specific number is ever required. Rice beer drunk in copious quantities frees the dancers of some If their shyness, & allows them to continue their strenous sport for many hours. The boys & girls associate for more freely then on ardinary working days, & the closest public intimacies ever indulged in come during the breaks between dances when they sit together & pass around rice beer, betel nuts & tobacco.

The talk, joke, engege in a mild sort of horseplay & have a certain superficial physical contact with members of the oppssite sex which would be out of the question at other times.

পাৱা অনুষ্ঠান কোনো লোক গ্রামের নুতন নকমা হলে প্রতিবেশী গ্রামের লোকজনকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে উৎসবের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠান নববস্ত্র ও পাগড়িতে সজ্জিত নকমাকে তার কুনুইয়ের ওপরে জাকসিল নামক একটি গহনা পরানো হয়, যা তার মর্যাদার প্রতীক।

আনুষ্ঠানিকতার পর প্রথমে খামাল অর্থাৎ পুরোহিত নাচ আরম্ভ করে। তারপর যথাক্রমে নব নিযুক্ত নকমা স্কি ও মিল্লাম নিয়ে এবং নকমার স্ত্রী বা হাতে একটি জ্বলন্ত ধূপদানি হাতে নাচতে নাচতে তাকে অনুসরণ করে। তাদের পেছনে অন্য গ্রাম থেকে আগত অন্য নকমারাও নাচে। কোনো গ্রামের নকমা ব্যতীত অন্য কারো এই নাচে অংশ গ্রহণের অধিকার নেই। সকলে নতুন নকমার বাড়ি থেকে নাচ আরম্ভ করে নকফান্থির চত্বরে যায়, সেখান থেকে আবার নকমার বাড়িতে ফিরে আসে।

নিমন্ত্রিতরা নাচ দেখে ও পরে ভুড়িভোজে আপ্যায়িত হয়। যদি নকমার একের অধিক স্ত্রী থাকে তবে প্রধান স্ত্রী তাকে অনুসরণের অধিকার লাভ করে।নকমাপ্রথা বাংলাদেশে প্রচলিত না থাকায় গান্না অনুষ্ঠান দেখা যায় না। অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এর সঙ্গে নকমার মান-সম্মানের প্রশ্ন জড়িত থাকায় অনুষ্ঠানটি সর্বাঙ্গ সুন্দর করার জন্য নকমা আপ্রাণ চেষ্টা করে। এভাবে অন্যান্য গ্রামে তার যশ, প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে।

মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান মৃত আত্মার শান্তির জন্য সব গোষ্ঠীই শ্রাদ্ধ ও নৃত্যানুষ্ঠান করে থাকে। কেউ কেউ এই অনুষ্ঠানকে মাংগোনা, সারাম অথবা দেলাং ফ্রাকা বলে অভিহিত করে। ব্রাক গোষ্ঠীর দেলাং ফাকা অনুষ্ঠান কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর সাত দিন পর তার সরণার্থে একটি দেলাং অর্থাৎ দৈর্ঘ্য আড়াই ও প্রস্থ আড়াই হাত দীর্ঘ ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করা হয়। শ্রাদ্ধ না করা পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যায় সেখানে মৃতের উদ্দেশ্যে ভাত-পানি দেওয়া কর্তব্য।

তারা মৃতের উদ্দেশ্যে দুই টুকরা বাঁশের গায়ে কাপড় পেঁচিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করে। মূর্তির মাথায় পাগড়ি বেঁধে ‘ যথাসিল এক ধরনের কপালের গহনা ও মোরগের লম্বা লেজের পালক কানে দুল, গলায় রিবক (শখের তৈরি মালা)

 

গারো উপজাতির নৃত্য বিভা সাংমা

 

১. গ্রামের সব যুবক যে গৃহে রাতযাপন করে। ইত্যাদি পরানো হয়। দেলাং ফ্রাকার দিন একজন মেয়ে সেটা কাপড় দিয়ে পিঠে বাঁধে অথবা ° রাংএ কাসার তৈরি এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র বসিয়ে কোলে নেয়। একজন বলবান পুরুষ বর্ষা হাতে, ১০-১২ জন মেয়ে এবং সর্ব শেষে ছাতা হাতে নিয়ে একজন পুরুষ বাদ্যের তালে তালে নাচতে থাকে। তারা প্রথমে মৃতের বাড়ির উঠানে ও পরে মৃতের আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচে। সেখানে মৃতের উদ্দেশ্যে মদ, ডিম, কলা, পিঠা ইত্যাদি দেওয়া হয়।

এরপর সকলে বাড়িতে ফিরে আসে, বাড়ির উঠানে আবার নাচে এবং শেষে দেলাংএ যায়। সেখানে পূর্বেই মৃতের নিকট-আত্মীয়দের মৃতের উদ্দেশ্যে আনীত শূকর দেলাং-এর চারি কোণায় বেঁধে রাখা হয়। বর্শা হাতে লোকটি নাচতে নাচতে সেই শূকরগুলো নিধন করে। গারোদের নাচ সম্বন্ধে মেজর, এ প্লেফেয়ার বলেন,

The Matchi & Awe women generally dance with their arms wide apart, in line with the shoulders, but the Abergs keep their arms close to the body, bent at the elbow the forearm to the front and at right angles to the body, & the fingers clenched. The closed fists are then brought up in turn to the shoulder and again lowered to the first position, the movements being executed in time with the music.

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নৃত্য বিভিন্ন পূজার অনুষ্ঠানের পর নৃত্যগীত প্রচলিত। দেবদেবীর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নানা উপাচারসহ নৃত্যগীত অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে । গারো উপজাতিন্ন ধর্ম ও সমাজজীবনের সঙ্গে নৃত্যগীত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু বর্তমান সভ্যতার প্রভাব ও নিজ সংস্কৃতির প্রতি গারোদের উদাসীনতার দরুন এসব নৃত্যগীত আজ বিলুপ্তির পথে।

গ্রন্থসূত্র

1. Major A playfair the garos.

2. Robbins Burling, Rengsanggri.

3. Dewansing Rongmuthu, the Tolk Tales of the gares

৪. জন খুসিন, ইদিলপুর, টাঙ্গাইল।

৫. যতীন্দ্র রুরামত, সংগীত শিক্ষক, উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি ।

৬. কালু রিছিল, ভবানীপুর, বিরিশিরি।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment