কথাকলি নৃত্য নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা এই সিরিজে “ভারতীয় নৃত্যের ইতিহাস এবং বিভিন্ন ভারতীয় নৃত্য” নিয়ে আলোচনা করছি। দক্ষিণ ভারতের কেরলের নাচ কথাকলি। এই নৃত্যের বিষয়বস্তু রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী এবং সাধারণতঃ এই নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠিত হয় মন্দির প্রাঙ্গণে অথবা মক্তোঙ্গনে। আমাদের দেশের যাতান,ষ্ঠানের মতই মণ্ডপের বিশেষ একটি স্থানে নৃত্যানণ্ঠান হয় এবং দর্শকরা এর চারদিকে বসে থাকেন। রাত্রি ৮টার পর এই নত্যান,ঠান পর্বের সূচনা হয় এবং অরণোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যবনিকা পতন হয়।
এই নৃত্যের দুই প্রকার পদম, গীত হয় : শৃঙ্গার পদম, ও মগাঁর পদম। প্রথম ট মধালয়ে এবং দ্বিতীয়টি দু‚তলয়ে গীত হয়।
Table of Contents
কথাকলি নৃত্যের পদাভিনয়:
এর পদাভিনয় নিম্নলিখিত তিনটি ভাগে বিভক্ত :
এলাকিয়াট্রম :
এলাকিয়াট্টম অংশ ঘন বাদ্যের সহযোগিতায় গীতবিমত্ত নৃত্য পরিবেশিত হয়।
চুল্লিয়াটুম :
এই অংশে গীতসহ নৃত্য প্রদর্শিত হয়।
কুডিরাটুম :
পদমের কথোপকথন বিষয়টি এই অংশে পরিবেশিত হয়।
বাদ্য যন্ত্রাদি:
বাদ্য যন্ত্রাদির মধ্যে ব্যবহৃত হয় নাগণরম, মাদল, চাণ্ডা, ঘণ্টা করতাল, ইত্যাদি।
‘সাত্বিক, রাজসিক, তামসিক তিনটি বিশেষণে কথাকলির তিনটি ধারাকে চিহ্নিত করা যায়। নাচের প্রসাধন অত্যন্ত জটিল-সাবিক চরিত্রের জন্য সবুজে রঙের ‘আড্ড’, রাজসিকের জন্য ‘বটি’ বা লাল, ঋষি ও নারীদের জন্য ‘মিনকে’ (ভারত কাষ)। কথাকলি ননৃত্যে গায়ক থাকেন দুইজন। মলে গায়ককে বলা হয় ‘পন্যানি’ এবং তার সহযোগীকে বলা হয় ‘সাংগর’। নংহৃত ও অসংযত নানাবিধ মদ্রার আধিক্যে কথাকলি ভারাতুর। কথাকলি নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে শঙ্করণ না বদ্রী কুঞ্জ, পানির নলন উন্নি, রাবনি মেনন, কুষ্ণকৃষ্ণ কুরূপে ইত্যাদি নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কথাকলি নৃত্যের রূপসজ্জা ও বেশভূষা:
রঙ্গভূষা ও বেশভুষা কথাকলি নৃত্যের বিস্ময়কর সংযোজন। বিচিত্র রঙের বাহারে এর বৈচিত্র্যাময় রূপসজ্জা দর্শকদের উজ্জবিত করে তোলে। কথাকলির উপযুক্ত তিনটি ভাবকে (সাবিক, রাজসিক ও তামসিক) কেন্দ্র করেই এর রূপেসজ্জা ও বেশভুষার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রূপসজ্জাকে চরিঠান; যায়ী পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছ, যেমনঃ পাচ্চা, কাত্তি, তাড়ি, কারি, ও মিনকে বা মিনক।
পাচ্চা :
এর চরিত্রগগুলি সার্বিক ভাবাপন্ন, যেমন শ্রীকৃষ্ণ র মচন্দ্র, অর্জন, ই ইত্যাদি এবং এই চরিত্রগুলির মলে রং হচ্ছে গাঢ় সবুজে। তবে অধর, চোখ ও হ আঁকা হয় লাল এবং কালো রঙের সাহায্যে। মাথে সবজ, কপালে চাপা রঙের তিলক এবং চোয়াল বরাবর থাকে সাদা চুট্টি।
কাত্তিঃ
এর চরিত্রগুলি হয় রাজসিক, যেমন: রাবণ, কংস, শিশপাল, কাঁচক দুর্যোধন ইত্যাদি। এই চরিত্রগগুলির রূপোয়ণে মুখে সাদা বর্ডারসহ সবুজ ও লাল রং দেওয়া হয়। চরিত্রগুলির উগ্রতা, হিংস্রতা বা বীররস প্রকাশের জন্য চুট্টিনতা অর্থাৎ চুট্টিনধা অর্থাৎ কপোলমণ্ডলে লাল সরু, কাপড় বেধে উপরে সাদা রং, টিটুপতে্যু অর্থাৎ ভ্রুর উপরিভাগে লাল ও সাদা রেখা, নাসিকায় একই রঙের কলংকা এবং নাসিকা এবং কপালে দটি শোলার বল ইত্যাদি প্রসাধন ব্যবহার করা হয়।
তাড়ি :
রৌদ্র, ভয়ানক এবং বীভৎস রসপ্রকাশকারী চরিত্র এর অন্তর্ভুক্ত, যেমন, কিরাত, হন,মান, দুঃশাসন, বকাসুর প্রভৃতি। তাড়ির রংগসজ্জায় সাদা, কালো এবং লাল রঙ ব্যবহৃত হয় যেমন বাঁর রস’ হাস্য রস প্রকাশের জন্য সাদা তাড়ি, বীভৎস রসের জন্য কালো তাড়ি এবং রৌদ্র রসের জন্য লাল তাড়ি ব্যবহৃত হয়। মমণ্ডলের উপরিভাগ কালো, নিম্নাংশ লাল এবং অধর সাদা রঙে রঞ্জিত করা হয়।
কারি :
রৌদ্র এবং বীভৎস রসপ্রধান চরিত্রগুলি এর অন্তর্গত, যেমন, তাড়কা, পড়েনা, শপে’নখা প্রভৃতি এবং এই চরিত্রগুলির রূপসজ্জায় কালো রঙ ব্যবহৃত হয়।
মিনিক্কু :
শঙ্গার ও শান্ত রসের চরিত্রগুলি এর অন্তর্গত, যেমন, মনি, ঋষি, সতীনারী ইত্যাদি এবং এর রংপসজ্জার হলদে এবং লাল রঙের প্রাধান্য থাকে। তবে এখানে রঙের ব্যবহার অনেক সংযত অর্থাৎ ঔজ্জ্বল্য একেবারেই পরিহার করা হয়।
নানা রঙের ব্যবহার ছাড়াও চরিত্রান,বারী নানা ধরণের বিভিন্ন পোশাক কথাকলিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন, কুপ্লয়াম (উদ্ধৃংিগের জমা), উরতেকেট্টা (বাঘরা ), কিটিম (মস্তক ভরণ), পাড়িএরজানম (কোমরের সোনালী ঝালর ), তাণ্ডবপদম (গে ডু লির লাল দড়ি), তোলপটে ( হাতের কাণ্ঠনিমি’ত গহনা), উরমন (উড়নি), চেতিপরে, (কর্ণভিরণ ), চু টতুন (কপে লম্ব লাল কাপ জ্বর বন্ধনী), পাটুর লা ( ঘাঘরার উভয়দিকস্থ ঝোলান কাপড়ের ফালি), মণ্ডি (ঘ্যঘরার সথস্থ রূপালী কাঁচা) ইত্য দি। কথাকলি নাতো ঘরকে বলা হয় ‘গোচামণি’।
আরও দেখুন: