আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – উপ জাতীয় কৃষ্টি।যা “যুগ যুগব্যাপী নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
উপ জাতীয় কৃষ্টি
নতুন প্রস্তর যুগ এবং প্রাচীন উপজাতীয় কৃষ্টি টোটেমবিশ্বাসী ব্লেড কৃষ্টি : এই কৃষ্টির মুখ্য বিষয় অর্জনশীল অর্থনীতি, গোলকুঁড়েঘর, গুচ্ছবদ্ধ গ্রাম, ছোড়া ও বর্শা, পিতৃপ্রধান, সুন্নত, সূর্য পৌরাণিক কাহিনী বা (মাইথোলজী) যাদুবিদ্যা এবং লাল গিরিমাটির ব্যবহার জ্ঞান। এই কৃষ্টির স্তরে লোকজনের হস্তশিল্প অদ্ভুত পরিতৃপ্তিতে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তারা প্রকৃতির অবিকল প্রতিরূপ (চিত্র) প্রতিনিধিত্ব করে বিশেষ করে জীবজন্তুর ক্ষেত্রে। তাদের যা অলংকরণ আছে তার অধিকাংশ ঋজু রেখার ।
বুদ্ধিদীপ্ত ঝোঁক এই সমস্ত বাহ্যিক রূপকে সুস্পষ্ট করে এবং নাচকেও তা লক্ষ্য করে। মধ্য অস্ট্রেলিয়ার অরুনটাগণ খাঁটি টোটেম বিশ্বাসীদের মত নাচুয়ে ও বাইরে বাইরে সম্পূর্ণ অনুকরণশীল। থিমগুলি কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে জীবজন্তুর থেকে নেয়া এবং প্রকৃতিগতভাবে নকল করা। নাচের গঠনপ্রকৃতি পূর্বের মত সহজ গোল। এই সকল পিতৃতান্ত্রিক কৃষ্টির পৌরুষময় প্রবণতা অনুসরণে প্রায় শুধুমাত্র পুরুষগণ ঘনঘন নাচে নারীগণ বাহিরে শুধু দর্শক হিসাবে থাকে।
এমনকি মুখোশেরও প্রধান উৎস টোটেমবিশ্বাসী ব্লেড কৃষ্টিতে রয়েগেছে। প্রস্তর চিত্রের ডজন ডজন আকৃতিতে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশুর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় শুধুমাত্র জীবজন্তুর মাথা, সেখানে অনেক সময় মানুষকে শুধুমাত্র পায়ের পাতা দিয়ে চেনা যায়।
তাদের দুশ্চিন্তার মধ্যেও তাদের “ক্ষেত্র” থেকে অল্পকিছু সেতু বন্ধন আগন্তুক হিসাবে দেয়া সম্ভব, কিছু প্রাক্-ইতিহাসতত্ত্ববিদ এইসকল আকৃতিকে “মুখোশ” হিসাবে তরজমা করতে অনেকাংশে ও আংশিকরূপে খুবই বোকামীপূর্ণ প্রতিবাদ তুলে ধরেন।
উদাহরণ স্বরূপ তাঁরা উপদেশ রাখেন যে, প্রাচীন প্রস্তর যুগের শিল্পীগণ জীবজন্তুর অঙ্কনে এতবেশী অভ্যস্ত যে, তারা অনভিপ্রেত ভাবে মানুষের মাথার পরিবর্তে জীবজন্তুর মাথা লাগায়ে দিয়েছে! নতুন প্রস্তর যুগ থেকে “লি মাস্ ডি’আজিল গুহার বক্রজানু মুখোশের মধ্যে তাঁরা “গর্ভস্থ সন্তান” দর্শনের মনস্কামনা করেন!
আজকে সন্দেহের কোন অবকাশই নাই যে, এই সকল ব্যাপারে আমাদের মুখোশ নাচুয়ে ছিল। এমনকি যেটা অনুমান করা হয় সেটাও না, যা তারা প্রতিনিধিত্ব করে সেটা হল এক রকম শিকারের ছদ্মবেশে. অলক্ষ্যে সতর্কতার সঙ্গে নিকটবর্তী হবার খেলায় সন্তুষ্টির জন্য ঃ
ছবিতে দেখা যায় পুংলিঙ্গ খাড়া হয়ে আছে এবং তাতে অনুসরণকারী মহিলা জীবজন্তু বাস্তব সম্মত ভাবে উপস্থিত এই ব্যাখ্যা সেটা বাধাগ্রস্থ করে। এখানে আছে পরবর্তীতে পরিপক্ক মুখোশ-নাচ, যার লক্ষ্যই হল উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির যাদুমন্ত্র ।
পাপুয়াদের পরিশীলিত ও অপূর্ব ধরনের মুখোশ নাচুয়ে এদের মধ্যে পাওয়া সত্যই ব্যর্থ প্রচেষ্টা। সম্ভবতঃ তারা সবটাতে আসল জীবজন্তুর চামড়া পরিধান করে যেটা মাথা অথবা শরীরের বেশীর ভাগ অংশ আবৃত রাখে। বপনকারী লোকজনের পূর্ব-পুরুষ পূজা এবং অন্তর্মুখী ও বর্হিমুখী সফল মিশ্রণ মুখোশ নাচকে প্রথম ব্যপ্তি ও গভীরতা দিয়েছে এবং মুখোশ নিজেই কৌতূহলী বিমূর্ততাময় ও হাস্যোদ্দীপক (প্লেট-১)।

প্রাচীন বপনকারী কাপ-ডি-পোইং কৃষ্টি : এখানে বৈশিষ্ট্যময় মুখ্যবিষয় রোপণ কৃষি কাজ, আয়তাকার কুঁড়েঘর, সারিবদ্ধ গ্রাম, কুঠার ও লাঠি, মাতৃপ্রধান, চাঁদের পৌরাণিক কাহিনী, পূর্ব-পুরুষ পূজা, ফকিরতন্ত্র ও দুই পর্বে গোর দেয়া। প্রাচীন রোপণকারীদের আর্ট প্রাথমিকভাবে নির্দেশিত হয়েছে অলঙ্করণের দিকে।
প্রকৃতি বা বস্তুজগতের প্রতিফলনের অভাব আছে এবং অলঙ্করণ নিজেই বিমূর্ত ও জ্যামিতিক এবং পাকানো ও ব্যাকানোর দিকে অদ্ভুত ঝোঁক বিশেষ করে বিন্দু থেকে বৃত্তাকার করা ।
রোপণ কৃষিকাজ ও মাতৃপ্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যেও নাচে অসম সংমিশ্রণ আসে। গোল থেকে আয়তকার কুঁড়েঘরের ভূমির নকশা পরিবর্তিত হয় এবং বসতিস্থাপনে অস্থায়ী গুচ্ছ গ্রাম গঠন থেকে নির্দিষ্টি গ্রামের পরিকল্পনা ব্যতিক্রমী বুদ্ধিমত্ততা প্রয়োগের ফলশ্রুতি যার সমরূপ প্রভাব নাচেও পড়ে।
তাছাড়াও গোল থেকে আমরা প্রথমবারের মত নাচুয়েদের একসারি গঠন করতে এমনকি দুইসারিতে মুখোমুখি হতে দেখি। বৃত্তাকার গোলকের প্রতি আকর্ষণ সুসজ্জিত মূল শিল্পউপাদানের মত নাচেও প্রতিফলিত দুই ও তিন গোলকের মধ্যে।
দলবদ্ধ নাচের সর্পিল দেহভঙ্গির মধ্যে অলঙ্করণের পরিতৃপ্ত আঁকাবাঁকা রেখা ও সর্পিল বক্রতার প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। এই পয়েন্টের উপর ধারাবাহিক পরবর্তী পয়েন্ট যা পরবর্তী বিভাগ “পরবর্তী রোপণকারী মসৃণ কুঠার কৃষ্টি” তে আছে, এই নাচে ও অলঙ্করণের মধ্যে সুবিন্যস্ত সম্পর্ক বিবেচনা করতেও এটা পাঠকদের পরামর্শ করতে ভাল হবে (পাতা-৮৬)।
শুধুমাত্র স্বয়ংক্রিয় স্বতঃস্ফূর্ততার পরিবর্তন হয়েছে। পিগমিদের ও টোটেম বিশ্বাসীদের নাচের বৈপরীত্যে- অর্থাৎ সত্যিকার শিকারীর নাচের বৈপরীত্যে- রোপণকারী কৃষ্টির নাচ সম্পূর্ণরূপে অপ্রাকৃতিক শক্তি থেকে জন্মলাভ করেছ। পর্যবেক্ষণ না কিন্তু গভীর ধ্যান এটার লক্ষ্য তৈরী করে।
বাস্তবতা না কিন্তু স্বপ্ন ও মহানন্দ এটার আকৃতি দেয়। রোপণকারীদের নাচ চিত্রসুলভ না হলেও অন্তর্মুখী। মূল শিল্পউপাদান ও ধরন যদিও প্রধানতঃ নির্দিষ্ট হয় উর্বরতার অন্বেষায় বিশেষ করে বৃষ্টির জন্য, সূচনার প্রারম্ভের দ্বারা, ফকিরতন্ত্র, চাঁদের পৌরাণিক কাহিনী এবং পূর্ব-পুরুষ পূজায়।
ফকিরতান্ত্রিকতার বাইরে গভীর হর্ষোল্লাসপূর্ণ নাচ আসে, যাকে আমরা “দেহের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া” বা সমন্বয়হীন দেহের নাচ বলি। খেঁচুনিযুক্ত নাচের প্রধান লক্ষ্য রোগ নিরাময়। আগুনের মধ্য দিয়ে নাচও মনে হয় ফকিরতান্ত্রিক। চাঁদের পৌরাণিক কাহিনী প্রচলন করে সংঘবদ্ধ নাচের যে মূল শিল্পউপাদান তাহল উদয়ন ও অস্তগামীতা, স্বচ্ছন্দে বিচরণ, বর্দ্ধিষ্ণু ও ক্ষয়িষ্ণুতা এবং আলো- আঁধারের সংগ্রাম। পূর্ব-পুরুষ পূজা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নাচের মধ্য দিয়ে আসে এবং মুখোশকে পরিপক্কতা ও অর্থবোধক করে দেয় ।
প্রাচীন পশুপালক হাড় কৃষ্টির বৈশিষ্ট্য পশুপালন, মোচাকৃতি তাঁবু ধনুক, বর্শা অস্ত্ররূপে, এক বিবাহ, পিতৃ-প্রধান, একেশ্বরবাদী, মাটিতে গোর দেয়, আর্টে প্রকৃতিপ্রবণ। “ফিনিশ পন্ডিতদের তাদের জনগণের কৃষ্টির ইতিহাস তৈরীর বিরাট কর্মকান্ডের মধ্যেও আমরা প্রাচীন পশুপালন কৃষ্টির অবিমিশ্র অবস্থার কোন পরিস্কার চিত্র পাই না” বলেন মেন্হিন। সুতরাং এই হেড লাইনে আমরা নাচের ইতিহাস পূর্ণ করতে চেষ্টা করব না ।
আরও দেখুনঃ